মেসির সমালোচনা করেছেন বার্সার সাবেক সভাপতি গাসপার্ত
মেসির সমালোচনা করেছেন বার্সার সাবেক সভাপতি গাসপার্ত

নাটক করছেন মেসি?

কেউ তাঁর পক্ষে বলছেন, কেউ বা বিপক্ষে। কেউ বলছেন, লিওনেল মেসির সিদ্ধান্তটা যথার্থ হয়েছে। কেউ আবার বার্সেলোনার এই কঠিন সময়ে তাঁর ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সমালোচনা করছেন। কেউ-বা সামনে আনছেন বার্সেলোনায় তাঁর বাকি থাকা চুক্তি ও সেটি নিয়ে সম্ভাব্য জটিলতাকে।

শেষ পর্যন্ত মেসির ভবিষ্যতে কী লেখা, তা এখনই বোঝা দায়। তবে এত কিছুর মধ্যে মেসির সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি হুয়ান গাসপার্ত। মেসি কেন বার্সেলোনা ছাড়তে চান, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তো তুলেছেনই। ২০০০ সালের জুলাই থেকে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বার্সেলোনার সভাপতির দায়িত্বে থাকা গাসপার্তের মনে হচ্ছে, বার্সার উচিত মেসিকে এই মৌসুমে তাঁর রিলিজ ক্লজের ১ ইউরো কমেও বিক্রি না করা।

‘মেসি ক্লাব ছাড়তে পারে না! যেতে হলে ২০২১ সালে যাবে। আমি চুক্তিটা দেখেছি, সেখানে সব পরিষ্কার করেই লেখা আছে। চুক্তির ওই শর্তটার মেয়াদ জুন মাসেই শেষ হয়ে গেছে, সেটিকে এখন আর কাজে লাগানো যাবে না। আমি বরং ওকে এখন ৭০ কোটি ইউরোর কমে ছাড়ার চেয়ে আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে ছেড়ে দিতে রাজি।’
হুয়ান গাসপার্ত, বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি

মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে পারেন, এমন গুঞ্জন কদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল। এমনিতেই বার্সেলোনা বোর্ডের একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তে বিরক্ত মেসি এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার লজ্জার পরই মেসি হয়তো ঠিক করে রেখেছিলেন, আর নয়! ক্লাবের সঙ্গে প্রায় দুই যুগের সম্পর্কের শেষ টেনে দিতে চাইছেন। ক্লাবকে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, যেতে চাই।

এক সময় বার্সার সভাপতি ছিলেন তিনি।

ক্লাবের ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে বার্সা এত সহজে যেতে দিতে চাইবে না, সেটিই স্বাভাবিক। মেসির চুক্তিতে এক বছর এখনো বাকি আছে। চুক্তিতে অবশ্য শর্ত ছিল, মেসি চাইলে কোনো মৌসুমের শেষে ‘ফ্রি ট্রান্সফারে’ ক্লাব ছাড়তে পারবেন, তবে সে ক্ষেত্রে ক্লাবকে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। মৌসুম জুনে শেষ হবে ধরে মেসির সে সিদ্ধান্ত জুনের আগেই জানাতে হতো। কিন্তু করোনাভাইরাস সব উল্টে পাল্টে দিয়েছে। যে মৌসুম জুনে শেষ হওয়ার কথা, সেটি গড়িয়েছে আগস্ট পর্যন্ত। সে কারণে মেসি এখন সিদ্ধান্তের কথা জানালেও বার্সা তা মানতে রাজি নয়। তাঁকে বিনা মূল্যে ছাড়বে না বার্সা। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রীতিকর উপায়ে হয় কি না, তাই এখন দেখার।

কোনো ক্লাব মেসিকে নিতে চাইলে মেসিকে তাঁর ‘রিলিজ ক্লজে’র ৭০ কোটি ইউরো দিয়ে নিতে হবে, এমনটাই মত বার্সার। তবে ৩৩ বছর বয়সী একজনের জন্য ৭০ কোটি তো অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে মেসিকে থাকতে রাজি করাতে না পারলে তাঁর জন্য অন্তত নেইমারের দলবদলের ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোর চেয়ে বেশি চায় বার্সা।

তবে গাসপার্ত চান, এমন কোনো সিদ্ধান্তই না হোক। মেসিকে চুক্তির পুরোটা মানতে বাধ্য করুক বার্সা, তা-ই চাওয়া তাঁর। রেডিও মার্কাতে গাসপার্ত বলেছেন, ‘মেসি ক্লাব ছাড়তে পারে না! যেতে হলে ২০২১ সালে যাবে। আমি চুক্তিটা দেখেছি, সেখানে সব পরিষ্কার করেই লেখা আছে। চুক্তির ওই শর্তটার মেয়াদ জুন মাসেই শেষ হয়ে গেছে, সেটিকে এখন আর কাজে লাগানো যাবে না। আমি বরং ওকে এখন ৭০ কোটি ইউরোর কমে ছাড়ার চেয়ে আগামী মৌসুমে ফ্রি-তে ছেড়ে দিতে রাজি।’

মেসি নন, বার্সেলোনারই হাতে পরিস্থিতির রাশ থাকবে, তা-ই চান বার্সার সাবেক সভাপতি, ‘এখানে ক্লাবই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে, খেলোয়াড় নয়। ক্লাব খেলোয়াড়কে বেতন তো দিচ্ছেই! আর এখানে টাকা পয়সাও মূল ব্যাপার নয়, এখানে একটা চুক্তি আছে, সেটাই বড় কথা।’ গাসপার্তের সময়েই বার্সেলোনার একাডেমিতে মেসির প্রথম পা ফেলা। এমন একজনের প্রতি ভালোবাসা গাসপার্তের আছেই, তবে এখানে ক্লাবই তাঁর কাছে বড় বলে দাবি করলেন, ‘আমি মেসিকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু বার্সেলোনাকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি। কেউ ওকে চাইলে রিলিজ ক্লজের টাকা দিয়ে নিক।’

মেসির আগমন ছাড়াও গাসপার্তের সভাপতিত্বের সময়টা বার্সার ইতিহাসে আরেকটি কারণে বিখ্যাত। তাঁর সময়েই বার্সেলোনা ছেড়ে লুইস ফিগোর রিয়াল মাদ্রিদে সেই আলোচিত দলবদল। ফিগোকে রিয়াল নিয়ে গিয়েছিল রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই। সেই স্মৃতি স্মরণ করে গাসপার্ত বললেন, ‘(লুইস) ফিগোকে নিয়ে এক রাতে ওরা এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে (রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে) আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। আমি রিভালদোকে এভাবে (রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে) এনেছি, কারণ আমি বার্সেলোনাকে ভালোবাসি। এখানেও (মেসির ক্ষেত্রে) ব্যাপারটা একই। চুক্তিতে রিলিজ ক্লজের অঙ্ক ৭০ কোটি ইউরো আর চুক্তি সই করাই হয় সেটি ঠিকভাবে পালন করার জন্য।’

মেসির ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের এই সময়ে তিনি সভাপতি থাকলে কী করতেন? গাসপার্ত বলেন, ‘বুঝতে পারছি ক্লাব ছাড়ার জন্য ওর ওপর অন্যরা চাপ দিচ্ছে, কিন্তু আমি এখন বার্সেলোনার সভাপতি থাকলে (মেসির দলবদলের জন্য) একটা ইউরো নিয়েও আলোচনা করতাম না। মেসি যদি ওর রিলিজ ক্লজের অঙ্কের চেয়ে এক ইউরো কমেও ক্লাব ছাড়ে সেটা ক্লাবের জন্য (বায়ার্ন মিউনিখের কাছে) ৮-২ হারের চেয়েও অপমানজনক হবে। মেসিরও এটা ভোলা উচিত নয় যে বার্সেলোনার সমর্থকেরা খেলোয়াড়ের চেয়ে ক্লাবকে বেশি ভালোবাসে। আর মেসি যদি আগামী বছর চলে যায়, সেটাও দুর্ভাগ্যজনক হবে, ও ৩৪ বছর বয়সে ক্লাব ছাড়বে।’

এরপর অবশ্য মেসির কড়া সমালোচনাই করলেন গাসপার্ত, ‘ও ক্লাব কেন ছাড়তে চাইছে, তা-ই বুঝতে পারছি না। কিছুটা বুঝতে পারছি, কারণ ফুটবল খেলোয়াড়দের এসব নাটক আমি খুব ভালোই জানি। আমরা সবাই চাই ও বার্সেলোনায় থাকুক। ও থাকতে চায় না? কী চলছে ওর মনে? ক্লাবের লাখো সমর্থক যে ওকে থাকতে অনুরোধ করছে সেটার দাম নেই? ও কি এটা মানে না যে আজ ও যেখানে, সেখানে আসতে বার্সেলোনাই ওকে সাহায্য করেছে?’

সবশেষে বর্তমান বোর্ডকে তাঁর পরামর্শ, ‘মেসিকে সবাই অনেক বেশি ভালোবাসে। আশা করি ও বার্সেলোনায় আরও একটা বছর উপভোগ করবে। এই বছর ৬৯ কোটি ৯০ লাখ ইউরোতে ওকে বিক্রি করার চেয়ে আগামী বছর ওকে বিনা মূল্যে যেতে দেখতেই চাইব আমি। (মেসির দাম) এক ইউরোও কমানো উচিত হবে না ওদের।’