>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র নবম পর্বে থাকছে ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ
নাহ্। জার্মানি বা আর্জেন্টিনার গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলোর মতো অতটা নখকামড়ানো সমাপ্তি দেখেনি ব্রাজিলের 'ই' গ্রুপ। ঘটেনি কোনো অঘটন। প্রত্যাশিতভাবেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ব্রাজিল, সঙ্গী হয়েছে সুইজারল্যান্ড। গত পরশু সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারানো ম্যাচে গোল পেয়েছেন বার্সেলোনার সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পাওলিনহো আর পিএসজির সেন্টারব্যাক থিয়াগো সিলভা। আর ওদিকে ২-২ গোলে ড্র করেছে সুইজারল্যান্ড আর কোস্টারিকা।
ব্রাজিলের প্রথম গোলে সরাসরি অবদান বার্সেলোনা মিডফিল্ডার কুতিনহোর। দারুণ ছন্দে থাকা এই মিডফিল্ডার পরশুও খেলেছেন দুর্দান্ত। তুলনামূলকভাবে এ ম্যাচে বলে কুতিনহোর স্পর্শ কম থাকলেও (৭৬) সফল পাস দেওয়ার হার যথারীতি অনেক বেশি ছিল তাঁর, ৯০.৯%। গোলসহায়তা করার জন্য তাঁর দেওয়া তিনটা 'কি পাস'–এর মধ্য থেকে একটা পাস পাওলিনহোর গোলে সহায়তা করেছে। দেখে নিন গোলটা -
দিন দিন ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত হচ্ছেন কুতিনহো। এ দিন গোলপোস্ট বরাবর শটও মেরেছেন দুটো। মাঝমাঠ আর আক্রমণ—দুই দিকই সমান তালে সামলে গেছেন কুতিনহো। কুতিনহোর হিটম্যাপ দেখলেই বুঝতে পারবেন মাঠের কোন কোন জায়গায় তাঁর অবস্থান ছিল -
মাঝমাঠের সঙ্গে আক্রমণের এই দুর্দান্ত সংযোগ করিয়ে দেওয়ার কারণে আক্রমণভাগে নির্ভার হয়ে খেলতে পেরেছেন নেইমার। এদিন বাম উইংটা যেন সম্পূর্ণ নিজের করে রেখেছিলেন ব্রাজিল ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা। আক্রমণের দিকেই বেশি মনোযোগ ছিল তাঁর। গোল করার জন্য সাতটা শট অন্তত সে কথাই বলে। এই সাতটা শটের মধ্যে আবার তিনটা ছিল গোল বরাবর। গোল না পেলেও দ্বিতীয় গোলের সহায়তাটা কিন্তু এসেছে নেইমারের পা থেকেই। আরও তিনবার 'কি পাস' দিয়েছেন তিনি, যে পাসগুলো দিয়ে আরেকটু হলেই গোলও হয়ে যেতে পারত।
নেইমারের ভালো খেলার পেছনে আরেকটা বড় কারণ লেফটব্যাক ফিলিপে লুইস। পিঠের চোটে মাত্র দশ মিনিট পরেই মাঠ থেকে উঠে যাওয়া মার্সেলোর বিকল্প হিসেবে এদিন লেফটব্যাক হয়ে খেলেছেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফিলিপে লুইস। এমনিতেই মার্সেলোর থেকে অপেক্ষাকৃত রক্ষণাত্মক লেফটব্যাক হিসেবে পরিচিত লুইস এদিন ব্রাজিলের রক্ষণের বাম প্রান্তটা একদম অটুট রেখেছিলেন।
তবে নেইমার, কুতিনহো বা লুইস নয়, এ ম্যাচের সেরা পাওলিনহো। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেই যে পাস দিয়ে দিয়ে খেলা গড়ে দিতে হয়, এ ধারণার বাইরে গিয়ে ব্রাজিল কোচ তিতের দেওয়ার কাজটা তিনি বেশ ভালোভাবেই করে দিয়ে যাচ্ছেন নিঃশব্দে। আর তা হলো সুযোগ-সুবিধামতো আক্রমণভাগে গিয়ে ছদ্ম-স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে আসা। এই অভ্যাসটারই ফল পেয়েছেন তিনি পরশু, ব্রাজিলের প্রথম গোলটা তাঁর পা থেকেই!
দ্বিতীয় রাউন্ডে এই উদ্যমী ব্রাজিলেরই মুখোমুখি হবে মেক্সিকো। ব্রাজিল আস্তে আস্তে যেভাবে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে, মেক্সিকোর জন্য তা দুঃসংবাদই বটে! ব্রাজিলের পায়ে শোনা যাচ্ছে সাম্বা ছন্দের নাচন!