গ্যারেথ বেল এখনো ফুটবল খেলেন। এবং এখনো যে বেশ ভালোই খেলেন, সেটিও জানা গেল। রিয়াল মাদ্রিদে অপাঙ্ক্তেয় হওয়া বেলকে গত সপ্তাহে এল ক্লাসিকোর স্কোয়াডেই দেখা যায়নি। সে বাদ পড়া যে চোট–সংক্রান্ত কিছু নয়, সেটা জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েই প্রমাণ করেছেন ওয়েলস তারকা। আবার ফর্মের কারণেও যে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কাল রাতের ম্যাচের পর সেটিও বলার উপায় নেই।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে–অফে পথ ‘এ’র সেমিফাইনালে কাল মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েলস ও অস্ট্রিয়া। বরাবরই জাতীয় দল অন্তঃপ্রাণ প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বলে উঠেছেন। জোড়া গোল করে দলকে ২-১ ব্যবধানের জয় এনে দিয়েছেন। এরপর সমালোচকদের কড়া জবাব দিয়েছেন জবাব না দিয়েই!
এল ক্লাসিকোর আগে স্কোয়াডে না থাকার দায় বেলের ঘাড়েই ফেলেছিল মাদ্রিদভিত্তিক পত্রিকাগুলো। ক্লাব থেকে বেতন নিয়ে সেখানে না খেলে জাতীয় দলে ঠিকই খেলছেন বেল—এমন দাবি তুলেছে মার্কা। ‘ওয়েলসের পরজীবী’ নামে এক শিরোনাম দিয়ে তারা বেলের নামে খুবই আপত্তিকর একটি কলাম ছাপিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও দুটি লা লিগাজয়ী এই উইঙ্গার প্রসঙ্গে তারা একটি লাইন লিখেছে এমন—‘উনি স্পেনে এলেন, রিয়াল মাদ্রিদে প্রথমে ছদ্মবেশ ধারণ করলেন। দলের প্রতি ভালোবাসা ও পরিশ্রম দেখালেন। কিন্তু এরপর তাঁর স্বভাবজাত অভ্যাসে ফিরে গিয়ে বিনিময়ে কিছু না দিয়ে রক্ত চোষা শুরু করলেন।’
২০১৩-১৪ মৌসুমে রিয়ালে যোগ দিয়েই ক্লাবের দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতায় বড় ভূমিকা রেখেছেন বেল। এরপর টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। ২০১৮ সালের ফাইনালে তাঁর বাইসাইকেল কিকের গোল তো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালের ইতিহাসেরই সেরা গোল। কিন্তু গত চার বছরে চোট, ফর্মহীনতা ও ক্লাবের প্রতি নিবেদনে কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তাঁর মধ্যে। এই মৌসুমেও রিয়ালের হয়ে তাঁকে খুব কম দেখা গেছে।
বেল সেসব ভুলতে জাতীয় দলকেই বেছে নিয়েছেন। ১৯৫৮ সালের পর আর বিশ্বকাপ খেলেনি ওয়েলস। এই অবস্থায় ক্লাব নয়, জাতীয় দলকে ঘিরেই তাঁর সব চিন্তা ছিল। গতকাল রাতে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আবারও দেশের প্রতি নিবেদন দেখালেন। ২৫ মিনিটে দারুণ এক ফ্রি–কিকে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন। পরে অস্ট্রিয়া ১ গোল দিলেও ওয়েলসের ফাইনালে যাওয়া আটকাতে পারেনি।
ম্যাচের পর উল্লসিত বেলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এই উদ্যাপন কারও প্রতি বার্তা কি না? বেল সরাসরি বলেছেন, ‘আমার বার্তা পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই, আমার সময়ের অপচয় হবে। এটা খুবই জঘন্য এবং ওদের লজ্জা পাওয়া উচিত।’
প্রজন্মের সেরাদের একজন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাঁর। রিয়াল মাদ্রিদে শেষ দিকটা এত বিতর্কিত হয়ে পড়ায়, তা আর হয়নি। তবু এমন এক তারকার কখনো বিশ্বকাপ খেলতে না পারাটা হতাশার। ৩২ বছর বয়সে বিশ্বকাপ খেলার দ্বারপ্রান্তে বেল। আর শুধু একটি ম্যাচের অপেক্ষা। তবে এখনই সে অপেক্ষার সমাপ্তি টানতে পারছেন না বেল। পথ ‘বি’ ও ‘সি’র ফাইনাল ২৯ মার্চ হয়ে যাবে। কিন্তু পথ ‘এ’র অন্য সেমিফাইনালে খেলার কথা স্কটল্যান্ড ও ইউক্রেনের। রাশিয়ার হামলার কারণে ইউক্রেনের পক্ষে এখন খেলা সম্ভব নয়। তাই সে ম্যাচ জুনে হবে বলে জানানো হয়েছে। ওদিকে পথ ‘বি’তে রাশিয়ার বিপক্ষে পোল্যান্ডকে সেমিফাইনালে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
বেলকে তাই এখন স্বপ্নপূরণের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে, ‘বিশ্বকাপ থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে? এটা দুর্দান্ত, অর্ধেক কাজ শেষ। একটা জিনিস ভালো হয়েছে, আজ রাতটা আমরা উপভোগ করতে পারব। কারণ, সে ম্যাচ তো অবশ্যই জুনেই হবে। সেটাও স্কটল্যান্ড বা ইউক্রেনের বিপক্ষে খুব কঠিন ম্যাচ হবে। যখনই হোক, আমরা এর জন্য প্রস্তুত থাকব।’