>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র দশম পর্বে থাকছে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ
পারল না আর্জেন্টিনা। নাইজেরিয়ার সঙ্গে যে ভুলগুলো করে তারা পার পেয়েছিল, ফ্রান্সের সঙ্গে সেগুলো করে রেহাই মিলল না তাদের। সাম্পাওলিও আগের ম্যাচগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিলেন না। শিক্ষা নিল না আর্জেন্টিনার ‘বয়স্ক’ ডিফেন্স। এর মাশুল গুনলেন মেসিরা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা। ৩২ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হলো।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা কীভাবে এই ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করল! ফ্রান্সই-বা কীভাবে এই জয় তুলে নিল? উত্তর একটাই—বয়স্ক আর ধীরগতির ডিফেন্ডারদের যদি ১৯-২০ বছর বয়সের গতিশীল আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের সামলাতে হয়, তাঁদের পক্ষে পেরে ওঠা খুব কম ক্ষেত্রেই সম্ভব। গতির লড়াইয়ে হেরেই ম্যাচটা ফ্রান্সের হাতে তুলে দিয়েছে আর্জেন্টিনার রক্ষণ।
আর্জেন্টাইন রক্ষণে প্রায় সবার বয়স ত্রিশের ওপর। নিকোলাস ওটামেন্ডির বয়স প্রায় ৩১ বছর। সে রকম বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার না হলেও গত মৌসুমে পেপ গার্দিওলা এই ওটামেন্ডির ভেতর থেকেই সেরাটা বের করে আনতে পেরেছিলেন। কথাটা সেখানেই। ওটামেন্ডির সেরাটা দেখার জন্য সাম্পাওলিকেও হতে হতো গার্দিওলা; অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট দর্শনের বা স্টাইলের ওপর বিশ্বাসী হতে হতো। দুর্ভাগ্যবশত গোটা বিশ্বকাপেই সাম্পাওলি দলের জন্য সবচেয়ে সেরা কম্বিনেশন কিংবা কৌশলটা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ফেদেরিকো ফাজিওর বয়স প্রায় ৩২ বছর, কখনোই অমন গতিশীল ডিফেন্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। ডান দিকে থাকা মার্কাদোও তাই। একমাত্র তাগলিয়ফিওর বয়সই ৩০-এর থেকে কম। ওদিকে হাভিয়ের মাচেরানোর ভূমিকাটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হলেও দুই সেন্টারব্যাকের একটু সামনে থেকে তিনি রক্ষণের দিকেই মনোযোগী ছিলেন বেশি। ওদিকে গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানির বয়স ৩১ বছরের। এই বয়সী ডিফেন্স দিয়ে সাম্পাওলি চেয়েছিলেন তারুণ্যদীপ্ত ফ্রান্সের সঙ্গে ‘প্রেসিং ফুটবল’ খেলতে। সেটি কীভাবে সম্ভব? ফ্রান্সের হয়ে বারবার আক্রমণে উঠে আসা তরুণ খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে, আঁতোয়ান গ্রিজমান, পল পগবা, বেঞ্জামিন পাভার্ড ও লুকাস হার্নান্দেজ বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার জন্য ‘প্রেস’ করে, অর্থাৎ ফ্রান্সকে চেপে ধরে ওপরে উঠে এসে খেলে লাভ নেই। উল্টো প্রতি-আক্রমণে গতির জোরে ফ্রান্সই ঘোল খাইয়ে দেবে এবং সেটি হয়েছেও। চার গোলের মধ্যে দুটি গোলই দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণের ফসল। ১৯ বছর বয়সী ফরাসি উইঙ্গার এমবাপ্পেও জানিয়ে দিয়েছেন, তারুণ্যের গতিশীলতার কাছে বার্ধক্যের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
ম্যাচের গোলগুলো দেখার জন্য প্রতিটি ফোঁটার ওপর ক্লিক করুন
পুরো ম্যাচে মেসি খেলেছেন ‘ফলস নাইন’ হিসেবে। অর্থাৎ যিনি কাগজে-কলমে স্ট্রাইকার হিসেবে থাকবেন, কিন্তু মাঠের খেলায় নিজের জায়গা ছেড়ে আরেকটু নিচে নেমে ডানে বা বাঁয়ে খেলতে থাকবেন, তাঁর জায়গায় অন্য কেউ উঠে গিয়ে গোল করে আসবেন। সেই কাজটা মেসি বেশ ভালোই করেছেন। মেসির হিটম্যাপ ও টাচম্যাপ দেখলেই বুঝতে পারবেন যে মেসি ঠিক ডি-বক্সের মধ্যে ছিলেন না।
এমবাপ্পের হিটম্যাপ দেখুন, পুরো মাঠেই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি -
মেসিকে বলা হয়েছিল কাগজে-কলমে সেন্টার ফরোয়ার্ড হলেও নিচে নেমে খেলা বানিয়ে দেওয়ার জন্য, সে কাজটা তিনি বেশ করেছেন। দুটো গোলসহায়তাই তার প্রমাণ। এমনকি সফল পাসের হারও ৮৫ শতাংশের মতো। মেসিসহ অন্য খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যান দেখে নিন -
সময় এসেছে বুড়ো খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে তরুণদের ওপর ভরসা করার। ডিবালা, ইকার্দি, পারেদেস, ল সেলসোদের মাঠের বাইরে রেখে বুড়ো হাড়ের ভেলকির ওপর নির্ভর করলে সব সময় হয় না, এটা আশা করি বেশ ভালোই বুঝেছেন সাম্পাওলি, এমবাপ্পে, পাভার্ড ও গ্রিজমানদের মতো তরুণদের খেলা দেখে। ২০২২ বিশ্বকাপ কিংবা নিদেনপক্ষে সামনের কোপা আমেরিকার জন্য আর্জেন্টিনার উচিত পুরো দলকে ঢেলে সাজানো