পেলে এই যুগে খেললে ২০০০ গোল করতেন!

মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার—দিল্লির এক অনুষ্ঠানে বলে গেলেন পেলে। ছবি: টুইটার
মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার—দিল্লির এক অনুষ্ঠানে বলে গেলেন পেলে। ছবি: টুইটার
>

ফুটবল খুব বেশি বদলায়নি বলে মনে করছেন পেলে। ব্রাজিলের এই কিংবদন্তি মনে করেন, এখনকার সুযোগ-সুবিধা নিজের ক্যারিয়ারের পেলে ২০০০ গোল করতেন

পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন ১৫ বছর বয়সে। ১৬ বছর বয়সে গায়ে তোলেন ব্রাজিলের বিখ্যাত হলুদ জার্সি। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে যখন বিশ্বকাপ জেতেন, বয়স সবে ১৭। তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে পুরো ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১ হাজার ৩৬৩টি ম্যাচ। গোল করেছেন ১ হাজার ২৮৩টি। তিনটি বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলারও পেলে।

এই পেলেই যদি জন্ম নিতেন এই সময়ে, পারতেন ফুটবল আকাশের জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হতে? লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের টেক্কা দিয়ে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের আসনে বসতে পারতেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি? পেলের কথা, শুধু তিনিই নন, ওই সময়ের সব ভালো ফুটবলারই এখনো ভালো খেলতেন। দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় পেলে বলেছেন, ‘ফুটবল খুব বেশি বদলায়নি। ২০ বছর আগে যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তারা এখনো ভালোই খেলত। ফুটবলের আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা যদি আমার সময়ে থাকত, হয়তো ২ হাজার গোল করতাম আমি।’

পেলে আর ডিয়েগো ম্যারাডোনা সমসাময়িক খেলোয়াড় নন। পেলে যে বছর পেশাদার ফুটবলে তাঁর শেষ ম্যাচটি খেলেছেন, আর্জেন্টিনা দলে ১৬ বছর বয়সী ম্যারাডোনার অভিষেক সেই ১৯৭৭ সালে। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৮৬ সালে। সেই বিশ্বকাপে অবশ্য আর্জেন্টিনার নেতৃত্বে ছিলেন ম্যারাডোনাই। একসময়ের না হলেও পেলে-ম্যারাডোনার মধ্যে কে সর্বকালের সেরা, এই তর্কটি ফুটবলগাথারই অংশ হয়ে গেছে।

পেলে-ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্বের মতোই একটি বিতর্ক লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে। দুজনের মধ্যে সময়ের সেরা ফুটবলার কে, বিশ্বজোড়া ফুটবল রোমান্টিকদের মাঝে এ নিয়ে তর্ক চলছে নিরন্তর। পেলে কাকে এগিয়ে রাখেন, সেটা জানার আগ্রহ কার না থাকবে! ভুটিয়া ওই অনুষ্ঠানে পেলের কাছে প্রশ্নটি করেছেন। শুধু রোনালদোর চেয়ে কেন, পেলে তো মেসিকে ফুটবল ইতিহাসেরই সেরা বলে দিলেন, ‘আমার কাছে, মেসি জিওএটি (গ্রেটেস্ট অব অলটাইম বা সর্বকালের সেরা)। এই সময়ে অনেক ভালো খেলোয়াড়ই আছে। রোনালদো আর মেসি দুজনেই খুব ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু দুজনের খেলার ধরন ভিন্ন। রোনালদো অনেকটাই সেন্টার ফরোয়ার্ড। আর মেসিকে বলব সম্পূর্ণ এক ফুটবলার।’

যাঁরা ভবিষ্যতের তারকা হবেন, তাঁদের কার চোখেই-বা পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা মেসি-রোনালদো হওয়ার স্বপ্ন নেই! ভবিষ্যতের ফুটবল তারকাদের জন্য কী উপদেশ দেবেন পেলে? ‘ফুটবল ঈশ্বরের উপহার। ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিলে খেলাটিতে নিজের জীবন সঁপে দিতে হবে। এখনকার তরুণ ফুটবলারদের প্রতি এটাই আমার প্রথম উপদেশ। এরপর বলব, কঠোর পরিশ্রম কর, কোচকে শ্রদ্ধা কর এবং নিরন্তর শিখতে থাক। কখনোই এমনটা ভেবো না যে তুমি সব জানো।’

যুগে যুগে ব্রাজিলে এত তারকা ফুটবলার জন্ম নেওয়ার রহস্য কি এটাই? পেলে অবশ্য মনে করেন এটি ঈশ্বরের উপহার, ‘ব্রাজিলে কীভাবে যুগে যুগে এত তারকা ফুটবলার আসে, এটা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। কখনো কখনো তো আমার মনে হয়, ব্রাজিল দলকে ঈশ্বরই কোচিং করান।’

এডসন অরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে হয়তো ঠিকই বলেছেন, ব্রাজিলে ফুটবল-প্রতিভা ঈশ্বরই গড়ে তোলেন!