গ্রিলিশ পেনাল্টি নিতে চেয়েছিলেন।
গ্রিলিশ পেনাল্টি নিতে চেয়েছিলেন।

পেনাল্টি নিতে রাজি হননি, এ দায় নিতে রাজি নন গ্রিলিশ

এমনটা হবে বোঝাই যাচ্ছিল। কাল ওয়েম্বলিতে ইউরোর ফাইনালে হারের পর দর্শকের আচরণ আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা টের পাওয়া গিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে। টাইব্রেকারে গোল হাতছাড়া করার কারণে জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মার্কাস রাশফোর্ড, জেডন সাঞ্চো ও বুকায়ো সাকা।

সাবেক খেলোয়াড় ও বিশ্লেষকদের রাগ অবশ্য তাঁদের ওপর নয়। বরং দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ওপর। তুলনামূলক বয়সী খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে কেন তরুণদের পেনাল্টি নিতে পাঠানো হলো, সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রয় কিন ও জোসে মরিনিওর মতো বিশ্লেষকেরা। আলাদা করে রাহিম স্টার্লিং ও জ্যাক গ্রিলিশের নাম উল্লেখ করে সমালোচনার তির ছুড়েছেন রয় কিন। ওদিকে মরিনিওর তোপ স্টার্লিং, স্টোনস ও লুক শর দিকে।

অন্যরা এখনো এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু গ্রিলিশ এত সহজে তির গাঁথতে দিতে রাজি নন। হারের দুঃখের মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কিনের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।

সাকাকে শেষ পেনাল্টি নিতে পাঠিয়েছে ইংল্যান্ড।

গতকাল টাইব্রেকারে প্রথম দুই শটের পর ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু চার শটের পর সেটা ইতালির পক্ষে ৩-২ হয়ে যায়। কারণ, ইতালির দুই ফুটবলার নিজেদের কাজটা করতে পারলেও শুধু পেনাল্টি শুটআউটে অংশ নিতেই নামা রাশফোর্ড ও সাঞ্চো ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু ইতালির পক্ষে পঞ্চম শট নিতে যাওয়া জর্জিনিও সুযোগ নষ্ট করেন দলকে ট্রফি এনে দেওয়ার। সব নজর তখন পড়ে সাকার ওপর। ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার ঠিকভাবে পেনাল্টি নিলেই সাডেন ডেথে যেত শুটআউট।

জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা সে সুযোগ দেননি। সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন সাকার শট। এ ঘটনায় সাকার অবশ্য কোনো দোষ দেখছেন না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি রয় কিন। তাঁর রাগ গ্রিলিশ, স্টার্লিংদের ওপর। কারণ, তুলনামূলক অনেক বেশি অভিজ্ঞ তাঁরা দুজন।

সে তুলনায় কদিন আগেই পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে আসা এক খেলোয়াড়ের ওপর শেষ পেনাল্টি নেওয়ার ভার দেওয়াটা অন্যায় বলে মনে করেন কিন, ‘আপনি যদি গ্রিলিশ বা স্টার্লিং হন, তাহলে আপনি এটা করতেই পারেন না। আপনার সামনে একটা বাচ্চা ছেলে এসে পেনাল্টি নিতে চাইলে আপনি চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না। (আপনাকে ভাবতে হবে) “একটা ১৯ বছরের ছেলে সামনে দিয়ে শট নিতে যাচ্ছে, অথচ আমি অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছি, অনেক বেশি অভিজ্ঞ।” এবং স্টার্লিং এর আগে অনেক ট্রফি জিতেছে।’

টাইব্রেকারের আগমুহূর্তে হেন্ডারসনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

গতকাল ইংল্যান্ডের পক্ষে সফল পেনাল্টি নেওয়া হ্যারি কেইন ও হ্যারি ম্যাগুয়ারের বয়স ২৭ ও ২৮ বছর। আর পেনাল্টি মিস করা তিনজনের বয়স যথাক্রমে ২৩, ২১ ও ১৯ বছর। ওদিকে স্টার্লিং ও গ্রিলিশের বয়স ২৬ ও ২৫ বছর। কিনের ধারণা, একজন অনুশীলনে যত ভালোই পেনাল্টি নিক না কেন, ভর্তি স্টেডিয়ামে ফাইনালের চাপ নেওয়া সব সময়ই কঠিন, ‘আমি বলছি না সে (সাকা) প্রস্তুতি নেয়নি, সে হয়তো ছয় বা সাতে পেনাল্টি নিতেও পারত। কিন্তু আপনি (স্টার্লিং বা গ্রিলিশ) সেখানে বসে থাকতে পারেন না। এটা খুব কঠিন কাজ। আপনার উচিত ওই বাচ্চাকে থামানো এবং বলা, “শোনো, আমিই নিচ্ছি এটা।”’

কিনের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হয়েও পেনাল্টি নিতে ভয় পাচ্ছিলেন স্টার্লিং-গ্রিলিশরা। নিজের এমন বদনাম মানতে পারেননি গ্রিলিশ। টুইট করে বলেছেন, ‘আমি বলেছি আমি পেনাল্টি নিতে চাই!!! এ টুর্নামেন্টে কোচ অনেকগুলো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আজ রাতেও তিনি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই বলে আমি মানুষকে বলতে দেব না যে আমি পেনাল্টি নিতে চাইনি, যেখানে আমি নিতে চেয়েছিলাম...।’

গ্রিলিশ বা স্টার্লিংরা পেনাল্টি নেননি।

শুধু কিন নন, চেলসি, ইউনাইটেড ও টটেনহামের সাবেক কোচ মরিনিও এ ব্যাপারে স্টার্লিংদের ভুল দেখছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে স্টার্লিং কোথায় ছিল? জন স্টোনস কোথায়? লুক শ কোথায়? জর্ডান হেন্ডারসন ও কাইল ওয়াকার (দুজনই ৩১ বছর বয়সী) মাঠে রয়ে গেল না? আমার ধারণা, ওই মুহূর্তে এত চাপ নেওয়াটা ওইটুকু ছেলের জন্য অনেক বেশি। কিন্তু আমি জানি না সম্পূর্ণ ঘটনা কী, গ্যারেথকে (সাউথগেট) এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হবে। কাদের থাকা উচিত ছিল কিন্তু থাকেনি, কারা দায়িত্ব থেকে পালিয়েছে।’

ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার গ্যারি নেভিল অবশ্য এত চাঁছাছোলা সমালোচনায় আগ্রহী নন। তাঁর ধারণা, অনুশীলনে নির্ঘাত এমন কিছু দেখেছেন ইংল্যান্ড কোচ, যে কারণে অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে সাকা-সাঞ্চোদের বেছে নেওয়া হয়েছিল, ‘যখন আমরা সাকাকে পেনাল্টি নিতে এগিয়ে যেতে দেখলাম, তখন আমরা গ্রিলিশ বা স্টার্লিংকে আশা করছিলাম। কিন্তু তারা নিশ্চয় দেখেছে কারা পেনাল্টি মিস করছে, কারা ভালো করছে। গ্রিলিশ গত দুই মৌসুমে কোনো পেনাল্টি নেয়নি। তার মানে ওর পেনাল্টিতে কোনো সমস্যা নিশ্চয় আছে এবং গ্যারেথ নিশ্চয় এসব দেখেই যাদের গোল করার সম্ভাবনা, তাদেরই নামিয়েছে।’

সাকাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন কেইন।

নেভিলের ধারণা, অনুশীলনে কে কেমন করছেন, সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাই খেলোয়াড় বা কোচের দোষ ধরার কিছু নেই, ‘ক্যাম্পে নিশ্চিত ওরা এ নিয়ে কাজ করেছে। কে বেশি গোল করেছে এবং কার রেকর্ড ভালো। এটা সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক, তথ্যনির্ভর। মার্কাস সবকিছুই ঠিক করেছে, শুধু গোল হয়নি। সাঞ্চোরটা আসলেই বাজে ছিল। গোলকিপার ঠিক দিকে গেলে, এটা সেভ হবেই। সাকারটাও। সে (দোন্নারুম্মা) এত ভালো কিপার এবং যখন সে কোনো দিকে যায়, তার খুব ভালো সম্ভাবনা থাকে সেটা ঠেকানোর। সে এত বড়!’

কিন কিন্তু সাবেক সতীর্থের কথা পাত্তাই দেননি। তাঁর দাবি, অনুশীলনে ফাইনালের চাপ কখনোই টের পাওয়া যায় না। আর এ কারণেই এসব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের এগিয়ে যেতে হয়, ‘যখন বলা হয় এর জন্য অনুশীলন করা হয়েছে, ক্রীড়াবিজ্ঞান ও তথ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে, আমি মজা পাই। আপনি এই আবহ সৃষ্টি করতে পারবেন না। এত বড় ফাইনালে এত দর্শকের সামনে এত বড় এক গোলকিপারের সামনে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি অনুশীলন করা যায় না। মাইক টাইসন যেমন বলেছিলেন, “সবারই কোনো না কোনো পরিকল্পনা থাকে, যতক্ষণ না মুখে ঘুষি এসে পড়ে।” আপনি দৈত্যাকার এক গোলকিপারের সামনে পড়েছেন। গোলকিপারকে সেটা সেভ করতে দিন, লক্ষ্যে মারুন, কিন্তু এ আবহ আগে সৃষ্টি করা যায় না। ওদের অত পরিকল্পনা কোনো কাজেই আসেনি।’