>চেলসির বিপক্ষে গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতে লন্ডনে গিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ। লন্ডনের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে খেলতে এলেই যে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা দল হয়ে যায়, সেটাই আরেকবার প্রমাণ করল জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। চেলসিকে তাদের মাঠেই ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বায়ার্ন
নিজেদের শহর বলে মিউনিখের প্রতি আলাদা একটা দরদ কাজ করার কথা বায়ার্নের খেলোয়াড়দের। কিন্তু মিউনিখের বাইরে প্রিয় শহর? টমাস মুলার-রবার্ট লেভালডফস্কিরা লন্ডনের নাম করলে আশ্চর্যের কিছুই থাকবে না! ইংল্যান্ডের রাজধানীর ও রাজধানীর ক্লাবগুলোর প্রতি বায়ার্নের ‘ভালোবাসা’ এতটাই বেশি!
ঠিক কেমন ভালোবাসা? একটু খোলাসা করে বলা যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতে এর আগে বায়ার্ন যখনই লন্ডনি কোনো ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছে, অধিকাংশ সময়ে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়েছে প্রতিপক্ষকে। এর আগে আর্সেনাল ও টটেনহাম হটস্পারের ‘অভিজ্ঞতা’ হয়েছিল বায়ার্নের রোষানলে পড়ার, এবার সে অভিজ্ঞতা হলো চেলসিরও। নিজেদের মাঠে বায়ার্নের কাছে গত রাতে ৩-০ গোলে হেরে বসেছে তাঁরা। ফলে পরের রাউন্ডে ওঠার স্বপ্নটা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল লন্ডনের ক্লাবটার।
এবার গ্রুপ পর্বেই বায়ার্নের শক্তি দেখেছে টটেনহাম। টটেনহামের মাঠ টটেনহাম হটস্পার স্টেডিয়ামে গিয়ে এবার ৭-২ গোলে লন্ডনের ক্লাবটাকে বিধ্বস্ত করে এসেছিল বায়ার্ন। চারটা গোল করেছিলেন জার্মান উইঙ্গার সার্জ গেন্যাব্রি, দুটি গোল ছিল রবার্ট লেভানডফস্কি। আর একটা জোশুয়া কিমিখের। নিজেদের মাঠে ফিরতি লেগেও ৩-১ গোলে জিতেছিল বায়ার্ন। গোল করেছিলেন কিংসলে কোমান, ফিলিপ কুতিনহো ও টমাস মুলার।
শুধু তাই নয়। ২০১৬-১৭ মৌসুমের দ্বিতীয় রাউন্ডে লন্ডনের আরেক ক্লাব আর্সেনালকে পেয়েছিল বায়ার্ন। দুই লেগ মিলিয়ে ১০ গোল দিয়েছিল জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। প্রথম, দ্বিতীয় দুই লেগেই ৫-১ ব্যবধানে জিতেছিল বায়ার্ন। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে গোল করেছিলেন থিয়াগো আলকানতারা (২টি), আরিয়ান রোবেন, টমাস মুলার ও রবার্ট লেভানডফস্কি। দ্বিতীয় লেগে গোল করেছিলেন লেভানডফস্কি, আর্তুরো ভিদাল (২টি), ডগলাস কস্তা ও রোবেন। এর আগের মৌসুমেও আর্সেনালকে নিজেদের মাঠে ৫-১ গোলে হারিয়েছিল বায়ার্ন। সে ম্যাচে গোল করেছিলেন লেভানডফস্কি, মুলার (২টি), ডেভিড আলাবা ও রোবেন।
লন্ডনের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে নিজেদের দুর্ধর্ষ ফর্মটাই গত রাতে ফিরিয়ে এনেছিল বায়ার্ন। প্রথমার্ধে সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই হলেও দ্বিতীয়ার্ধে বায়ার্নকে আর আটকে রাখতে পারেনি চেলসি। ৫০ থেকে ৫৩—এই তিন মিনিটের ঝড়ে চেলসিকে ২-০ গোলে পিছিয়ে দেন গেন্যাব্রি। এর আগে লন্ডন সফরে এসে টটেনহামের বিপক্ষে একাই চার গোল করেছিলেন সাবেক এই আর্সেনাল তারকা। চেলসির মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতে এসে গেন্যাব্রির মতো জোড়া গোল করেছিলেন আরও চারজন। সর্বশেষ করেছিলেন বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহো। রোনালদিনহোকেই যেন মনে করিয়ে দিলেন এই তরুণ!
এর আগে আর্সেনালের হয়ে লন্ডনে নয় ম্যাচ খেলে একটা গোলও করতে পারেননি তিনি। প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না—এই দোষ দিয়ে আর্সেনাল প্রথমে ওয়েস্ট ব্রম ও পরে ভেরডার ব্রেমেনের কাছে বিক্রি করে দেয় এই উঠতি জার্মান তারকাকে। এখন নিজেদের সিদ্ধান্তে কপাল চাপড়াতেই পারেন আর্সেনাল বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা!
অথচ ম্যাচের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছিল রবার্ট লেভানডফস্কিকে নিয়ে। এই ম্যাচের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বে ৬ ম্যাচ খেলে ১০ গোল করেছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর দিকে বাড়তি নজর ছিল চেলসির। কিন্তু এদিন গোল করার চেয়ে করানোর দিকেই বেশি নজর দিলেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার। গেন্যাব্রির দুটি গোলই তাঁর বানিয়ে দেওয়া। পরে অবশ্য নিজেও একটি গোল করেছেন। ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে নিজেদের হতাশা আরও বাড়িয়েছেন চেলসির ডিফেন্ডার মার্কোস আলোনসো।
পরের রাউন্ডে উঠতে চাইলে পরের লেগে বায়ার্নের মাটিতে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে চেলসিকে। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের তরুণ দল কি সেই কাজটা করতে পারবে?