ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে সে সময় দেশের শীর্ষ ক্লাবটি পেয়েছিল শিরোপার স্বাদ।
তিনি ছিলেন রাজনীতির ময়দানের অবিসংবাদিত ব্যক্তিত্ব। বাঙালি জাতির জনক। পথপ্রদর্শক, মুক্তিদাতা। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব পরিচয় ছাপিয়েও ছিলেন বহুমাত্রিক এক ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় লিখেছেন আত্মজীবনী। কারাগারের প্রকোষ্ঠে বসে লিখেছেন গল্প। তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনি তো হার মানিয়ে দেয় অনেক সাহিত্যিককেই। বঙ্গবন্ধুর সাফল্য ছিল খেলার মাঠেও। অধিনায়ক হিসেবে সে সময় দেশের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে জিতিয়েছিলেন শিরোপা।
বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। স্কুলজীবনেই তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ফুটবল দলে নাম লিখিয়েছিলেন। মাঠের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি অল্প দিনের মধ্যেই ওয়ান্ডারার্সে জায়গা করে নেন। সে সময় দেশের সেরা ফুটবলাররাই ওয়ান্ডারার্সে খেলার সুযোগ পেতেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের জার্সি গায়ে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলেছেন। ১৯৪৩ সালে বগুড়ায় আয়োজিত একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে বঙ্গবন্ধুর অধিনায়কত্বে শিরোপা জিতেছিল ওয়ান্ডারার্স।
পুরান ঢাকার কলতাবাজার ও চকবাজারের বাসিন্দারা মিলে ১৯৩৭ সালে গড়ে তোলেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। অল্প দিনের মধ্যেই এটি দেশের জনপ্রিয় ক্লাবে পরিণত হয়। ফুটবল–হকিতে গঠিত হয় শক্তিশালী দল। এই ক্লাবই ১৯৫০, ১৯৫১, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৬ ও ১৯৬০ সালে ঢাকা ফুটবল লিগের শিরোপা জিতেছিল। পঞ্চাশের দশকে ওয়ান্ডারার্সের টানা চারবার লিগ শিরোপা জেতার রেকর্ড আজও দেশের ফুটবলের এক দুর্দান্ত ইতিহাস হয়ে আছে। তখন ক্লাবটির এমন শক্তিশালী হওয়ার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
বঙ্গবন্ধুর ফুটবলপ্রেম উঠে এসেছে তাঁর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও। নিজের ফুটবলস্মৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আব্বাও ভালো খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলেন। আমি মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলাম। আব্বার টিম আর আমার টিমের যখন খেলা হতো, তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভালো ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম। ১৯৪০ সালে আব্বার টিমকে আমার স্কুল টিম প্রায় সকল খেলায় পরাজিত করল। অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। খেলোয়াড়দের বাইরে থেকে আনত। সবাই নামকরা খেলোয়াড়।’
রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বঙ্গবন্ধুর খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি ঘটে যায় আপনা–আপনিই। তাঁর বাকি জীবনের কথা তো ইতিহাস। ধীরে ধীরে নিজের মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে হয়ে ওঠেন বাঙালির মুক্তির পথপ্রদর্শক, অবিসংবাদিত নেতা। বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলে ঘুমন্ত বাঙালিকে তিনিই উদ্বুদ্ধ করেন স্বাধীনতাসংগ্রামে।
ক্রীড়াপাগল বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেও খেলাধুলাকে ভুলে থাকেননি। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠন করেন জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। বাংলাদেশে ঘরোয়া খেলাধুলার শুরু তখন থেকেই। আর্থিক সংকটের মধ্যেও দেশের খেলাধুলার অবকাঠামো উন্নয়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যান বঙ্গবন্ধু। দেশের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো তাঁর হাতেই গড়া। ১৯৭৪ সালে তো ফিফার সদস্যপদও পেয়ে যায় বাংলাদেশ।