>২০০৯ সালের ধর্ষণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে প্রায় ১৪ লাখ ডলার খরচ করতে হয়েছিল। কেবল আইনজীবীদের সমন্বয়ে গড়া একটি দলই নিয়েছিল ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যেটি ৮ কোটি টাকারও বেশি
এদিক দিয়ে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলোর জুড়ি মেলা ভার। বেশ গালভরা নাম দিয়েছে তারা: রন’স আর্মি! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে রীতিমতো একটা বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন ধর্ষণ মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে আর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে। তা কে ছিল না সেই বাহিনীতে? আইনজীবী তো সর্বাগ্রে। ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক। এমনকি ছিলেন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। গোয়েন্দা ছিলেন। সংবাদপত্রের দুনিয়া ভালো বোঝেন—এমন জনসংযোগ কর্মকর্তাও।
এঁদের পেছনে ১০ লাখ ডলার গুনতে হয়েছে রোনালদোকে। আর যাঁকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ, সেই মডেল ক্যাথরিন মায়োরগাকে এর আগে প্রায় পৌনে চার লাখ ডলার দিতে হয়েছিল রোনালদোকে। মিলিয়ন ডলার কামানো ফুটবলারকে আক্কেলসেলামিও মিলিয়ন ডলারেই গুনতে হয় দেখা যাচ্ছে। দ্য মিরর দিয়েছে এই খবর। ট্যাবলয়েডটি লিখেছে, ঘটনা বেগতিক হতে পারে বুঝতে পেরে রোনালদোর শুভাকাঙ্ক্ষীরা অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অনেকটা থ্রিলার উপন্যাসের কায়দায় বিশ্বের বাঘা বাঘা লোক জড়ো করতে শুরু করে। ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই লোকদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। মায়োরগা সে সময় ক্ষতিপূরণ হিসেবে যা পেয়েছেন, এঁরা পেয়েছেন তার তিন গুণ!
রিচার্ড ব্রাইট নামের এক আইনজীবী ঘণ্টা মেপে টাকা নিতেন। ঘণ্টায় যে অঙ্কটা ছিল ৪৭৫ ডলার। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ঘণ্টায় নিতেন ৩৫০ ইউরো। একজন চিকিৎসক এককালীন ২ হাজার ৫০০ ডলার নিয়েছেন। এবার খরচের বৃত্তান্তও ফাঁস করে দিল ডার স্পিগেল।
কিন্তু তাতেও তো শেষ রক্ষা হলো না। এতে নাকি রোনালদোর মাথায় এখন আগুন। মামলার গতিপ্রকৃতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে রোনালদোর ব্যাংক হিসাব থেকে স্রোতের মতো আরও গুচ্ছের টাকা বের হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ২০০৯ সালে ১৫ লাখ ডলারের কাছাকাছি খরচ করেও রোনালদো পার পাননি। আবার নতুন করে বিষয়টি চলে এসেছে আলোচনায়। আর এই ঘটনায় ধীরে ধীরে রোনালদো-পক্ষের পায়ের নিচ থেকেই মাটি সরে যাচ্ছে। এখন রোনালদোর আইনজীবীরা দাবি করছেন, দুই পক্ষের সমঝোতায় যে যৌন সম্পর্ক হয়, তাকে ধর্ষণ বলা চলে না।
জার্মান পত্রিকা ডার স্পিগেল গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ধর্ষণের এই ঘটনা নিয়ে খবর করে। এও জানানো হয়, মায়োরগা আবার নতুন করে মামলা করছেন। তখন রোনালদোর পক্ষ থেকে এই খবর সর্বৈব মিথ্যা বলে দাবি করা হয়। এমনকি জার্মান পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানি মামলার হুমকিও দেওয়া হয়। কিন্তু পত্রিকাটি নিজেদের খবরে অটল থাকে। শুধু তা-ই নয়, এরপর ২০০৯ সালে রোনালদো ও মায়োরগার আইনজীবীদের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তির নথিও ফাঁস করে দেয়। রোনালদোর আইনজীবীরা এখন দাবি করছেন, এসব প্রমাণপত্র বানোয়াট।
২০০৯ সালে সে সময়ের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দলবদল করে রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে চলে আসেন। নতুন ক্লাবে নতুন মিশন শুরুর আগে ফুরফুরে মেজাজে মৌসুমের আগের ফাঁকা সময়টা তিনি কাটিয়েছেন লাস ভেগাসে। সে বছর ১২ জুন এক নৈশ ক্লাবে দেখা হওয়ার পর পরদিন পামস ক্যাসিনো রিসোর্টে এক পার্টিতে মায়োরগাকে বান্ধবীসহ ডেকে আনেন রোনালদো। দাবি করা হচ্ছে, সেখানেই মায়োরগাকে যৌন হয়রানি ও একপর্যায়ে ধর্ষণ করেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। সে সময় মায়োরগা পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়োরগা তাঁর আইনজীবীর পরামর্শে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণে সমঝোতা করেন। কখনো তিনি এই তথ্য কখনো প্রকাশ করবেন না—এই শর্তে চুক্তিনামায় সইও করেন।
তবে বর্তমানে শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত মায়োরগার আইনজীবী দাবি করেছেন, নয় বছর ধরেই তাঁর মক্কেলকে পিছু তাড়া করেছে এই ঘটনা। মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি নাকি আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলেন! এখন সুবিচার চাইতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
মিররের খবরে দাবি করা হয়েছে, রোনালদো নয় বছর আগের এই ঘটনা শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই আইনজীবী দলের ওপর চটেছেন। কম টাকা তো আর তাঁরাও কামাননি। তবে রোনালদোকে এই বলে শান্ত করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সে সময়ে এমন পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আজকের তারকা ফুটবলার হওয়াই হতো না রোনালদোর। রিয়ালে ক্যারিয়ার শুরুর সময়ে এমন ঝামেলায় জড়িয়ে নেতিবাচক খবরে শিরোনাম হতে থাকলে কে জানে হয়তো ক্যারিয়ারও বরবাদ হয়ে যেতে পারত তাঁর।