>খুলনাকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় অবদান ছিল উন্নতির। প্রতিটি ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন। হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪ গোল)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে মঞ্চ থেকে নামতেই সতীর্থ খেলোয়াড়, কোচ ছুটে এলেন শুভেচ্ছা জানাতে। উন্নতি খাতুনের এক হাতে ধরা গোল্ডেন বল। অন্য হাতে গোল্ডেন বুট। বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলে ঢাকা বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা বিভাগ। আর খুলনাকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় অবদান ছিল উন্নতির। প্রতিটি ম্যাচেই আলো ছড়িয়েছেন। হয়েছেন টুর্নামেন্ট–সেরা ও সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪ গোল)। ফাইনালে গোল করে সবার নজর কেড়েছেন আলাদাভাবে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দোহারো গ্রামের কিশোরী উন্নতি। বাবা আবু দাউদ শৈলকুপা শহরে রিকশা চালান। মা হামিদা খাতুন অসুস্থ। সাত ভাইবোনের বিশাল সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। ফুটবলার হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে উন্নতিকে, ‘ফুটবল খেলা আমার কাছে নেশার মতো মনে হয়। ফুটবল ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। ফুটবল খেলি বলে এলাকার অনেকে অনেক রকম কথা বলত। প্রতিবেশীরা বলত, মুসলমানের মেয়ে হয়ে হাফপ্যান্ট পরে কেন খেলিস। অনুশীলনে গেলে সবাই হাসাহাসি করত। কিন্তু আমার বাবা-মা সব সময় সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্যই এখানে আসতে পেরেছি।’
ছোটবেলায় দোহারো মডেল হাইস্কুলে দড়িলাফ খেলতেন উন্নতি। অ্যাথলেটিকসেও ছিলেন সেরা। স্কুলের শিক্ষক রবিউল ইসলাম উন্নতির দৌড় দেখে ফুটবল দলে নিয়ে নেন। আর উন্নতির বাঁ পায়ের শট এতটা জোরালো ছিল যে প্রথম অনুশীলনেই শিক্ষকদের মুগ্ধ করে। এরপর ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় দোহারো স্কুল। ওই টুর্নামেন্টে উন্নতি হয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়। এরপর জেএফএ কাপ ও বাংলাদেশ গেমসেও অংশ নেন ফুটবলে। প্রতিটি টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো করে জাতীয় নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানীর নজরে পড়েন। এরপর বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে অনুশীলনের সুযোগ মেলে উন্নতির।
২০১৮ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হন উন্নতি। খেলেছেন দিল্লিতে সুব্রত কাপে। খেলেছেন গত বছর ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে। এবার বঙ্গমাতা ফুটবলে আলো ছড়ালেন। পুরস্কার জিতেও যেন বিস্ময়ের ঘোরে ছিলেন উন্নতি, ‘আমি তো ভাবতেই পারিনি ফুটবল খেলে এত দূর আসতে পারব। এ জন্য রবিউল স্যার, গোলাম রব্বানী স্যারকে ধন্যবাদ দেব।’
জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানী উন্নতির এমন পারফরম্যান্সে খুশি, ‘আমি এই টুর্নামেন্টে ওর সব ম্যাচ দেখেছি। আমার চোখে ও সব ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড়। এভাবে খেলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি সে জাতীয় দলে ঢুকতে পারবে।’
এর আগেও বঙ্গমাতা স্কুল টুর্নামেন্টের পুরস্কার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে। কালও আবার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে খুব খুশি। তা প্রধানমন্ত্রী দেখে কী বললেন? উন্নতি হাসতে হাসতে বলল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেখেই বললেন, তোমার নাম উন্নতি। ভবিষ্যতেও তুমি অনেক উন্নতি করবে, সেই দোয়া করি।’
বাফুফে ভবনে আবাসিক ক্যাম্পে অন্যান্য বয়সভিত্তিক দলের মেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছেন উন্নতি। এবার উন্নতির স্বপ্ন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলা, ‘আমার এখন একটাই স্বপ্ন সাবিনা আপু, কৃষ্ণা আপুদের মতো জাতীয় দলে খেলার। আশা করি, আমার এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে পারব।’