কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফে ফুটবলারদের চোটের আশঙ্কা অনেক বেশি। এ দাবি করে আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া ফেডারেশন কাপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র।
চোটের শঙ্কা নিয়েই কমলাপুর স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা কাপে অংশ নিয়েছিল দলগুলো। আর ওই টুর্নামেন্টে কিংস হারায় তাদের তিন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে। চোটে পড়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন দলটির ডিফেন্ডার তপু বর্মণ, তারিক কাজী ও ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ।
আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া ফেডারেশন কাপেরও সব কটি ম্যাচ কমলাপুর স্টেডিয়ামে। সে কারণে টুর্নামেন্টটিতে খেলবে বলে না বলে বাফুফেকে আজ চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।
বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে দুটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, ক্লাবগুলোর কাছে আগেই পাঠানো খসড়া ম্যাচ সূচি পরিবর্তন করা ঠিক হয়নি। খসড়া সূচিতে ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ‘এ’ গ্রুপের সঙ্গে ‘সি’ গ্রুপের খেলা। বাফুফে হঠাৎ সেটা বদলে করেছে ‘এ’ বনাম ‘বি’ এবং ‘সি’ বনাম ‘ডি’।
গ্রুপ এ: বসুন্ধরা কিংস, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ
গ্রুপ বি: আবাহনী লিমিটেড, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, উত্তরা বারিধারা
গ্রুপ সি: সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী, বাংলাদেশ পুলিশ
গ্রুপ ডি: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র
সূচির আগেই বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র কমলাপুরে ঝুঁকিপূর্ণ টার্ফে খেলা না আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছিল বাফুফেকে। কিন্তু বাফুফে সেটা আমলে নেয়নি।
বরং গতকাল ফেডারেশন কাপের ড্র অনুষ্ঠানে কমলাপুরে খেলা আয়োজনের ব্যাপারে বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী যুক্তি দেন, ‘কমলাপুরে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাত্রই শেষ হয়েছে। সেই টুর্নামেন্টে তো কোনো সমস্যা হয়নি।’
চোটের ব্যাপারে খেলোয়াড়দের ফিটনেসকে দায়ী করে সালাম বলেন, ‘একজন ফুটবলার ফিট থাকলে কর্দমাক্ত মাঠ, বরফ—সব জায়গায় খেলতে পারার কথা।’
মজার ব্যাপার, এবারের ফেডারেশন কাপের পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা গ্রুপ এবং কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ফেডারেশনের সহসভাপতি। ফলে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের ক্লাব টুর্নামেন্টে খেললে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছিল কাল সংবাদ সম্মেলনে। লিগ কমিটির প্রধান সালাম মুর্শেদী সেই দ্বন্দ্বের তত্ত্ব অবশ্য উড়িয়ে দেন।
ওদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২১ তারিখ চিঠিতে আমরা বাফুফেকে বলেছি, ঘাসের মাঠ না হলে আমরা ফেডারেশন কাপ খেলব না। যেহেতু ঘাসের মাঠ দেয়নি বাফুফে, তাই ফেডারেশন কাপে আমরা খেলছি না।’
টার্ফে স্বাধীনতা কাপ খেলে মুক্তিযোদ্ধার গোলকিপার রাজীবের হাতে গুরুতর চোট লেগেছে। তাদের কয়েকজন খেলোয়াড়ের মাংসপেশিতে টান পড়েছে। খেলোয়াড়েরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয়ার্ধে এই মাঠে আর স্বাভাবিক ফুটবল খেলা যায় না। বুটের স্পাইক আটকে যায় এবং খেলোয়াড়েরা পড়ে গিয়ে চোট পান বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মুক্তিযোদ্ধার ম্যানেজার বলেন, ‘স্বাধীনতা কাপে আমরা খেলেছি স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে। কিন্তু ঢাকার কাছাকাছি কোনো ঘাসের মাঠে ফেডারেশন কাপ আয়োজন করতে পারত বাফুফে। কিন্তু তারা সেটা করছে না। উল্টো বলছে, কমলাপুরে মেয়েদের সাফ হয়েছে। এটা তো কথা হলো না। সব বিবেচনা করে আমাদের কোচ বলেছেন, এই মাঠে না খেলাই ভালো।’
বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আবু জোবায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সভাপতি বাফুফেকে চিঠি দিয়েছেন ফেডারেশন কাপে না খেলার ব্যাপারে। দেখা যাক কী হয়। আমরা এখন অনুশীলনে আছি।’
সর্বশেষ অবস্থা জানতে লিগ কমিটির প্রধান সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।