নেইমারের বিপক্ষে খেলা স্ট্রাইকার আবাহনীকে হতাশা উপহার দিলেন

বাংলাদেশ পুলিশ দলের হয়ে আজ ঢাকার ফুটবলে অভিষেক ঘটল কোকুর (২৯ নম্বর জার্সি)।
ছবি: বাফুফে

দিনটা মোটেও ভালো কাটল না আবাহনীর। দুপুরে একদফা দুঃসংবাদ পেয়েছে এএফসি থেকে। লকডাউন, ভ্রমণনিষেধাজ্ঞায় এবারের এএফসি কাপের প্লে-অফে খেলা হচ্ছে না আবাহনীর। টুর্নামেন্ট থেকে আবাহনীকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)।

এমন খারাপ খবর শুনেই সন্ধ্যায় প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নেমেছিল আবাহনী। সেখানেও হতাশা। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবাহনীকে রুখে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। দু–দুবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে তারা।

আরও স্পষ্ট করে বললে আবাহনীকে হতাশা উপহার দিয়েছেন পুলিশের নতুন খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান ইয়াও কোকু। জুয়েল রানা ও সানডে সিজোবার গোলে দুবার আবাহনী এগিয়ে গেলেও দুবারই গোল শোধ করেছেন ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় লিগ আঁ খেলে আসা কোকু।

মধ্যবর্তী দলবদলে এবার পুলিশের হয়ে নাম লিখিয়েছেন কোকু। আইভরিকোস্টের এ ফরোয়ার্ড এর আগে খেলেছেন ফ্রান্সের কাঁ ও নিমের মতো ক্লাবে। লিগ আঁ–তে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পেদের বিপক্ষেও খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার।

২০১৫–১৬ মৌসুম কাঁ–তে খেলার পর ২০১৭–১৮ মৌসুমে নিমে যোগ দেন ৩০ বছর বয়সী এ ফুটবলার। সে মৌসুমেই বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার। বেলজিয়ামের ক্লাব আন্ডারলেখট অনূর্ধ্ব–১৯ দলেও খেলা কোকু স্মরণীয় করে রাখলেন ঢাকার ফুটবলে অভিষেক।

আবাহনী এগিয়ে গেলেও পরে সমতায় ফিরেছে পুলিশ।

লিগের প্রথম পর্বে পুলিশের বিপক্ষে জিততে বেশ ঘাম ঝরেছিল আবাহনীর। ৮৫ মিনিটে কারভেন্স বেলফোর্টের একমাত্র গোলে সেদিন জেতে আবাহনী। কিন্তু আজ আবাহনীকে জয়বঞ্চিত রাখল পুলিশ। প্রথম পর্বেও আবাহনীর ফরোয়ার্ডরা সেভাবে গোলের দেখা পাননি।

চোটজর্জর আবাহনীর এমন অবস্থা যে একাদশ খুঁজতেই ঘাম ছুটে যায় কোচ মারিও লেমোসের। দলের অন্যতম বড় ভরসা স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজ জীবন চোটে পড়ে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে।

ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফ্রান্সেসকো তোরেসও দলের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তেমন। তাঁকে দিয়ে গোলের তৃষ্ণা মেটেনি বলেই মধ্যবর্তী দলবদলে তোরেসকে বাদ দিয়েছে আবাহনী। উড়িয়ে আনা হয়েছে পুরোনো ভরসা সানডে সিজোবাকে।

নাইজেরিয়ান এই স্ট্রাইকার তো গত বছর করোনার কারণে লিগ বাতিল হওয়ার পর আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই ছিলেন না। হঠাৎ করে ফিরে আজ প্রথমার্ধে চেষ্টা করেছেন দলকে জয় উপহার দিতে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আর সেভাবে খুঁজে পাওয়া গেল না সানডেকে।

প্রথমার্ধে আক্রমণের পর আক্রমণ সাজিয়েছে আবাহনী। কিন্তু ধারার বিপরীতে হঠাৎ করেই ২৮ মিনিটে দারুণ একটা গোলের সুযোগ পেয়ে যান পুলিশের কোকু। দুর্বল ফিনিশিংয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পায় আবাহনী। এরপর ৩৪ মিনিটে আবাহনীকে গোল এনে দেন জুয়েল রানা। ডান প্রান্ত দিয়ে রাফায়েল আগুস্তো বক্সে ঢুকে বল বাড়িয়ে দেন জুয়েল রানাকে। অরক্ষিত জুয়েল দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে করেন ১-০।

গোল শোধে খুব বেশি দেরি করেনি পুলিশ। ৩৯ মিনিটে মিডফিল্ডার ফ্রেডরিক পুডার হেড থেকে পাওয়া বল বুক দিয়ে রিসিভ করে দারুণ দক্ষতায় গোল করেন কোকু। তবে ৪২ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় আবাহনী। এবার কারভেন্স বেলফোর্ট আর সানডের যুগলবন্দী। বেলফোর্ট হেডে বল নামিয়ে সামনে দাঁড়ানো সানডেকে দিলে প্লেসিংয়ে করেন আবাহনীর দ্বিতীয় গোল।

পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি পুলিশ। বরং বারবার আক্রমণে উঠেছে পুলিশের ফরোয়ার্ডরা। ৫৯ মিনিটে কোকুর দ্বিতীয় গোলটা সেই আক্রমণেরই ফসল। লান্সিন তোরের দূরপাল্লার এক শট বাঁ প্রান্তে থাকা জমির উদ্দিন রিসিভ করেন।

নিজে গোল না করে কোকুকে বাড়িয়ে দেন বলটি। আবাহনীর চার ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে অসাধারণ প্লেসিং শটে কোকু করেন সমতাসূচক গোল। আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম গোলের পর অসহায়ের মতো চেয়ে রইলেন।

পুলিশের রক্ষণে আবাহনী আক্রমণ করেও পরে আর এগিয়ে যেতে পারেনি।

বাকি সময় আবাহনী চেষ্টা করেও গোলের দেখা পায়নি। অবশ্য দুর্ভাগ্য আবাহনীর, ৭০ মিনিটে মাসিহ সাইঘানির ফ্রি–কিকটি সাইড পোস্টে লেগে ফেরে! ম্যাচ শেষের মিনিটখানেক আগে ফ্রেডরিকের দুর্দান্ত শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক শহীদুল। এই ড্রয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই থেকে আরও ছিটকে পড়ল আবাহনী।

১৩ ম্যাচে ৭ জয়, ৫ ড্র, ১ হারে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনেই রইল। সমান ম্যাচে ৩ জয়, ৪ ড্র ও ৬ হারে ৯ পয়েন্ট নিয়ে দশে পুলিশ।