>
- ইউনিলিভারের পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট,
- আট বিভাগের সেরা ১৬টি স্কুল নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত পর্ব
- ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর সোনাদিঘী
গ্রাম থেকে নিজ জেলা শহরে পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় ৩২ কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে কারও কখনো পা রাখা হয়নি রাজশাহী শহরেই। সেখানে ঢাকা তো ‘দিল্লির’ মতো বহু দূর! ফুটবলের সুবাদে সেই ঢাকাতে এসেই বড় বড় বিল্ডিং আর দোতলা বাস দেখে কাটছিল না ঘোর। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেই কিশোরেরাই ফিরছে ঢাকা জয় করে। ফেরাটা হবে আরও ঘোরের মধ্য দিয়ে প্লেনে। ক্লিয়ার মেন স্কুল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ জয় করার পুরস্কার হিসেবে প্লেনে চড়তে যাচ্ছে তারা।
একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চল বলতে যা বোঝায়, তা-ই হলো রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন। সে এলাকার সোনাদিঘী উচ্চবিদ্যালয়ই ঢাকার বিএফ শাহিন কলেজকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্কুল ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনালে মাঠে নামার আগে স্কুল কমিটির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বাবা, তোমরা চ্যাম্পিয়ন হলে প্লেনে করে তোমাদের বাড়ি নেওয়া হবে।’ ম্যাচ জয়ের পরে সে কথাটাই বারবার বললেন সাদিকুল। ফুটবলারদের মুখেও তাই আগাম প্লেনে উঠে চড়ে বসার বাড়তি উচ্ছ্বাস।
স্কুল ফুটবলের ফাইনাল উপলক্ষে আজ কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামটা সেজে উঠেছিল বেশ। বন্ধুদের উৎসাহ দিতে শাহীন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিল গ্যালারিতে। রাজশাহীর স্কুলটিও কম যায়নি, শিক্ষার্থী ভর্তি করে এসেছিল তিনটি বাস। উৎসাহ ও উদ্দীপনায় খেলাটি হলোও দুর্দান্ত। দুপুরের তপ্ত রোদে অসহ্য গরমের মধ্যেও স্কুলের ছেলেদের ব্যক্তিগত স্কিল ও দলীয় পাসিং ফুটবল দেখে বোঝার উপায় নেই, বাংলাদেশের ফুটবল র্যাঙ্কিং ১৯৭। খেলায় মূলত এগিয়ে ছিল শাহীন স্কুলের ছেলেরাই। কিন্তু একাধিক গোল মিসের খেসারত দিতে হয়েছে তাদের। অন্যদিকে বিপ্লব তিরকির ম্যাচের মীমাংসা করে দেওয়া গোলটি ছিল দুর্দান্ত। প্রবীর কুমারের ফ্রি কিক থেকে হেডে গোলটি করে বিপ্লব।
সোনাদীঘী দলটির বেশির ভাগ ফুটবলারই আদিবাসী। ম্যাচ জয় ছাড়াও ব্যক্তিগত দুটি সেরা পুরস্কারও উঠেছে তাদের হাতে। ৯ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছে অধিনায়ক যোগেন লাখরা আর পুরো টুর্নামেন্ট মাতিয়ে গোল্ডেন বলজয়ী প্রবীর কুমার।
মাঠে উপস্থিত থাকা সবাই একবাক্যে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন তাদের খেলা দেখে। খেলোয়াড় বাছাইয়ের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কোচ আবদুর রাজ্জাক তো বলেই দিয়েছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের সেরা টুর্নামেন্ট। বাছাইকৃত ছেলেদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প করানো গেলে সোনা ফলবে এখান থেকে।’
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এখান থেকে বাছাইকৃত সেরা ২৬ খেলোয়াড় নিয়ে আয়োজন করা হবে ক্যাম্প। খেলা দেখতে আসা এক সাবেক ফুটবলার কিছুটা স্বগতোক্তির সুরে আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘হলেই ভালো। না হলে হয়তো ফুল হয়ে ফোটার আগে কলিতেই শেষ হয়ে যেতে পারে এই ছেলেদের ফুটবল-জীবন! প্রথমবারের মতো প্লেনে বাড়ি ফেরাটাই হয়তো হয়ে থাকবে শেষ প্লেনে ওঠার স্মৃতি হয়ে।’