>চোট তাঁর পিছুই ছাড়ছে না। সেটি জয় করে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিবর্ণ নেইমার আজ কোস্টারিকার বিপক্ষে জ্বলে উঠবেন?
‘ভালোভাবে অনুশীলন করেছি। স্বছন্দই লেগেছে। পা ঠিক আছে।’
ছোট্ট কয়েকটি কথা। কিন্তু ২০ কোটির বেশি ব্রাজিলিয়ান, এর বাইরে ব্রাজিলের আরও শতকোটি ভক্তের জন্য এতেই আছে বড় আশার জোগান। বুঝতেই পারছেন কথাগুলো কার। নেইমার, আর কে!
ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ চলছে ব্রাজিলিয়ান যুবরাজের। কিন্তু চোটই যা ঝামেলা বাধাচ্ছে। বিশ্বকাপ এলেই যেন ‘হ্যালো, নেইমার’
বলে উদাত্ত আহ্বান নিয়ে এগিয়ে আসে চোট। ব্রাজিলেই গত বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার হুয়ান জুনিগার ট্যাকলে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় নেইমার কাতরাচ্ছেন—দৃশ্যটা এখনো হয়তো দুঃস্বপ্ন হয়ে রাতের ঘুম ভাঙিয়ে দেয় ব্রাজিলিয়ানদের। আর এবার তো বিশ্বকাপের জন্যও অপেক্ষা করেনি চোট, তিন মাস আগেই দিয়েছে হানা।
সেটি থেকে সেরে উঠে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় যখন নেইমার মাঠের পাশাপাশি সমর্থকদের আশায় আলো ছড়াচ্ছিলেন, তখন দ্বিতীয় আঘাত চোটের। এবার সুইস খেলোয়াড়দের নির্বিচার ট্যাকলের মাধ্যমে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ম্যাচে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়ের ওপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফাউলের শিকার নেইমার ব্যথা পেয়েছেন অ্যাঙ্কেলে। গত রোববারের সেই ম্যাচের পরের দিন অনুশীলনই করেননি। মঙ্গলবার অনুশীলন ছেড়ে উঠে গেছেন ১৫ মিনিট পর। পরশু বুধবার ফিরেছেন অনুশীলনে।
কিন্তু বদ্ধ দুয়ার সেই অনুশীলন জানতে দেয়নি, অনুশীলনে কতক্ষণ ছিলেন নেইমার। পুরো সময়টাই ছিলেন? ছন্দে ছিলেন?...প্রশ্ন অনেক। উত্তরের আকাঙ্ক্ষা কিছুটা মেটাতে পারে ইএসপিএনের প্রতিবেদন। যাতে লেখা, ব্রাজিলের মূল দলের খেলোয়াড়েরা যে সবুজ হাতকাটা জামা পরে ছিলেন, নেইমারও সেটি পরেই মূল একাদশের হয়ে খেলেছেন অনুশীলনে। যদিও যে অ্যাঙ্কেলে চোট, সেই ডান পায়ের বুটের নিচে নীল ব্যান্ডেজ বাঁধা দেখা গেছে। ব্যান্ডেজ তো নয়, সাক্ষাৎ শঙ্কার উপকরণ! তবে শঙ্কা ছাপিয়ে আজ নেইমার খেলছেন, সেটা কাল সংবাদ সম্মেলনে কোচ তিতেই নিশ্চিত করেছেন। সুইজারল্যান্ড ম্যাচের ব্রাজিলের একাদশও অপরিবর্তিতই থাকছে।
তা নেইমার ফিরছেন আশার বারতা নিয়েই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ড্র একটু অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছে ব্রাজিলকে, আজ জয় ছাড়া অন্য যেকোনো ফল ব্রাজিলকে ফেলে দেবে গ্রুপপর্বেই বাদ পড়ার শঙ্কায়। একটা বাজে রেকর্ডও ছোঁয়া হয়ে যাবে। আজ জয় না পেলে বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে জয়হীন থাকবে ব্রাজিল, ছুঁয়ে ফেলবে নিজেদের ইতিহাসে বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়হীন থাকার রেকর্ড (১৯৭৪ ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপ মিলিয়ে)। নেইমারের কথায় অবশ্য তেমন কিছু না হওয়ারই প্রতিশ্রুতি। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভালো খেলতে চাই। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে যেমন খেলেছি, তার চেয়ে ভালো খেলে জিততে চাই।’
ফুটবল ম্যাচ যদি মাইক্রোসফট অফিসের কোনো প্রোগ্রাম হতো, তবে বলা যেত কোস্টারিকা আজ সুইজারল্যান্ডের পরিকল্পনাই কপি-পেস্ট করবে। কোস্টারিকার মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক ব্রায়ান রুইজই বলছিলেন, সুইজারল্যান্ডের মতো করে ব্রাজিলকে মিডফিল্ডেই আটকে দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁদের। তবে ব্রাজিলের ভয় নেই! নেইমারও এদিক থেকে জানিয়ে রেখেছেন, ‘কোস্টারিকার খেলার ফুটেজ আমরা দেখেছি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের ফুটবলটা খেলা।’
নেইমারের নিজের ফুটবলটা খেলাও তো গুরুত্বপূর্ণ। চোট থেকে ফেরার কারণেই হোক, বা নিজেকে প্রমাণের তাগিদ থেকে...সুইজারল্যান্ড ম্যাচে নেইমার ‘নেইমার’ ছিলেন না। দেখে মনে হচ্ছিল, দারুণ কিছু করার চেষ্টায় নেইমার এত বেশিই মগ্ন যে দলের অন্যরা কে কোথায়, সেদিকে তাঁর খেয়ালই নেই। ইংলিশ দৈনিক গার্ডিয়ান-এ লেখা কলামে সাবেক ফ্রান্স ডিফেন্ডার মার্সেল দেসাই সেই ম্যাচের নেইমারের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের নিখুঁত ব্যাখ্যাই দিয়েছেন, ‘নেইমারকে দেখে মনে হয়েছে, ও নিজের জন্যই খেলছে। যখনই ওর কাছে বল এসেছে, খেলাটার গতি কমিয়ে দিয়েছে ও। সেটা ঠিক কি বেঠিক হচ্ছে, ভাবেনি। ও ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হতে পারে, কিন্তু তাকে ভাবতে হবে দল নিয়ে।’
কী করা উচিত নেইমারের, সেটিও বলে দিয়েছেন, ‘সতীর্থদের কথা ভাবা উচিত ওর, মিলেমিশে খেলা উচিত। ওয়ান-টু, ত্রিভুজ পাস খেলে এগিয়ে যাওয়া...। বাঁ পাশে মার্সেলো ও কুতিনহোকে নিয়ে একবারই সেটা করেছে ও, ব্রাজিলের গোলটাও তখনই এসেছে।’ এমন মুহূর্তের ঝলকগুলো আজ তো বটেই, বাকি টুর্নামেন্টেও বারবার দেখতে চাইবে ব্রাজিল।
ব্রাজিল ব্রাজিলের মতো খেলতে পারলে কোস্টারিকাও হয়তো তেমন বড় পরীক্ষা হবে না। তবে সে জন্য নেইমারকেও তো নেইমারের মতো খেলতে হবে।