সাইরোসের আদালত থেকে বের হচ্ছেন ম্যাগুয়ার।
সাইরোসের আদালত থেকে বের হচ্ছেন ম্যাগুয়ার।

বিতর্কে ইউনাইটেড ডিফেন্ডার

পুলিশকে লাথি মেরে আবার ঘুষ সেধেছিলেন ম্যাগুয়ার

ছুটি মিলেছিল দুই সপ্তাহের। ফুটবলের ব্যস্ত সময়ে দুই মৌসুমের মাঝে বিরতিটা এমনিতেই কম। সেই অল্প সময়টুকুরও বেশ কিছুটা ভাগ বসিয়ে দিয়েছে গ্রিসের পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাইকোনোসের এক বারের বাইরে গ্রিক পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অধিনায়ককে সে ঘটনায় হাজতে নিয়ে গেছে পুলিশ। এর মাঝে খবর এল ২৭ বছর বয়সী ইংলিশ ডিফেন্ডার ও তাঁর সঙ্গীরা নাকি মামলা থেকে বাঁচতে ঘুষও সেধেছিলেন পুলিশকে।

আমি বলতে পারব না তারা আমাদের কী বলছিল। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ নিয়ে সব ইংরেজিতে গালি দিচ্ছিলেন। ফুটবলারসহ তিনজনকে হাজতে রাখা হয়েছে।
গ্রিক পুলিশ

গত বৃহস্পতিবার মাইকোনোস টাউনের মাতোজিয়ান্নিয়া অঞ্চলে প্রথমে কিছু ভক্তের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছিল ম্যাগুয়ারের। সে ঘটনা সামলাতে আসা পুলিশের সঙ্গেও ঝামেলা পাকিয়েছেন। মারামারি করে পরে হাজতে রাত কাটিয়েছেন। একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো হাজতবাস শেষ হয়নি তাঁর। সেদিনের ঘটনা ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র পেত্রোস ভ্যাসসিলাকিস, ‘যখন ঝগড়া থামল, তখন দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষ (ফুটবলারের পক্ষ) পুলিশ অফিসারদের গালাগালি দিতে শুরু করল। সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশের লোক ছিল। একপর্যায়ে ওদের একজন পুলিশের দিকে তেড়ে আসে এবং মারামারি শুরু হয়। ওদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ কিন্তু তার আগে বাকিরা (ফুটবলারও) আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। তারা পুলিশের অন্তত দুজনকে ঘুষি মেরেছেন এবং মাটিতে পড়ে থাকা পুলিশদের লাথি মেরেছেন।’

হাত-পায়ের সঙ্গে মুখও চলছিল ম্যাগুয়ারদের। অন্তত গ্রিক পুলিশের দাবি তাই, ‘আমি বলতে পারব না তারা আমাদের কী বলছিল। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ নিয়ে সব ইংরেজিতে গালি দিচ্ছিলেন। ফুটবলারসহ তিনজনকে হাজতে রাখা হয়েছে।’ এরই মধ্যে গোলডটকম দাবি করেছে, স্থানীয় পুলিশ নাকি তাদের জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর যেন মামলা করা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে টাকা সেধেছিলেন একজন। কিন্তু ওতে লাভ হয়নি কোনো।

এর মাঝে ইংলিশ ট্যাবলয়েড সান এক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে। ম্যাগুয়ার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ভিন্ন। নাম প্রকাশ না করা সেই প্রত্যক্ষদর্শী সানকে বলেছেন, ‘বুধবার রাতেই কয়েকজন হ্যারিকে খোঁচা দিচ্ছিলেন। তবে সেটা শুধু হালকা খোঁচার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বৃহস্পতিবারে ব্যাপারটা একটু মাত্র ছাড়ায়। তারা ইউনাইটেডকে গালি দিচ্ছিল। তারা হ্যারিকে খেপানোর চেষ্টা করছিল। সঙ্গে থাকা নারীদের সঙ্গেও ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছিল। হ্যারি খেপে যায়। তারা আবারও ইউনাইটেডকে গালি দেয় এবং হ্যারির এক সঙ্গীর সঙ্গে মারামারি শুরু করে। যখন মাটিতে পড়ে গেল ওরা, তখন হ্যারি পেছন থেকে লাথি মারা শুরু করেন। মেয়েরা চিৎকার শুরু করে। পাশ থেকে দুই পুলিশ অফিসার এসে থামানোর চেষ্টা করায় হ্যারি খেপে যান। তিনি বলতে শুরু করেন, “ ভাগ এখান থেকে। তোমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।” পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে পুলিশদের মারা শুরু করেন। পুলিশকে উল্টো সাহায্য চাইতে হয় তখন। আরও দুই তিনজন পুলিশ আসে কিন্তু হ্যারি এত শক্তিশালী আর এতটাই খেপে উঠেছিল যে তাঁকে থামানো যাচ্ছিল না। চিৎকার করছিলেন অনেক। বহু কষ্টে তাঁকে থামিয়েছে তারা, অন্তত এক পুলিশ আহত হয়েছে। পাঁচজনের বেশি পুলিশ লেগেছে তাঁকে থামাতে।’

ম্যাগুয়ারের এ কাণ্ডের পরও ইউনাইটেড তাঁর পাশেই আছে। ক্লাব অধিনায়কের যেন শাস্তি না হয়, সে চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। ম্যাগুয়ারের বড় কোনো শাস্তি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না সংবাদমাধ্যমগুলোও। এরই মাঝে সাইরোসের এক আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন ম্যাগুয়ার। আদালতের চোখে মনে হয়েছে, ঘটনাটি গুরুতর কিছু নয়। ফলে হাজত থেকে মুক্তি মিলেছে তার। আদালত ও মামলা সংক্রান্ত বাকি আনুষ্ঠানিকতা তাঁর আইনজীবীরাই এখন সামাল দিতে পারবেন।