স্পেনের সানচেজ পিজুয়ান স্টেডিয়ামে গ্যালারির আসনসংখ্যা ছিল ৪২ হাজার। রেঞ্জার্স ও আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের জন্য ১০ হাজার করে টিকিট বরাদ্দ করেছিল উয়েফা। কিন্তু ম্যাচে দেখা গেল অন্য দৃশ্য।
ফ্রাঙ্কফুর্টের সাদা ও রেঞ্জার্সের নীল জার্সি ও পতাকায় সয়লাব গ্যালারি। জার্মান ক্লাবটির ভক্তরা এক কাঠি সরেস। বিশাল এক ব্যানারও প্রদর্শন করেছে তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে ৪২ বছর পর ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ফ্রাঙ্কফুর্টের ভক্তরাই। স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট। তার আগে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র ছিল।
ফ্রাঙ্কফুর্টের সমর্থকেরা বরাবরই তাঁদের ক্লাবের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। ইউরোপা লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে বার্সেলোনার মাঠে হানা দিয়েছিল ক্লাবটির প্রায় ২০ হাজার সমর্থক। জয়ও পেয়েছিল ৩-২ গোলে।
বার্সাকে বিদায় করা সেই ক্লাবের সমর্থকেরা ফাইনালের আগে মারামারিতে জড়িয়েছেন রেঞ্জার্স ভক্তদের সঙ্গে। ইউরোপা লিগ ফাইনাল সামনে রেখে দুই দলের প্রায় দেড় লাখ সমর্থক ভিড় জমিয়েছিলেন সেভিয়ায়। বেশির ভাগই টিকিটহীন।
ম্যাচ শুরুর প্রায় দুই ঘণ্টা আগে স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তায় সান বের্নার্দো ব্রিজে রেঞ্জার্স ও ফ্রাঙ্কফুর্ট সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পানশালা থেকে বের হয়ে মাঠে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে রেঞ্জার্স ভক্তরাই ফ্রাঙ্কফুর্ট সমর্থকদের ওপর হামলা চালান।
সেভিয়া ক্যাথেড্রালের পাশে ঘটেছে এর উল্টোটা—ফ্রাঙ্কফুর্টের সমর্থকেরা পাল্টা হামলা চালান রেঞ্জার্স ভক্তদের ওপর। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
রেঞ্জার্সের সামনে সুযোগ ছিল ৫০ বছর পর ইউরোপে প্রথম শিরোপা জয়ের। কিন্তু টাইব্রেকারে তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয় ওয়েলস মিডফিল্ডার অ্যারন রামসি লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হওয়ায়। তাঁর শট রুখে দেন ফ্রাঙ্কফুর্ট গোলকিপার কেভিন ট্রাপ।
রাফায়েল বোরের গোলে টাইব্রেকারে জয় তুলে নেয় ফ্রাঙ্কফুর্ট। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে জো আরিবোর গোলে রেঞ্জার্সই এগিয়ে ছিল। ৭০ মিনিটে ফ্রাঙ্কফুর্টকে সমতায় ফেরান বোরে। এরপর নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে অমীমাংসিত ছিল।
অপরাজিত থেকে ইউরোপের দ্বিতীয় সারির এই টুর্নামেন্ট জিতল ফ্রাঙ্কফুর্ট। গ্রুপপর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত মোট ১৩ ম্যাচেই গোল করেছে দলটি। উয়েফা কাপ থেকে টুর্নামেন্টটির নাম ২০০৯ সালে ইউরোপা লিগ হওয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টুর্নামেন্টের সব ম্যাচেই গোল করল ফ্রাঙ্কফুর্ট। চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলা নিশ্চিত করা এই দলের আগে ইউরোপা লিগে সব ম্যাচে গোল করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়েছিল চেলসি (২০১৮-১৯)।
জয়ের পর ফ্রাঙ্কফুর্ট কোচ অলিভার গ্লাসনার বলেছেন, ‘আমরা আগামী কয়েক দিন উৎসব করব।’ ফ্রাঙ্কফুর্টের জয়ের নায়ক বোরের প্রতিক্রিয়া, ‘এটা ক্লাব ও আমার জন্য ঐতিহাসিক রাত। এটা আমার প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপাজয়, আজীবন মনে রাখব।’
রেঞ্জার্সের কোচ জিওভান্নি ফন ব্রোঙ্কোর্স্ট বলেছেন, ‘টাইব্রেকার হলো লটারির মতো—আমরা আজ সৌভাগ্যবান দল ছিলাম না। ফাইনাল হারলে কষ্ট লাগে, মনে হচ্ছে বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরেছি।’