থ্যাঙ্কগডের গোলের পর চট্টগ্রাম আবাহনীর উদযাপন
থ্যাঙ্কগডের গোলের পর চট্টগ্রাম আবাহনীর উদযাপন

থ্যাঙ্কগডের গোলে পয়েন্ট পেল চট্টগ্রাম আবাহনী

রক্ষণ, মাঝমাঠ বা আক্রমণভাগ—চট্টগ্রাম আবাহনীর এবারের দলটার কোথাও কোনো শক্তিশালী দিক নেই! এটা আরও বেশি করে স্পষ্ট হলো স্বাধীনতা কাপে তাদের প্রথম ম্যাচেই।

বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে হারেনি তারা, এটাই আবাহনীর জন্য জয়ের সমান! কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি ১–১ গোলে ড্র হয়েছে।

খেলোয়াড় দেখে চট্টগ্রাম আবাহনীকে চেনা যায় না। দলটিকে চিনতে হয় কোচ মারুফুলকে দেখে। একঝাঁক অখ্যাত খেলোয়াড় নিয়ে ঘরোয়া ফুটবলের এবারের মৌসুমে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরাতে হবে দেশের অন্যতম সেরা এই কোচকে।

অর্থের অভাবে পুরোনো বিদেশিদের কাউকেই ধরে রাখা যায়নি। নতুন বিদেশিরা দলের স্থানীয় খেলোয়াড়দের সমপর্যায়ের বলেই মনে হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার উইলিয়াম এনকুলুলোকো টোয়ালসসকে তো দ্বিতীয়ার্ধে তুলেই নিতেই বাধ্য হলেন কোচ। স্থানীয় ভালো খেলোয়াড়েরাও ক্লাব ছেড়েছেন। দলটির আগের মৌসুমের অধিনায়ক মোনায়েম খান ও রাইটব্যাক মোহাম্মদ রকি তো আজ খেললেন পুলিশের হয়েই।

এবার বেশ সেজেগুজেই নেমেছে পুলিশ। ডাগআউটে রোমানিয়ার কোচ আরিসতিচা চিয়াওবা। ক্ষুরধার বিদেশিদের আক্রমণভাগ। নাম্বার নাইন আফগানিস্তান জাতীয় দলের স্ট্রাইকার আমিরুদ্দিন শরিফি। তাঁর পেছনে আক্রমানত্মক দুই মিডফিল্ডার মরক্কো বংশোদ্ভূত জার্মানির আদিল কুসকুস ও ব্রাজিলের ডেনিলসন রোলদাও। এই তিন বিদেশির ত্রিভূজ আক্রমণ জমে উঠেছিল বেশ।

গোল মিসের মহড়া না দিলে বেশ বড় ব্যবধানের জয় নিয়েই মৌসুম শুরু করতে পারত পুলিশ।

প্রথম মিনিট থেকেই সার্ভিসেস দলটির গোল মিসের শুরু। ২৯ সেকেন্ডেই গোলের খাতা খুলতে পারত তারা। আফগান ফরোয়ার্ড আমিরুদ্দিন শরিফির পাস থেকে গোললাইনের হাতছোঁয়া দূরত্ব থেকে পা ছোঁয়ানোর কাজটি করতে পারেননি স্থানীয় ফরোয়ার্ড আমিরুল ইসলাম।

বল আবাহনীর অর্ধেই ঘোরাঘোরি করল বেশি। আমিরুদ্দিন, ডেনিলসনরা জায়গা বদল করে খেলে বারবার ধাঁধায় ফেলল আবাহনীর রক্ষণভাগকে। অফসাইড ফাঁদ ভাঙতেও জুড়ি নেই আফগান স্ট্রাইকারের। এ বছরের জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে গোল করা আমিরুদ্দিন আজ ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট করলেন ২৪ মিনিটে। অফসাইড ফাঁদ ভেঙে এম এস বাবলুর থ্রু বলে মুভ করলেন। তাঁর সামনে ছিল শুধুই আবাহনী গোলরক্ষক আজাদ। এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে আফগান স্ট্রাইকারের টোকা পোস্ট ছুঁই ছুঁই করে বাইরে।

দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বল দখলের লড়াই

আমিরুল, আমিরুদ্দিনের পর মিসের খাতায় নাম লেখালেন ব্রাজিল অনূর্ধ্ব–১৫ দলে খেলা ডেনিলসন। আমিরুদ্দিনের রক্ষণচেরা পাসে গোললাইনের খুব কাছাকাছি থেকে শট নিয়েছিলেন তিনি। ফিস্ট করে রক্ষা করেন আবাহনী গোলকিপার।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই ডেনিলসনের গোলেই পুলিশের এগিয়ে যাওয়া। লেফট উইঙ্গার বাবলুর শট আবাহনী গোলরক্ষক ঠেকালে ফিরতি বলে ডেনিলসনের শট জালে।

দ্বিতীয়ার্ধে গোল পেলেও প্রথমার্ধেই সেই দাপটটা ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ। আবাহনী কোচ মারুফুলের এক বদলিতেই খেলার চিত্র বদলে যায়।

মারুফুল শুরুটা করেছিলেন ৪–৩–৩ ফর্মেশনে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মিডফিল্ডার আরাফাত হোসেনকে তুলে সাকের উল্লাহকে মাঠে নামান। আর ফর্মেশনে পরিবর্তন এনে দলকে ৪–২–৩–১–এ খেলান মারুফুল। দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলানোতে পুলিশের আক্রমণগুলো শুরুর মতো আর জমে উঠতে পারেনি।

গোল খাওয়ার ২ মিনিট পরেই বরং পেনাল্টি থেকে সমতায় ফেরে আবাহনী। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এবিমোবেই থ্যাঙ্কগডের শট রাশেদুল আলমের হাতে লাগলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়িয়েছেন থ্যাঙ্কগডই।

ম্যাচে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ

৬৬ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেয়েছিল আবাহনী। পুলিশ ডিফেন্ডারের ভুল পাসের সুযোগে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন উইঙ্গার রুবেল মিয়া। থ্যাঙ্কগডকে দিয়ে গোল করানোর ভালো সুযোগ থাকলেও নিজে তালগোল পাকিয়ে গোলের সুযোগটি নষ্ট করেছেন। উল্টো অহেতুক ডাইভিংয়ের অভিযোগে হলুদ কার্ড দেখেছেন রুবেল।

দ্বিতীয়ার্ধে একচ্ছত্র দাপট না থাকলেও ম্যাচের শেষের দিকেও জেতার মতো খেলেছে পুলিশ। কিন্তু শুরুর মতোই বক্সের মধ্যে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে তারা। শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।