নেইমারের সঙ্গে ব্রাজিলের কোচ তিতে।
নেইমারের সঙ্গে ব্রাজিলের কোচ তিতে।

দামই নেই ব্রাজিলিয়ান কোচদের

লুইজ ফেলিপে স্কলারি, কার্লোস আলবার্তো পারেইরা, ভিসেন্তে ফিওলা, আয়মোরে মোরেইরা, মারিও জাগালো, টেলে সান্তানা, ভ্যান্ডারলি লুক্সেমবার্গো, দুঙ্গা।

মাঠের ভেতরে ফুটবলশৈলী দেখানোর জন্য যুগ যুগ ধরে কতশত ফুটবলারই তো বের হয়েছে ব্রাজিল থেকে। মাঠের বাইরে থেকে ক্ষুরধার মস্তিষ্কে কৌশল ঠিক করে দেওয়ার জন্য যোগ্য ম্যানেজার বা কোচও কি বের হয়নি? হয়েছে অনেক। ওপরের নামগুলো সেসব ম্যানেজারের, যাঁরা ফুটবল খেলাটাকে করে তুলেছেন আরও সুন্দর, আরও কৌশলী, আরও আধুনিক। কিন্তু তাঁদের পথ থেকে ভালো ব্রাজিলিয়ান কোচ বেরিয়ে আসছেন কোথায়?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বিশ্বসেরা ম্যানেজারদের নিয়ে আলোচনা উঠলে এখন ব্রাজিলীয় কোচদের নাম বলতে গেলে আসেই না। জার্মানির ইয়ুর্গেন ক্লপ, হান্সি ফ্লিক, টমাস টুখেল কিংবা ইউলিয়ান নাগলসমান, স্পেনের পেপ গার্দিওলা, লুইস এনরিকে, ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম কিংবা জিনেদিন জিদান, পর্তুগালের জোসে মরিনিও কিংবা ফের্নান্দো সান্তোস, ইতালির কার্লো আনচেলত্তি, রবার্তো মানচিনি কিংবা আন্তোনিও কন্তে, আর্জেন্টিনার মরিসিও পচেত্তিনো, দিয়েগো সিমিওনে কিংবা মার্সেলো বিয়েলসা গরম করে রাখেন আলোচনার টেবিল। সেখানে কয়টা ব্রাজিলিয়ান ম্যানেজার নিয়ে কথা হয়? কয়জন ব্রাজিলিয়ান ম্যানেজারকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে মানা হয়?

সেরা কোচদের আলোচনায় ক্লপ-গার্দিওলাদেরই নাম আসে।

বর্তমানের অবস্থা বিবেচনা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, একজনও নয়। যে দেশ এককালে স্কলারি, জাগালোদের উপহার দিয়েছিল, কোচ ‘উৎপাদনে’ সে দেশে আজ গ্রীষ্মের খরা। এটা আরও প্রকটভাবে বোঝা গেছে সম্প্রতি। সেদিন পর্তুগিজ ক্লাব মারিতিমো ছাঁটাই করেছে তাঁদের ব্রাজিলিয়ান কোচ মিলতন মেন্দেসকে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গেল, ইউরোপের শীর্ষ দশ লিগের কোনো ক্লাবে কোচিং করাচ্ছেন, বর্তমানে এমন কোনো ব্রাজিলিয়ান ম্যানেজারই নেই। ভাবা যায়?

ইউরোপ দূরে থাকুক, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের শীর্ষ লিগেই সব দলের ম্যানেজার ব্রাজিলীয় নন। একটা সময় ছিল, যখন ব্রাজিলের লিগের প্রতিটি ক্লাবের দায়িত্বে থাকতেন ব্রাজিলিয়ান কোচরাই। এখন সে দিন আর নেই। উল্টো ইন্তারনাসিওনাল, পালমেইরাস, সাও পাওলো ও সান্তোসের মতো ব্রাজিলিয়ান লিগের শীর্ষ ক্লাবগুলো বিদেশি কোচ টাকা দিয়ে পুষছে; দেশের কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে। সম্প্রতি ইন্তারনাসিওনাল নিয়োগ দিয়েছে স্প্যানিশ ম্যানেজার মিগেল আনহেল রামিরেজকে। সান্তোস আর সাও পাওলোর দায়িত্বে আছেন দুই আর্জেন্টাইন-আরিয়েল হোলান ও এর্নান ক্রেসপো। ওদিকে গ্রেমিওকে হারিয়ে সদ্যই কোপা দো ব্রাজিল জেতা পালমেইরাসের ডাগআউটে বসে থাকেন পর্তুগিজ ম্যানেজার আবেল ফেরেইরা।

স্কলারির কল্যাণেই ব্রাজিল জিতেছিল তাদের সর্বশেষ বিশ্বকাপ।

পচেত্তিনো, সিমিওনে, বিয়েলসার কথা তো বলা হলোই আগে। এ ছাড়া ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার যেসব ম্যানেজার ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোয় কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এদুয়ার্দো কুদে (সেলতা ভিগো), হোর্হে সাম্পাওলি (মার্শেই)।

তাহলে কি ফুটবলীয় প্রজ্ঞার দিক দিয়ে ব্রাজিল আস্তে আস্তে পিছিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু!