এমবাপ্পে-কাভানিদের জন্য ভয়ংকর হতাশার এক ম্যাচ ছিল সেটা।
এমবাপ্পে-কাভানিদের জন্য ভয়ংকর হতাশার এক ম্যাচ ছিল সেটা।

নেইমারদের হতাশ করার সে ম্যাচ এখনো ঘুমাতে দেয় না তাঁকে

৪২ বছর বয়সেও দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন জিয়ানলুইজি বুফন। জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের জার্সিতেও এখনো নিয়মিত দেখা যায় তাঁকে। ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য প্রায় সব শিরোপাই জিতেছেন। অনেকেরই স্বপ্ন থেকে যাওয়া বিশ্বকাপের দেখাও মিলেছে ইতালির হয়ে। কিন্তু একটি ট্রফি বারবার তাঁকে ফাঁকি দিয়েছে। রোনালদো নাজারিওর মতোই বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারে বুফনের অতৃপ্তি বলতে চ্যাম্পিয়নস লিগ।

তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেও শিরোপা জেতা হয়নি বুফনের। একবার পেনাল্টি ভাগ্য তাঁর পক্ষে ছিল না। পরের দুবার প্রজন্মের সেরা দুই তারকা তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে হতাশার কথা কখনোই লুকাননি বুফন। তবে এ ফাইনালগুলো নয়, তাঁর জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য এক ম্যাচ। যে ম্যাচ নিয়ে এখনো দুঃস্বপ্ন দেখেন বুফনের মতো গোলরক্ষক!

সে ম্যাচ নিয়ে এখনো হতাশা আছে বুফনের।  

দুই দশক ধরে জুভেন্টাসের গোলবারে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। মাঝে এক বছরের জন্য একটু ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন। একদিকে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে টানা দুই বছর জুভেন্টাসকে হতাশ করে ২০১৮ সালে সেই ক্লাবেই যোগ দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর সেবারই কিনা পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন বুফন। আর দুঃস্বপ্নটা সেবারই জোগাড় করেছিলেন এই গোলরক্ষক।

সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর শুরুটা দারুণ করেছিল পিএসজি। প্রথম লেগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে খেলতে যাওয়া পিএসজি ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছিল। চোটের কারণে নেইমার ছিলেন না। তবু নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগ বলে হয়তো কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভাবতেও শুরু করেছিল দলটি। কিন্তু ঘরের মাঠে সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। উলে গুনার সুলশারের চাকরি পাকা করে দেওয়া সে ম্যাচে মার্কাস রাশফোর্ডের দ্যুতিতে শেষ মুহূর্তের গোল ছিটকে দিয়েছিল পিএসজিকে। ৩-১ গোলের সে ম্যাচে যোগ করা সময়ের পেনাল্টি নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। তবে ম্যাচটায় ইউনাইটেডের আশা বাঁচিয়ে রাখার দায় বুফনের।

দ্বিতীয় মিনিটেই ইউনাইটেডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রোমেলু লুকাকু। আর সে গোলটা হয়েছিল বুফনের ভুলে। লেকিপের সঙ্গে কথোপকথনে সে গোল নিয়ে নিজের হতাশার কথা জানিয়েছেন বুফন, ‘প্রতি সপ্তাহেই তিন বা চারবার এ ম্যাচ নিয়ে ভাবি আমি। এখনো অনুশোচনা জাগায় সে ম্যাচ। আমি নিশ্চিত সে বছর আমরা ফাইনালে খেলতাম। ম্যানচেস্টারে আমরা দারুণ শক্তি দেখিয়ে বড় এক ম্যাচ জিতেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব বাজে এক ভুল করেছি আমি, এর জন্য আমিই দায়ী। যে পরিমাণ অভিজ্ঞতা আমার, এমন ভুল করা ঠিক হয়নি।’

সেদিন লুকাকুর প্রথম গোলে ছিল বুফনের অবদান।

সে ম্যাচের আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি ইউনাইটেডের বিপক্ষে পিএসজি হারতে পারে। মৌসুমের প্রথমার্ধে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে জানুয়ারির আগেই ছাঁটাই হয়েছিলেন জোসে মরিনিও। আর পিএসজির মাঠের সে ম্যাচের আগে দলটির অনেকেই ছিলেন চোটাক্রান্ত। একাডেমির খেলোয়াড় নিয়ে স্কোয়াড সাজাতে হয়েছিল সুলশারকে। এমন এক ম্যাচ নিয়ে তাই বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেনন বুফনরা, ‘আমরা ভেবেছিলাম এ ম্যাচ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা এবং এ ভাবনাতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। প্রথম লেগ ২-০ গোলে জেতায় ভেবেছি এ ম্যাচের মূল্য একদম কমে গেছে। ওদের মাত্র দুজন খেলোয়াড় ছিল, সে সঙ্গে ৯ জন তরুণ নিয়ে নেমেছিল।’

বুফনের এক ভুলে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়েছিল পিএসজি। গত মৌসুমে আবার জুভেন্টাসে ফিরেছেন বুফন। আর পিএসজিও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে। নেইমার-এমবাপ্পেদের একদিন এ শিরোপা জিততে দেখার ভালো সম্ভাবনা দেখেন বুফন, ‘পিএসজির কোনো কিছুতে কোনো ঘাটতি নেই। ওরা দারুণ এক দল, যারা যে কারও বিপক্ষে জিততে পারে। ওদের মতো খুব কম দল আছে, যারা যে কাউকে হারাতে পারে। যদি কোনো দুর্বলতা ছিল, সেটা হলো কোনো কিছুকে স্থায়ী ভেবে বসা। কিন্তু লিওনার্দো (ক্রীড়া পরিচালক), যিনি ইতালিয়ান সংস্কৃতি মানেন, তাঁর আবির্ভাব এ ঘাটতিটাও দূর করেছে।’