>১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শূন্যস্থান পূরণের জন্য হাজির হয় এই দলবদল মৌসুম। এ দলবদলে কোন দলের কী সমস্যা, কোন দলের বিভাগে দরকার নতুন মুখ—এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করা হবে প্রথম আলোতে। আজ দ্বিতীয় পর্বের দল হিসেবে থাকছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই।
চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য চেষ্টার কমতি রাখছে না প্যারিস সেন্ট জার্মেই। কাতারের রাজপুত্রে বলীয়ান হয়ে নাসির আল খেলাইফি প্রতি বছর কাড়ি কড়ি অর্থ ঢালছেন শুধুমাত্র দলকে ইউরোপের সেরা দেখার জন্য। মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরো যে খরচ করা যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে পিএসজি। কিন্তু গাদা গাদা খেলোয়াড় এনে, কোচ বদল করে, দলের খোলনলচে বদলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের অধরা সাফল্য লাভ করতে পারেনি ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
কাতারের অর্থে বলিষ্ঠ হয়ে সেই কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তই দৌড় পিএসজির। গত দুই মৌসুমে তো সেটাও করতে পারেনি তারা। এই মৌসুমে গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোতে হাজির হয়েছে পিএসজি। কিন্তু সামনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বাধা। দুই দলের বর্তমান শক্তি মেলাতে গেলে পিএসজিই হয়তো এগিয়ে থাকবে। কিন্তু ইউনাইটেডের সবচেয়ে বড় শক্তি ইতিহাস। সে বাধা পেরোতে এই শীতকালীন দলবদলেও টাকার বস্তা নিয়ে নামতে হবে তাদের।
মৌসুমের শুরু থেকেই খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে পিএসজি। নিজেদের লিগ নিয়ে তো চিন্তার কিছু নেই, ফ্রেঞ্চ লিগে প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার মতো একমাত্র দল মোনাকোর দুঃসময় চলছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল লিলের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে আছে পিএসজি। লিগ শিরোপা জেতা গত কয়েক বছর ধরে তাদের কাছে ডালভাত। তাদের মূল লক্ষ্য ইউরোপে চমক জাগানো। কিন্তু গ্রুপ পর্বেই বেশ বড় ঝামেলায় পড়েছিল তারা। শেষ ম্যাচে গোল বন্যা বইয়ে দিয়ে গ্রুপের শীর্ষে থেকেই দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাদের মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। মরিনহোর ভাঙাচোরা ইউনাইটেড না, সুলশ্যারের ইউনাইটেড। এ পরীক্ষা পার হতে হলে বেশ কয়েকটা জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে পিএসজি কোচ থমাস টুখেলের।
গোল বারের নিচে ভরসা হিসেবে আছেন জিয়ানলুইজি বুফন আর আলফোন্সো আরিওলা। বয়স বাড়লেও খেলার ধার কমেনি বুফনের, আর নিজের দিনে আরিওলা অভেদ্য। রক্ষণে থিয়াগো সিলভা আর মারকিনহোস দাঁড়িয়ে গেলে খুব কম আক্রমণভাগের সাধ্য আছে তা ভেদ করে গোল দেওয়ার। দুপাশে দুই ফুলব্যাক হিসেবে আছেন দানি আলভেস ও হুয়ান বার্নেট। বয়সে ভার খেলায় কিছুটা পরলেও এখনো দুর্দান্ত দানি আলভেস। তবে হুট-হাট ভুল করে ফেলবার প্রবণতা এখনো লক্ষণীয়। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে মুনিয়ের ও কুরজায়াও প্রমাণিত।
দলটির সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি মাঝমাঠে। মাঝমাঠে ভরসা করবার মতো বড় নাম ভেরাত্তি ছাড়া কেউ নেই। জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার কোচের মন জোগাতে পারছেন না। আর আদ্রিয়ান রাবিওত বার্সেলোনা যাওয়ার পণ করেছেন। কাতালুনিয়ায় যাওয়ার জন্য উতলা রাবিওতকে ধরে রাখলে নিজেদেরই সমস্যা পিএসজির। বয়স্ক লাসানা দিয়ারার ওপর বড় ম্যাচে ভরসা করা যায় না, গতবার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই বোঝা গেছে। সৃষ্টিশীল একজন মিডফিল্ডার খুব করেই দরকার তাদের। এবারও নাপোলি, লিভারপুল ম্যাচে বারবারই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিল পিএসজি। সেসব ম্যাচে নেইমার, এমবাপ্পে, কাভানিতে ভর করে জয় নিয়ে ফিরেছে তারা। তবে বড় ম্যাচে সব সময় আক্রমণভাগ জেতাবে না। এ জন্য প্রয়োজন মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ। মাঝমাঠের তারকাদের দিকেই নজর পিএসজির।
মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এফএফপি। ইচ্ছেমতো টাকা খরচের অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছে তারা। ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নীতি ভঙ্গের অভিযোগ পিএসজির বিপক্ষে। নিয়ম না ভাঙতে চাইলে এই দলবদলের মৌসুমেই ১৭০ মিলিয়ন ইউরো আদায় করতে হবে, খেলোয়াড় বিক্রি বা অন্য কোনো পথে। নয়তো শাস্তি হিসেবে কয়েক মৌসুমের জন্য দলবদলের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হবে তারা, চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও।
ইউরোপে রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখা পিএসজি ১৭০ মিলিয়নের জন্য নেইমার বা এমবাপ্পের একজনকে বিক্রি করতে চাইবে না। আবার দলে ভালো মিডফিল্ডারও আনতে হবে। আয়াক্সের ফ্র্যাঙ্ক ডি ইয়ংকে কেনার লক্ষ্য আছে তাদের কিন্তু মাঝ মৌসুমে তাঁকে বিক্রি করবে না আয়াক্স। তাই রাবিওতকে বার্সেলোনার কাছে বিক্রি করে,তাদের কাছ থেকে ডেনিস সুয়ারেজকে কেনার চিন্তাটা খেলা করছে পিএসজি বোর্ডের মাথায়। না হলে চেলসির সেস্ক ফ্যাব্রিগাসকেও নজরে রাখছে তারা। সারির অধীনে আড়ালে চলে যাওয়া এই স্প্যানিশকে রাবিওতের বদলে কিংবা ছয় মাসের জন্য ধারে দলে টানতে পারে পিএসজি।
নিজেদের দিনে বর্তমানের সবচেয়ে ভালো আক্রমণভাগ পিএসজির। নেইমার-এমবাপ্পে-কাভানি যেকোনো রক্ষণকে ভেঙে দিতে সক্ষম। কিন্তু তাদের গড়পড়তা দিনেও ম্যাচ বের করে আনতে কাজ চালানো মধ্যমাঠ দরকার পিএসজির। এফএফপির কড়া দৃষ্টির সামনে এবারের দলবদলে পিএসজি কীভাবে তাদের মাঝমাঠ গুছিয়ে আনবে, সেটা দেখার কৌতূহল থাকছেই।