অনেক দিন ধরেই ব্রাজিলীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন নেইমার। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। কিন্তু নেইমার কি আসলেই প্রত্যাশার সঙ্গে ব্রাজিলীয়দের প্রাপ্তি মিলিয়ে দিতে পেরেছেন! সে নিয়ে কথা হতেই পারে। তবে হালে যে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তাঁকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন, সে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। নানা কারণেই নেইমারের আগের সেই দ্যুতি এখন নেই। ভিনিসিয়ুস খুব শিগগির ব্রাজিল দলে নেইমারের জায়গাটা নিয়ে নেবেন কি না, এমন ফিসফাসের মধ্যেই নেইমার নিজেই বড় একটা সনদ দিলেন তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থকে। তিনি বলেই দিয়েছেন, এ মুহূর্তে বিশ্বে সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে নন, ভিনিসিয়ুসই।
এমবাপ্পে তাঁর ক্লাব সতীর্থ, ভিনিসিয়ুস তাঁর জাতীয় দলের। ভিনিসিয়ুস এবার রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মৌসুমটা দুর্দান্ত গেছে। তাঁর গোলেই লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে রিয়াল। লা লিগার শিরোপা জয়েও ব্রাজিলীয় তারকার বড় অবদান। তবে মৌসুমের শুরুতে অতটা নজর কাড়তে পারেননি ভিনিসিয়ুস। মৌসুম যত গড়িয়েছে, ততই ক্ষুরধার হয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের নায়ক হয়েছেন শেষ পর্যন্ত।
তবে নেইমারের মুখে এমবাপ্পের চেয়ে ভিনিসিয়ুসকে এগিয়ে রাখাটা একটু খটকার মতোই শোনাবে। এমবাপ্পে কয়েক বছর ধরেই নিজের নাম মেসি, রোনালদোদের সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিছুদিন আগে এমবাপ্পেকে নিয়ে রিয়াল আর পিএসজির দড়ি–টানাটানিটা ফুটবল–বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। পিএসজি তো ফরাসি তারকাকে দলে ধরে রাখার জন্য রীতিমতো ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ই দিয়ে দিয়েছে। সেটির বিনিময়েই শেষ পর্যন্ত রিয়ালে না গিয়ে পিএসজিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমবাপ্পে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে নিয়েই তো এমন কিছু হবে!
ভিনিসিয়ুস এ মৌসুমে রিয়ালের জার্সিতে ২২ গোল করেছেন। ২০টিতে আছে তাঁর সহায়তা। এমবাপ্পে অবশ্য পারফরম্যান্সে ভিনিসিয়ুসের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। ৩৯ গোল তাঁর। ২৬টি সহায়তা। কেবল তা-ই নয়, ভিনিসিয়ুসের আরেক সতীর্থ করিম বেনজেমা তো ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। মৌসুমে অসাধারণ গোল স্কোরিং ক্ষমতা দেখিয়ে ৪৪ গোল করেছেন তিনি। কিন্তু নেইমারের চোখে ভিনিসিয়ুসই কেন বিশ্বের সেরা!
সেটির কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেইমার দেননি। কেবল বলেছেন, তাঁর মনে হয়েছে এমবাপ্পের চেয়ে ভিনিসিয়ুসই এগিয়ে, ‘এমবাপ্পে দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়েছে। বেনজেমাও দুর্দান্ত। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে ভিনিসিয়ুসই বিশ্বের সেরা ফুটবলার।’
এমবাপ্পেকে নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে পিএসজিতে নেইমারের ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ব্রাজিলীয় তারকাকে পিএসজি ছেড়ে দেবে, এমন গুঞ্জনই উঠেছে। তবে নেইমার নিজে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পিএসজিতেই থাকতে চান। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চান এবং সেটি পিএসজির হয়েই। ক্যানাল প্লাসকে তিনি বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য সব সময়ই এক। সম্ভব প্রতিটি শিরোপা জেতা। এখন আমার লক্ষ্য বিশ্বকাপ ও আগামী চ্যাম্পিয়নস লিগ। এটা অবশ্যই পিএসজির হয়েই। আমার এখনো পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আছে। সুতরাং আমার সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
পিএসজিতে থেকে যাওয়াটা এমবাপ্পের জন্য ভালো হয়েছে বলেই মনে করেন নেইমার, ‘এমবাপ্পের ক্যারিয়ারের জন্য এটা ভালো হয়েছে। ক্যারিয়ারের স্বার্থেই আরও কয়েক মৌসুম ওর পিএসজিতে থেকে যাওয়া উচিত। পিএসজির হয়ে তাঁর চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার চেষ্টা করা উচিত। এমবাপ্পে পিএসজিতে থেকে যাওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি।’