স্পেন কোচ লুইস এনরিকের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে স্মৃতি! ইউরো ২০২০–এর সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে মাঠে নামবে স্পেন। কোচের দায়িত্বে থেকে লুইস এনরিকে ব্যস্ত থাকবেন দলের রণকৌশল তৈরি নিয়ে। কিন্তু ব্যস্ততার মধ্যেও এনরিকে ফিরে ফিরে যাবেন ২৭ বছর আগের সেই দিনটিতে। এমনই এক ইতালি ম্যাচে যে নাক ভেঙে রক্তাক্ত হয়েছিলেন এনরিকে!
আজকের স্পেন কোচ তখন স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের কথা। কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে স্পেন আর ইতালি। রবার্তো ব্যাজ্জোর ইতালির বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিল স্পেন। হারের দুঃখের সঙ্গে খেলোয়াড় লুইস এনরিকে সেদিন রক্তাক্ত হয়েছিলেন নাক ভেঙে। ইতালির ফুটবলার মাউরো তাসোত্তির সঙ্গে সেদিন মাঠে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল আজকের স্পেন কোচের।
ইউরো ২০২০–এর প্রথম সেমিফাইনালে আজ আরও একটি স্পেন-ইতালি ম্যাচ। এ ম্যাচের আগে এনরিকেকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো সেই স্মৃতি। তবে সেটি নিয়ে তিনি রসিকতা করতেও ছাড়েননি, ‘অনেক বছর আগের কথা। আমার নাকটা বোধ হয় এখন ঠিকই আছে। সেদিন যে চেহারা হয়েছিল, অন্তত এত বছর পর তার চেয়ে ভালো আছে।’
তাসোত্তির সঙ্গে এরপর নাকি বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে এনরিকের। জানিয়ে রাখতে ভোলেননি সেটিও, ‘সেই ঘটনার পর থেকে তাসোত্তির সঙ্গে আমার চার থেকে পাঁচবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে তাসোত্তি দারুণ একজন মানুষ।’
১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনালটা অবশ্য কখনোই ভোলেননি এনরিকে, ‘ওই ঘটনাটা অতীতের অংশ। সেটি ফুটবল ইতিহাসেরও অংশ। আমি আর তাসোত্তি দুজনই মনে করি, ওটা ছিল একটা দুর্ঘটনা। ঘটনাটি না ঘটলেও পারত। তবে যখন খেলোয়াড় ছিলাম, তখনকার আরও অনেক স্মৃতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সময়টা ছিল দুর্দান্তই। সেই ম্যাচটাও ছিল দুর্দান্ত। দুর্ভাগ্য যে স্পেন সে ম্যাচটি জিততে পারেনি। এবারের ইউরোতেও আমরা আরও একটা দুর্দান্ত ম্যাচে ইতালির মুখোমুখি হচ্ছি।’
লন্ডনের ওয়েম্বলিতে এ ম্যাচ দেখতে প্রচুর স্প্যানিশ দর্শক আসবেন বলে মনে করেন এনরিকে। কালই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সামাজিক দূরত্ব আর মাস্ক পরার ওর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন। করোনাকাল পেরিয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা শুরু করেছে ব্রিটেনসহ গোটা ইউরোপ। তবে সামাজিক দূরত্ব আর মাস্ক পরার ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা বলা হলেও বিদেশিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ব্যাপারটি এখনো থাকছে।
সে কারণেই নিজ দেশের দর্শক চাইলেও সেটি বেশি সংখ্যায় আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন স্পেন কোচ, ‘অদ্ভুত একটা সময়ে বাস করছি আমরা। আমি আশা করি, সেমিফাইনালে ওয়েম্বলিতে ইংলিশ দর্শকের চেয়ে স্প্যানিশ আর ইতালিয়ানের সংখ্যা বেশি থাকবে। কিন্তু এসব তো আমাদের হাতে নেই। তবে এ নিয়ে ভেবে শক্তিও ক্ষয় করতে চাই না। আমি এ ম্যাচে বেশি বেশি স্প্যানিশ দর্শক চাই। তবে সেটি যদি কোনো কারণে না হয়, সেটি আমাদের মেনে নিতে হবে।’
মাঠে স্প্যানিশ দর্শক নেওয়ার চেষ্টা করছে স্পেন ফুটবল ফেডারেশনও। তারা ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালকে সামনে রেখে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে বিশেষ আবেদনও জানিয়েছে। স্পেন ফুটবল ফেডারেশন এরই মধ্যে ‘আমরা আপনাকে চাই’ শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা প্রচারণাও শুরু করেছে।
আজকের ম্যাচে অবশ্য দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামবে ইতালি। ৩২ ম্যাচ ধরে অপরাজিত তারা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ‘হার’ কী জিনিস, সেটি ভুলেই গেছেন রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। এবারের ইউরোয় এখন পর্যন্ত দুটি নকআউট ম্যাচসহ ৫ ম্যাচে দাপটের সঙ্গেই জিতেছে ইতালি।
অন্যদিকে, স্পেনের অবস্থাটা একটু ভিন্ন। এবারের ইউরোয় খেলা ৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে জিতেছে স্পেন। দ্বিতীয় পর্বে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচ জিতেছে তীব্র লড়াইয়ের পর ৫-৩ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে উজ্জীবিত সুইজারল্যান্ডের বাধা পেরোতে টাইব্রেকারের আশ্রয় নিতে হয়েছে স্পেনকে। এমনিতেই টুর্নামেন্টে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার, সাবেক অধিনায়ক সের্হিও রামোসকে দল থেকে বাদ দিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন স্পেন কোচ।
‘নাক ভাঙা’র স্মৃতিবিজড়িত ইতালির বিপক্ষে আজ জিততে হলে বড় পরীক্ষাই দিতে হবে লুইস এনরিকে বাহিনীর।