>বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকায় শুভসূচনা করেছে ব্রাজিল। নেইমারহীন ব্রাজিলকে বলতে গেলে একাই টেনেছেন বার্সেলোনার উইঙ্গার ফিলিপ কুতিনহো। জোড়া গোল এসেছে তাঁর পা থেকেই।
কোপা আমেরিকা শুরু আগেই ব্রাজিলের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন নেইমার। চোটে পড়ে কোপা আমেরিকায় খেলা হচ্ছে না এ তারকার। নেইমারহীন ব্রাজিল কীভাবে কোপা জিতবে, চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন শত শত ব্রাজিল সমর্থক। কিন্তু তাদের দুশ্চিন্তা কাটালেন কুতিনহো। বার্সা তারকার জোড়া গোলেই বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোপায় শুভসূচনা করেছে ব্রাজিল। কুতিনহোও দেখিয়ে দিয়েছেন, ঠিকভাবে তাঁকে ব্যবহার করতে পারলে নেইমারের দরকার হয়তো নেই এই দলে!
কিন্তু ওই যে ‘ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে’—যেটা কি না অনেক ম্যানেজারই করতে পারেন না। আর্নেস্তো ভালভার্দের কথাই ধরুন। ভদ্রলোক বার্সেলোনায় কুতিনহোদের কোচ। মূলত ৪-৩-৩ ফরমেশনে আক্রমণভাগের মাঝে সুয়ারেজ আর ডানে মেসিকে রেখেই আক্রমণ সাজান তিনি। বামে (লেফট উইঙ্গার হিসেবে) খেলাতে চান কুতিনহোকে। মেসি দলের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় হওয়ার কারণেই কী না ‘যেভাবে ইচ্ছে হয় খেলো (ফ্রি রোল)’ লাইসেন্স দেওয়া আছে মেসিকে। যে সুবিধা দলের অন্য কেউ পান না। ফলে কুতিনহোর সমস্যা হয়েছে বেশ।
কুতিনহো কখনই উইঙ্গার নন, আক্রমণভাগের বামদিকে প্রথাগত উইঙ্গারের মতো খেলতে পারেন না। লিভারপুল আক্রমণভাগের বামদিকে খেললেও কুতিনহো ছিলেন অনেকটা লিভারপুলের ‘মেসি’। সেখানে ইয়ুর্গেন ক্লপ তাকে সেই ‘যেভাবে ইচ্ছে হয় খেলো’ এর লাইসেন্স দিয়ে রেখেছিলেন। ফলে কাগজে কলমে উইঙ্গার হলেও উইঙ্গারের ভূমিকা না পালন করে তিনি অনেকটা প্লে-মেকার হয়ে যেতেন, লিভারপুলের মূল প্লে-মেকার ছিলেন তিনিই। যেটা তিনি বার্সেলোনায় এসে পান না। কেননা বার্সায় মূল প্লে-মেকার মেসি।
আবার মাঝে মাঝে ভালভার্দে ৪-৩-৩ ফরমেশনে দলকে না খেলিয়ে ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলান, তখন দুই স্ট্রাইকার মেসি ও সুয়ারেজকে সামনে রেখে কুতিনহোকে রাখেন মিডফিল্ডে চারজনের একদম বামদিকে। মেসি ও সুয়ারেজ তখন প্রথাগত উইঙ্গার নন, পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার। ৪-৩-৩ ফরমেশনে মাঠের দুই দিকে তিনজন করে খেলোয়াড় থাকে (রাইটব্যাক, রাইট মিডফিল্ডার, রাইট উইঙ্গার ও লেফটব্যাক, লেফট মিডফিল্ডার ও লেফট উইঙ্গার) তারা একপাশ দিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ আসলে একসঙ্গে রক্ষণ সামলে থাকেন।
৪-৪-২ ফরমেশনে ওপরে দুজন পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার হয়ে যাওয়ার ফলে সে সুবিধাটা হয় না। তখন ডান দিক দিয়ে আক্রমণ আসলে বার্সেলোনার লেফট মিডফিল্ডার কুতিনহো ও লেফটব্যাক জর্ডি আলবাকে আক্রমণ সামলাতে হয়। এই আক্রমণ সামলানোর কাজটা কুতিনহো করতে পারেন না। লিভারপুলে থাকতেও পারতেন না। তাঁকে খেলতে দিতে হবে তাঁর মতো করে। তাই ৪-৩-৩ ফরমেশনে লেফট উইঙ্গার হিসেবেও তিনি খেলতে পারেন না, ৪-৪-২ ফরমেশনে কুতিনহোকে খেলানোর ভরসাও পান না ভালভার্দে।
আগে ভালভার্দের মতো কুতিনহোকে ব্রাজিল কোচ তিতেও খেলাতে পারতেন না। কেননা, ব্রাজিল দলে যে আছেন নেইমার! সেই একই সমস্যা। নেইমার দলের সবচেয়ে প্রতিভাধর খেলোয়াড়, ফলে তাঁকে ‘ফ্রি রোল’ না দিয়ে কুতিনহোকে ইচ্ছেমতো খেলার লাইসেন্স দেওয়ার সুবিধার কথা তিতে ভাবতেও পারতেন না।
ফ্রি রোল বার্সায় মেসি ও ব্রাজিলে নেইমারকে দেওয়া থাকলেও, কুতিনহোর কাছ থেকে সর্বোচ্চটুকু পাওয়া সম্ভব যদি ৪-৩-৩ ফরমেশনে তাঁকে মাঝমাঠের বামদিকে খেলানো হয়। তখন তিনি আদর্শ মিডফিল্ডারের মতো মাঝমাঠ থেকে নিশ্চিন্তে খেলা বানিতে দিতে পারবেন। বা যদি দলের ছক ৪-৩-৩ থেকে পরিবর্তন করে ৪-২-৩-১ করা হয়। সেখানে কুতিনহো কেন্দ্রীয় আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার (সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার/নাম্বার টেন) ভূমিকায় নিশ্চিন্তে খেলবেন, খেলা বানিয়ে দেবেন সতীর্থদের জন্য। দলের ছক ৪-৩-৩ থেকে বদলে ৪-২-৩-১ করার সাহস ভালভার্দে বা তিতে—কারও ছিল না অন্তত আজ ভোর পর্যন্ত।
নেইমার না থাকার কারণেই কি না, বুদ্ধি খুলল তিতের। দলের ছক ৪-৩-৩ থেকে বদলে ৪-২-৩-১ করলেন তিনি। সামনে রবার্তো ফিরমিনোকে রেখে তাঁর পেছনে নাম্বার টেন হিসেবে কুতিনহোকে বসালেন তাঁর পরম আরাধ্য জায়গাটায়। ফলাফল দেখতেই পাচ্ছেন, দুরন্ত দুর্বার ব্রাজিলের পেছনের কলকাঠিটা তিনিই নাড়লেন। দুটো গোল করলেন। ফিরলেন স্বরূপে।
নেইমারহীন ব্রাজিল এমন কুতিনহোকেই তো চেয়েছিল!