মরিসিও পচেত্তিনোকে দিয়ে হচ্ছে না। অন্য কাউকে লাগবে। পিএসজি এমন ভাবতেই পারে। ফ্রেঞ্চ লিগ জিততে তো তেমন ঘাম ঝরাতে হয় না, কাতারি মালিকানায় যাওয়ার পর ১১ বছরের ৮ বারই তো তা জিতেছে পিএসজি। অথচ মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে, রামোস, দোন্নারুম্মার মতো তারকাখচিত দল নিয়েও সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে পিএসজির প্রাপ্তি শুধু লিগ শিরোপাই! যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইউরোপের কুলীনদের সারিতে ওঠার লক্ষ্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয়, সেখানে শেষ ষোলোতেই বাদ রিয়াল মাদ্রিদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের শিকার হয়ে।
পচেত্তিনোর বিদায়ঘণ্টাও বেজে গেছে এতে। অন্তত ইউরোপের সংবাদমাধ্যম তা-ই বলছে। প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন—কে আসছেন পচেত্তিনোর জায়গায়? সবচেয়ে বেশি গুঞ্জরিত হচ্ছে জিনেদিন জিদানের নাম। যদিও জিদান পিএসজির চেয়ে ফ্রান্সের জাতীয় দলের কোচ হতেই বেশি আগ্রহী। অন্য বিকল্প হিসেবে ইউরোপের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ অনেক কোচের নামই শোনা গেছে। তবে গতকাল থেকে হঠাৎ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ইউরোপের ফুটবলে সবচেয়ে পরিচিত নামগুলোর একটি—জোসে মরিনিও!
গত মৌসুমের ব্যর্থতার পর আগামীবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে এখন থেকেই আদাজল খেয়ে নামছে পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন হয়ে গেছে। দুর্মুখেরা বলেন, চুক্তি নবায়নের শর্ত হিসেবে পিএসজিতে খেলোয়াড়-কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমবাপ্পের মতামতেরও নাকি বড় ভূমিকা থাকবে। এই তো, দুদিন আগে এক ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইটে খবর বেরিয়েছে, পিএসজির ১৪ খেলোয়াড়কে বিক্রি করে দিতে ক্লাবকে নির্দেশ দিয়েছেন এমবাপ্পে। সেই খবরের টুইটের নিচে আবার এমবাপ্পে লিখে দিয়ে এসেছেন, ‘ভুয়া খবর!’
তা এমবাপ্পের হাতে ক্ষমতা আছে কি না, থাকলেও কতটা, তা পিএসজির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। প্রকাশ্যে যা জানা যাচ্ছে, তা হলো পিএসজি ক্রীড়া প্রকল্পের নতুন মুখ হতে যাচ্ছেন লুইস কাম্পোস। রিয়াল মাদ্রিদে একসময় কাজ করে যাওয়া ফরাসি ভদ্রলোক এর আগে ফ্রান্সের দুই ক্লাব মোনাকো ও লিলে ক্রীড়া পরিচালকের ভূমিকায় দারুণ সফল। সেই কাম্পোস এই মৌসুমে পিএসজির কোচ-খেলোয়াড় নিয়োগ-ছাঁটাইয়ের মূল দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন—এটি অনেকটাই নিশ্চিত।
ইউরোপের ফুটবলে দলবদলের খবরের ক্ষেত্রে বেশ নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে ওঠা ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো টুইটে লিখেছেন, শিগগিরই বর্তমান কোচ পচেত্তিনো ও বর্তমান ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোকে ছাঁটাইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে পিএসজি। তারপর আসবে কাম্পোসকে নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
এই কাম্পোসের কারণেই মরিনিওর সঙ্গে পিএসজির নাম জড়িয়ে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। মরিনিও রিয়াল মাদ্রিদের কোচ থাকার সময় কাম্পোসও যে রিয়ালেই ছিলেন। ইতালিয়ান ক্লাব রোমাকে কিছুদিন আগে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে তৃতীয় সারির মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ কনফারেন্স লিগ জিতিয়েছেন মরিনিও—রোমার ইতিহাসে যা প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপা। এরপরই পর্তুগিজ কোচ অবশ্য রোমা ছেড়ে যাবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে, রামোস, ভেরাত্তিদের কোচ হওয়ার প্রলোভনের সামনে মরিনিও কতটা অনড় থাকতে পারেন, সে এক প্রশ্ন বটে। তার ওপর রোমার চেয়ে পিএসজিতে চ্যালেঞ্জটাও বড়—চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো। আর কে না জানে, ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন।
২০০৪ সালে পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়ে চমক দেখিয়েছেন। ইউরোপে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা ইন্টার মিলানকে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিয়েছেন ২০১০-এ। সেই মরিনিওর জন্য পিএসজির প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো কোচ হয়ে ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করা কঠিনই হবে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লো পারিসিয়েন মরিনিওর পিএসজির কোচ হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে। আরেক ফরাসি ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ফুত মেরকাতোতেও একই সুর। তবে শুধু যে মরিনিওই দৌড়ে আছেন, তা নয়। রিভার প্লেটকে দুবার দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বসূচক টুর্নামেন্ট কোপা লিবার্তাদোরেস জেতানো আর্জেন্টাইন কোচ মার্সেলো গায়ার্দোকেও পছন্দ লুইস কাম্পোসের। তবে গায়ার্দো আগামী ডিসেম্বরে রিভার প্লেটের সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাবটি ছাড়তে রাজি নন বলেই শোনা যাচ্ছে।
এর আগে জিদানের পিএসজি কোচ হতে অনাগ্রহের খবর চাউর হতে শুরু করার সময় থেকেই নিসের কোচ ক্রিস্তোফ গালতিয়েরের নাম বেশ জোরেশোরে শোনা গেছে। নিসে গালতিয়েরের সঙ্গেই কাজ করেছেন কাম্পোস।