এবার স্বস্তি পাবেন রোনালদো
এবার স্বস্তি পাবেন রোনালদো

ধর্ষণ মামলায় আবারও বিজয়ী রোনালদো

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণের মামলা তুলেও লাভ হচ্ছে না ক্যাথরিন মায়োরগার। গত অক্টোবরে একবার আদালত রোনালদোর বিপক্ষে করা মামলা বাতিল করে দেন। তাতে হতোদ্যম না হয়ে মায়োরগা ও তাঁর আইনজীবী লেসলি স্টোভাল লাস ভেগাসের আরেকটি আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই আদালতও কাল মামলা বাতিল করে দিয়েছেন। মামলার মতো মামলা বাতিলের কারণও বদলায়নি।

গত বছরের অক্টোবরে ম্যাজিস্ট্রেট জাজ ড্যানিয়েল অ্যালবরেগটসের রায়ের পক্ষে যুক্তি ছিল, মায়োরগার উকিলের অভিযোগটা পুরোপুরিই কিছু চুরি করা কাগজের ওপর ভিত্তি করে গড়া। এবার ফেডারেল জাজ জেনিফার ডরসিও মামলাটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। কারণ, চুরি করা কাগজের ওপর ভিত্তি করেই বারবার নিজের পক্ষে প্রমাণ দাঁড় করাতে চাইছিলেন স্টোভাল।

আবার হারলেন মায়োরগা

বিচারক ডরসি বলেছেন, চুরি করা নথির ভিত্তিতে মামলা করায় মামলাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিখিত রায়ে বিচারক বলেছেন, ‘অত্যন্ত ব্যক্তিগত প্রকৃতির গুরুতর অভিযোগের নিষ্পত্তি করার সুযোগ মায়োরগা নিজেই হারিয়েছেন। অন্যায়ভাবে অর্জিত তথ্যের প্রভাবে তাঁর দাবি ও তাঁর স্মৃতি এবং ঘটনার প্রেক্ষাপট প্রভাবিত হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করলে অন্য কোনো রায় দেওয়া অপর্যাপ্ত হতো। মামলার শুরু থেকে যে অন্যায় করা হয়েছে, সেটা ছড়িয়ে পড়া আটকাতে এবং আইনি প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে হলে এটা বাতিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’

রোনালদোর বিরুদ্ধে মামলায় মায়োরগার আইনজীবী ২০১৭ সালে ফুটবল লিকসের ফাঁস করা নথিপত্র ব্যবহার করেছেন। যেহেতু ফুটবল লিকসের সব তথ্য চুরি করা ও গোপন তথ্য, সে ক্ষেত্রে আইনের চোখে এগুলো পর্যাপ্ত ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নয়। কাল রায় দেওয়ার সময় বিচারক ডরসি আরও বলেছেন, এই নথিগুলোকেই বারবার প্রমাণ হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করেছেন স্টোভাল এবং মায়োরগার সঙ্গে বারবার এসব তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।

২০০৯ সালে এক নৈশ ক্লাবের পার্টিতে রোনালদো ও মায়োরগা

বিচারক বলেছেন, এভাবে চুরি হওয়া সে নথিগুলো বারবার পড়ার কারণে সে ঘটনা নিয়ে মায়োরগার যে চিন্তা, সেটা প্রভাবিত হয়েছে। মায়োরগার মামলায় এ নথির প্রভাবও দেখা গেছে। তিনি মনে করেন, ‘খারাপ উদ্দেশ্য’ নিয়েই এভাবে বারবার আদালতকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছেন স্টোভাল। এ কারণে এই আইনজীবীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য মামলাটি ছুড়ে ফেলা হয়েছে এবং এ মামলা নিয়ে যেন আপিল না করা যায়, সে ব্যবস্থাও নিয়েছেন। ডরসি স্বীকার করেছেন, এটা অনেক কঠিন শাস্তি,কিন্তু স্টোভালের অন্যায় আচরণে রোনালদো বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন।

এতে চার বছর মেয়াদি এক লম্বা বিতর্কের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন রোনালদো। ২০১৮ সালে প্রথম তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের মায়োরগা। ২০১৭ সালে জার্মান সাময়িকী ডার স্পিগেলের প্রতিবেদনের পর রোনালদোর ধর্ষণের অভিযোগ আলোচনায় আসে। সে সময় ফুটবল দুনিয়ার গোপন নথিপত্র ফাঁস করে দিয়ে আলোচনায় আসা ফুটবল লিকসের কাছ থেকে পাওয়া নথিপত্রের ভিত্তিতে ডার স্পিগেল রোনালদোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের কথা জানায়।

রোনালদো

ডার স্পিগেল জানিয়েছিল, ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসে এক হোটেলে ক্যাথরিন মায়োরগা নামের এক মডেলকে ধর্ষণ করেছিলেন রোনালদো। সে সময়ে মাত্রই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছিল। ডার স্পিগেল আরও জানায়, সে সময় ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে মায়োরগাকে চুপিসারে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ডলার দিয়েছিলেন রোনালদো। উদ্দেশ্য, যাতে মায়োরগা লাস ভেগাসের পুলিশের কাছে এ নিয়ে মামলা না করেন। ঘটনার সময় রোনালদোর বয়স ২৪ ও মায়োরগার বয়স ২৫ ছিল বলেও জানায় প্ত্রিকাটি।

কিন্তু ২০১৭ সালে ফুটবল লিকসের ফাঁস করা নথিপত্রের পর মামলাটি আবার আলোচনায় আসে। মায়োরগাও আগের সমঝোতা বাতিল করার চেষ্টা করেন। তাঁর দাবি ছিল, ২০০৯ সালের ওই সমঝোতার সময় তাঁকে রাজি হতে বাধ্য করা হয়েছিল। মানসিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থাতেও ছিলেন না তিনি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন তুমুল আলোচনা হলেও অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তা তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল।

কিন্তু ২০২১ সালে মামলা নতুন করে চালু করেন মায়োরগা। ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৭ কোটি ডলার চেয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু গত অক্টোবরে ম্যাজিস্ট্রেট জাজ ড্যানিয়েল অ্যালবরেগটসের রায় যায় রোনালদোর পক্ষে। নতুন করে আড়াই কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ ও আইনি খরচ চেয়ে অন্য আদালতে মামলা করেছিলেন মায়োরগা ও তাঁর আইনজীবী। কিন্তু এবারও হারতে হয়েছে তাঁদের।