চোটের কারণে মাঠের বাইরে নেইমার। নেইমারের বদলে পিএসজির আক্রমণভাগে জুটি গড়েছেন নতুন আসা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি। ইকার্দি-এমবাপ্পে এমন ভয়ংকর জুটি গড়ছেন, নেইমারের অভাব বুঝতেই পারছে না পিএসজি!
পিএসজির মূল একাদশে জায়গা পেতে নেইমারকে বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হবে, অন্তত পরিসংখ্যান দেখে এটাই মনে হচ্ছে।
মৌসুমের শুরুতে চোটের কারণে কোপা আমেরিকা খেলতে পারেননি। তাঁকে ছাড়াই এক দশক পর কোপা জিতল ব্রাজিল। এর পর দলবদলের মৌসুমে বার্সেলোনায় যেতে চেয়ে খেপিয়ে দিয়েছেন পিএসজি সমর্থকদের। যখনই পারফরম্যান্স দিয়ে মন ভোলাতে শুরু করেছেন তখনই আবার ধাক্কা খেয়েছিলেন নেইমার। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় সেদিন মাঠ ছেড়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। সিঙ্গাপুরের জাতীয় স্টেডিয়ামে সেদিন ৭ মিনিটেই প্রথমে অস্বস্তি টের পেয়েছিলেন নেইমার। দলের চিকিৎসক দল তাঁকে পরীক্ষা করেও দেখেছিল। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ায় খেলা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পড়ই মাঠ ছেড়ে গেছেন। বাঁ ঊরুতে চোটে আবারও মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। নেইমারকে ছাড়াই চলতে হচ্ছে পিএসজিকে।
কথায় বলে, প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জন্ম দেয়। নেইমার নেই, ফলে কোচ টমাস টুখেলের এমন একজনকে প্রয়োজন হয়েছিল, এমন এক কৌশলের প্রয়োজন হয়েছিল, যে কৌশলের বলে পিএসজি অনায়াসে ম্যাচ জিততে পারবে। গোল করতে পারবে। ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে আর আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দির কল্যাণে সে কৌশল টুখেল বেশ ভালোভাবেই পেয়ে গিয়েছেন।
গত রাতের কথাই ধরুন, চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে বেলজিয়ামের ক্লাব ব্রুজেকে ১-০ গোলে হারিয়েছে পিএসজি। ম্যাচের একমাত্র গোল করেছেন ইকার্দি। ম্যাচের ২১ মিনিটে গোলের দেখা পায় পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পের নিচু ক্রস আয়ত্তে আনতে পারেননি আর্জেন্টাইন উইঙ্গার অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। তবে সহজেই সেখান থেকে বল পেয়ে যান ইকার্দি। আর সেই অবস্থা থেকে লক্ষ্যভেদ করতে একদমই বেগ পেতে হয়নি ইন্টার মিলানের সাবেক অধিনায়কের। এই ম্যাচ জয়ের ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ ‘এ’ থেকে সবার আগে শেষ ষোলো নিশ্চিত হলো ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের।
এই গোলের ফলে একটা চমক জাগানিয়া কীর্তি গড়ে ফেলেছে পিএসজি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পিএসজির সর্বশেষ ১৩ গোলের প্রত্যেকটি করেছেন হয় ইকার্দি, নয়তো এমবাপ্পে। দিয়নের বিপক্ষে গত ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন এমবাপ্পে। এর আগে লিগে মার্শেইকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করার ম্যাচে জোড়ায় জোড়ায় গোল করেছিলেন দুজন। এর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্রুজের বিপক্ষেই ৫-০ গোলে জিতেছিল পিএসজি। তখন হ্যাটট্রিক করেছিলেন এমবাপ্পে, জোড়া গোল ছিল ইকার্দির। এর আগে নিসের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে একটি করে গোল করেছিলেন দুজন। পরিসংখ্যানকেই যদি একমাত্র অবলম্বন হিসেবে মানা হয়, তাহলে আপনিই বলুন, নেইমারের কি দরকার পিএসজির?
বিশেষ করে ইকার্দির কথাটা একটু বলতেই হচ্ছে। ইন্টার মিলান থেকে এক রকম বের করে দেওয়া হয়েছিল আর্জেন্টাইন এই তারকাকে। কোচ, ক্লাবের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ইকার্দি ও তাঁর স্ত্রীর বিরোধের জের ধরে এই মৌসুমে ইন্টারে টিকতে পারেননি মাত্র এক মৌসুম আগেও দলটার অধিনায়কত্ব করা এই স্ট্রাইকার। সেই ইকার্দি পিএসজিতে ধারে খেলতে এসে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন যেন। চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে নিজের প্রথম ১০ ম্যাচে ৮ গোল করলেন ইকার্দি। এমবাপ্পে বা ডি মারিয়ার সঙ্গে তাঁর রসায়নটাও চোখে পড়ছে বেশ।
পিএসজি এবার অন্তত হাঁপ ছেড়ে বাঁচতেই পারে, নেইমার ছাড়া তাদের চলতে সমস্যা হচ্ছে না আর যাই হোক!