‘প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস—/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লাইনটি একটু ঘুরিয়ে বলতে পারেন সৈয়দা তামিলা সিরাজী, ‘শীতের সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করতে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন তামিলা। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে ৩–২ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেদিন দল হারলেও তামিলার মন জিতে নিয়েছিলেন জাতীয় দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা।
জাতীয় দলের ফুটবলার হিসেবে সোহেল তো কত মেয়ের হৃদয়ের মণিকোঠাতেই থাকার কথা। কিন্তু তামিলা গ্যালারি থেকে পছন্দ করাতেই থেমে থাকেননি, মাঠের বাইরে জয় করে নিয়েছেন সোহেলের মন। জয়ের গল্পের শুরুটা ফেসবুকে মেসেজ পাঠানো থেকে, তামিলার সেই আইডিকে ‘ফেক আইডি’ ভেবেছিলেন সোহেল।
ছয় বছরের প্রেম কাল পূর্ণতা পেয়েছে বিয়ের মাধ্যমে। কাল দুপুরে ধানমন্ডির এক রেস্তোরাঁয় সোহেল ও তামিলার চার হাত এক করে দিয়েছেন দুজনের পরিবার। এর আগে স্থানীয় এক মসজিদে পড়ানো হয় বিয়ে।
সোহেল জাতীয় দল ও আবাহনী লিমিটেডের মিডফিল্ডার আর তাঁর জীবনসঙ্গিনী তামিলার ভালো লাগে ফুটবল খেলা দেখতে। সেই খেলা দেখতে এসেই তো প্রেমে পড়ে যাওয়া। লেডিস ফার্স্ট, তাই দুজনের প্রেমের গল্পের শুরুটা তামিলার মুখ থেকেই শোনা হলো, ‘আমি ফুটবল খুব পছন্দ করি। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনাল খেলা দেখতে মাঠে যাই। সেদিনই আমার প্রথম স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা। ১১ জন ফুটবলারের মধ্যে সোহেলের খেলা আলাদাভাবে ভালো লেগেছিল। পরে ফেসবুকে খুঁজে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। প্রথমে বন্ধু, পরে প্রেমের সম্পর্ক। আর আজ (কাল) তো আমাদের বিয়েই হলো।’
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করা তামিলার পছন্দ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সোহেলের মধ্যে রোনালদোর কোনো ছাপ আছে বলে এখনো কোনো ফুটবলপ্রেমীর মুখ থেকে শোনা যায়নি। বরং বাঁ পায়ের ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেকে সোহেলকে ভালোবেসে ‘মেসি’ বলে ডাকতেন। তবে মেসি আর রোনালদোর মধ্যে বিশ্বসেরা কে, এ নিয়ে সারা বিশ্বে তর্ক হলেও তামিলা এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ, ‘বিদেশে আমার প্রিয় খেলোয়াড় রোনালদো। তবে খেলোয়াড় হিসেবে সোহেলই আমার কাছে বিশ্বসেরা।’
অথচ ভালোবেসে সোহেলকে যিনি বিশ্বসেরা বলছেন, সেই তামিলার ফেসবুক আইডিকে প্রথমে ‘ফেক আইডি’ ভেবেছিলেন সোহেল। নকল বা সত্যি যা-ই হোক না কেন, প্রতিদিনই তামিলার কাছ থেকে আসা বার্তাগুলো পড়তেন। একসময় মনে হলো, পরিচিত হওয়া যাক! ফেসবুকে ছয় মাসের পরিচয় শেষে ধানমন্ডির এক রেস্তোরাঁয় দেখা। প্রথম দর্শনেই ‘ফেক আইডি’র মানুষটিকে ভালো লেগে যায় সোহেলের।
সম্পর্কের শুরুর দিকের গল্প শোনাচ্ছিলেন সোহেল, ‘ও আমাকে প্রচুর মেসেজ পাঠাত। কেন যেন মনে হতো ‘ফেক আইডি!’ কিন্তু প্রচুর মেসেজ আসায় শেষ পর্যন্ত পরিচিত হই। ওর আগ্রহে ধানমন্ডির এক রেস্টুরেন্টে প্রথম দেখা করি। প্রথম দিনই আমার ভালো লেগে যায়।’
ব্যস, একটি ‘ফেসবুক’ যুগের সার্থক প্রেমের শুরু! ভালো লাগা থেকে বন্ধুত্ব, প্রেম হতে সময় লাগেনি। কাল ভালোবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে আপন করে নিয়ে সবার দোয়া চেয়েছেন সোহেল।
বিয়ে হলেও নতুন জামাই হিসেবে সিরাজগঞ্জ তামিলার গ্রামের বাড়ি বা ঢাকার মোহাম্মদপুরের শ্বশুরবাড়িতেও বেড়ানোর সুযোগ নেই সোহেলের। লিগের প্রথম পর্ব শেষে বর্তমানে ছুটি কাটাচ্ছেন সোহেল, তবে ১২ মার্চ থেকে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা।