বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় নেইমার। মেসি-রোনালদোর পর বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় সবার ওপরে ২৬ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডই। তবে নেইমারকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনের কারিগর যদি কাউকে বলতেই হয়, তবে নিঃসন্দেহে ব্রাজিলিয়ান কোচ বেতিনহোর নামই সবার আগে উঠে আসবে।
২০ বছর আগের কথা, বিচ ফুটবলের একটি ম্যাচ দেখছিলেন বেতিনহো। ছুটোছুটি করে বলের জন্য লড়ছিল বেশ কিছু বালক। এমন সময় এক বালক তার নজর কাড়ে। রোগা পটকা শরীরের এক ছেলে, শরীরে অতটা শক্তি আছে বলে বোঝা যায় না অথচ পুরো মাঠ যেন ও একাই চষে বেড়াচ্ছে। এত কম বয়সেই এত দ্রুত ছুটতে পারা কোনো ছেলেকে আগে কখনোই দেখেননি বেতিনহো। সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটিই ছিল আজকের ফুটবল জগতের বিশাল তারকা, আজকের নেইমার!
ছেলেটার বাবা তখন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে বেশ ভালোই পরিচিত, অন্যদিকে উচ্চতার দিক থেকে মাকে লম্বাই বলা চলে। যদি ছেলেটা মায়ের উচ্চতা এবং বাবার খেলার ধাঁচ পেয়ে যায়, তবে সেটা হবে অসাধারণ। বেতিনহো নেইমারকে তখন থেকেই যেন খুব সূক্ষ্মভাবে পরখ করে নিয়েছিলেন।
আট বছর আগেই ব্রাজিলের আরেক তারকা রবিনহোকে আবিষ্কার করেছিলেন বেতিনহো, যে কিনা সান্তোসে থাকার সময় অসাধারণ খেলতেন। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলানের হয়ে খেলা ছাড়াও ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপ খেলারও অভিজ্ঞতা হয়েছে এই ব্রাজিল ফরোয়ার্ডের। কিন্তু বেতিনহোর জানা ছিল না, রবিনহোর চেয়েও নেইমার আরও অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।
১৯৯৮ সাল, গ্রেমেন্তাল দলের হয়ে জুনিনহোকে (নেইমার তখন বাড়িতে জুনিনহো নামেই পরিচিত ছিল) খেলাতে বেতিনহো নেইমারের বাবা-মায়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। বাবা ফুটবল খেলোয়াড়, ছেলেকে অনুমতি না দেওয়ার তাই কোনো কারণই ছিল না।
নেইমারকে দেখে অবাক তো হয়েছিলেনই বেতিনহো, তবে সবচেয়ে বেশি আশা খুঁজে পেয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান কোচ, ‘আমি পুরো ক্যারিয়ারে পেলের ছন্দটা মনে করিয়ে দিতে পারে, এমন কাউকে খুঁজে বের করতে চেয়েছি। ওকে দেখার পর আমার মাথায় যেন দুবার বজ্রপাত হয়েছিল।’
নেইমারের বয়স তখন মাত্র এগারো, সে সময়েই বেতিনহো নেইমারকে সঙ্গে নিয়ে এই ক্লাব থেকে সেই ক্লাবে ছুটে বেড়িয়েছেন। অবশেষে সান্তোস ফুটবল ক্লাব নেইমারকে প্রশিক্ষণ করানোর জন্য রাজি হয়। আর সেই নেইমারই এখন ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জেতার মূল ভরসা।