হোসে মরিনহো ফুটবলের বর্ণিল কিছু চরিত্রের একটি। তাঁর নেতিবাচক ফুটবল যেমন বিরক্তি জাগায় আবার তাঁর শিরোপা জেতার প্রবণতা ক্লাবের কর্মকর্তাদের আগ্রহ বাড়ায়। আর প্রতি মুহূর্তে কথা বার্তা, আচরণে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা তো আছেই। তবে দলের জন্য তাঁর নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না কখনোই। জয়ের জন্য নিয়ম নীতির সুক্ষ সীমারেখা অতিক্রম করতে তাঁর বাধেনি কখনো। তেমন এক কাজ করতে গিয়ে আরেকটুর জন্য মরতেই বসেছিলেন মরিনহো।
২০০৫ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ খেলছিল চেলসি। শেষ ষোলোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে রেফারির দোষ বের করতে গিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মরিনহো। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ম্যাচে ড্রেসিংরুমে কোচ ছাড়া চলবে কীভাবে। তাই সবাই সন্দেহ করেছিল, মরিনহো কোনো না কোনোভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেনই। বিশেষ করে ৬ এপ্রিলের সে ম্যাচে চেলসি যেভাবে ৪-২ ব্যবধানে জিতেছিল। অনেকেই সন্দেহ করেছিল চেলসির ফিটনেস কোচ রুই ফারিয়া টুপির নিচে ইয়ারপিস (ক্ষুদ্রাকৃতির হেডফোন) ব্যবহার করে মরিনহোর কাছ থেকে কৌশল শুনে নিচ্ছিলেন।
তবে মূল সন্দেহ জাগিয়েছিল গোলরক্ষক কোচ সিলভিনো লওরোর আচরণ। ড্রেসিংরুমে থেকে কিছু কাগজ নিয়ে ফিরে এসেছিলেন লওরো। যে তিনজন খেলোয়াড়কে বদলি নামানো হয়েছিল, তিনজনের নামই সে কাগজে ছিল। দুই বছর পর স্পোর্টসমেইলের শীর্ষ প্রতিবেদক ম্যাট লটন জানিয়েছিলেন, ড্রেসিংরুমের ময়লা কাপড়ের ঝুড়িতে লুকিয়ে ছিলেন মরিনহো। এত দিন পর এসে পর্তুগিজ কোচও স্বীকার করলেন সেটা, ‘আমার খেলোয়াড়দের সঙ্গে থাকা জরুরি ছিল এবং হ্যাঁ, আমি সেটাই করেছি। আমি সাধারণত দিনের বেলায় ড্রেসিং রুমে যেতাম। ম্যাচটা সন্ধ্যা সাতটায় ছিল। আমি তাই দুপুরেই চলে গিয়েছিলাম। খেলোয়াড়রা যখন ড্রেসিংরুমে আসবে, তখন আমি থাকতে চেয়েছিলাম। আমি গেলাম এবং কেউ (বাইরের) আমাকে দেখেনি।’
তাঁর এ বুদ্ধি যে কাজে লেগেছিল সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে ম্যাচের স্কোরলাইনে। কিন্তু নিজের বুদ্ধিতে নিজেই মরতে বসেছিলেন মরিনহো, ‘সমস্যা হয়েছে বের হওয়ার। ওই সময় তো কারও না কারও চোখে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা। তো ক্লাবের কিট ম্যান আমাকে কাপড়ের ঝুড়িতে লুকিয়ে রেখে বের করল। আমি যেন নিশ্বাস নিতে পারি সে জন্য একটু খুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ড্রেসিংরুম থেকে বের করার সময় উয়েফার লোকজন তাকে অনুসরণ করতে শুরু করল। উয়েফা আমাকে খুঁজে বের করতে মরিয়া ছিল, তাই সে উপায় না দেখে ঝুড়ির মুখ বন্ধ করে দিল। আমি নিশ্বাস নিতেই পারছিলাম না। অবশেষে সে যখন মুখ খুলল, ততক্ষণে আমি প্রায় মরতে বসেছিলাম!’