>করোনায় মাঠে খেলা নেই তো কী হয়েছে, দেশের ফুটবলে চলছে অন্য 'খেলা'! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সে 'খেলা'য় শুরু হয়ে গেছে অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ। উঠে আসছে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অসংগতিও। এসব দেখে হতাশ, ব্যথিত বাংলাদেশের তিন সাবেক ফুটবলার। দেশের ফুটবলের এমন রূপ দেখতে চান না তাঁরা—
গোলাম সারোয়ার টিপু,সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ
করোনার আতঙ্কেও নির্বাচনের জন্য বাফুফে কেন এত উঠেপড়ে লাগল বোঝা কঠিন। ফিফা বা অন্য কেউ তো চাপ দিচ্ছে না!
আরেকটি বিষয় লক্ষ করেছি, বাফুফের বর্তমান কমিটিতে সাবেক খেলোয়াড়ের সংখ্যাই ১০-১২ জন। এখন অন্য সাবেকেরা নির্বাচন করতে চাইলে অসুবিধার কী আছে? তাঁদের হিংসার চোখে দেখা বা তাঁদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ কেন! তা ছাড়া এক পক্ষ বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এনেছে। সালাউদ্দিনের পক্ষে কাউন্সিলর কিনতে টাকার প্রলোভনও নাকি তিনি দেখিয়েছেন। এসব অভিযোগের সুরাহা করছে আবার নির্বাচন–সংক্রান্ত বাফুফের ৩ সদস্যের কমিটি। যাঁদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কমিটিতে থাকা সালাম মুর্শেদী, হারুনুর রশিদ, আবদুর রহিমরা বাফুফের সদস্য। বাফুফের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তাঁরা সেটার কী বিচার করবেন! এটা আমার মাথায় ঢুকছে না। তাঁরা তো নিরপেক্ষ নন এবং তিনজনই বাফুফের নির্বাচন করবেন বলে শুনতে পাচ্ছি।
পরিশেষে বলব, বাফুফের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিনের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু সে ১২ বছর সময় পেলেও প্রত্যাশা পূরণের ধারেকাছেও যায়নি, ব্যর্থ হয়েছে। শুধু কথার কপচানিই শুনলাম আমরা। তৃণমূলে কিছু হলো না। বাফুফের দায়িত্ব শুধু ঢাকা লিগ নয়, সারা দেশের ফুটবল উন্নতিতে কাজ করা। সেটা যখন হলোই না, এখন বাফুফেতে পরিবর্তন আশু জরুরি।
এ কে এম নওশমান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার
বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। সেসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তবে একটা কথা পরিষ্কার, যেসব জেলায় খেলা হয় না, সেখানে কাউন্সিলরশিপ দেওয়ার কোনো অর্থই নেই। অথচ আমরা কী দেখছি? যেখানে খেলা হয় না, সেখানেও কাউন্সিলরশিপ দেওয়া হচ্ছে।
বাফুফের নির্বাচন মানেই যেন টাকার খেলা! নির্বাচনের সময় একেকজন কাউন্সিলর ১০-১৫ লাখ টাকা ব্যাগে নিয়ে যায়। এসব দেখে ঘৃণা হয়। আমি এর আগে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি সদস্য পদে। তাই কাছ থেকে দেখেছি সব।
জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি ঠিক নয়। আমি কারও বিরুদ্ধে বলব না। তবে আমার প্রশ্ন, বাফুফের চেয়ারের দিকে সবার এত নজর কেন? আমরা সবাই চাই ফুটবলের উন্নয়ন। কিন্তু সেটা কীভাবে হবে? খেলোয়াড় কোথায়? ফুটবল উন্নতির জন্য যাদের আসা উচিত, তারাই আসুক।
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে আমি বলব না। সে তৃতীয় মেয়াদের পর আর নির্বাচন করবে না বলেছিল। কিন্তু এখন বাফুফে সভাপতি হতে আর কে আসবে বলেন! সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তেমন কেউ নেই। তাই সালাউদ্দিন চতুর্থ মেয়াদে সভাপতি হলে আমার আপত্তি থাকবে না। আমি বরং তাকে স্বাগতই জানাব। তবে কিছু সংশোধন হয়তো লাগবে।
আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, সাবেক জাতীয় ফুটবলার
করোনায় কে বাঁচে কে মরে তার নেই ঠিক। আমরা আছি ফুটবলের নির্বাচনী যুদ্ধে! আসলে ফুটবলে পচন ধরে গেছে। ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন এলেই টাকার খেলা শুরু হয়। কাউন্সিলর কেনাবেচা চলে। এবার নতুন মাত্রা যোগ হলো। আগে থেকেই কাউন্সিলর কেনার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ভাইরাল হয়ে গেছে। পত্রপত্রিকায় নেতিবাচক প্রচার চলছে। ফুটবলের ভাবমূর্তি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। পয়সা দিয়ে কাউন্সিলর কিনলে ফুটবলের জন্য আপনি কী কাজ করবেন! এসব দেখে দুঃখ পাই।
সার্বিক পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, আমাদের ফুটবলের শেষ পরিণতি কী, সেটাই প্রশ্ন। এমনিতে ফুটবল মৃত্যুশয্যায় অনেক দিন। এখন মনে হচ্ছে কবরও খুঁড়তে হবে। যাঁরা গত ১২ বছর কিছুই করতে পারলেন না, তাঁদের নিজেদেরই উচিত এখন সরে যাওয়া। নতুন কেউ এসে যদি ফুটবলটা টেনে তুলতে পারে!
একসময় দেশে ফুটবল মানেই ছিল আলোড়ন। সেই দেশেই এখন মানুষ মাঠে যায় না, ফুটবল দেখে না। এই খরা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দরকার। চারদিকে একই আওয়াজ শুনি—ফুটবল শেষ হয়ে গেছে। এর জন্য আসলে আমরা সাবেক ফুটবলাররাই দায়ী। আমাদের দাপটের কারণে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকেরা চলে গেছেন। খারাপ লাগে, ফুটবল উন্নয়নে কোনো কাজ নেই, কর্মসূচি নেই। ক্ষমতাই যেন সব!