কাতারের বিপক্ষে কী অসাধারণ গোলটাই না করল ফয়সাল আহমেদ ফাহিম! প্রতি আক্রমণ থেকে বল ধরে শরীরের ঝটকায় দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বাঁ পায়ে বলটা গোলে ঠেললেন বক্সের বাইরে থেকেই। সিরাজগঞ্জের এই ছেলে অবশ্য কী করতে পারে, সেটা দেখিয়ে চলেছে গত এক-দেড় মাস ধরেই। আগস্টে নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে তার পা থেকে ৪ ম্যাচে একটি হ্যাটট্রিকসহ এসেছিল ৭ গোল। স্ট্রাইকার-সংকটে আচ্ছন্ন দেশের ফুটবলে সেটি ছিল এক পশলা বৃষ্টি। কিন্তু কাতারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইয়ে ফাহিম প্রমাণ করল, হেলায় হারিয়ে ফেলার প্রতিভা সে নয়।
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইয়ে প্রথম ম্যাচে ইয়েমেনের বিপক্ষেই দারুণ এক গোল পেতে পারত ফাহিম। গোলটি হয়ে গেলে হয়তো তা এএফসির বর্ষসেরা গোল বা এ জাতীয় কোনো তালিকায় স্থান পেত। এটিও প্রতি আক্রমণ থেকেই। ফাহিম যে গতিতে ইয়েমেনের সীমানায় ঢুকে পড়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা হতে পারে কেবল লিওনেল মেসিরই। উপমাটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল? একটু হয়তো হয়েছে, কিন্তু অমন গতি, বডি ডজ, প্রতিপক্ষের রক্ষণ সেনাদের ওভাবে বোকা বানানোর দৃশ্য বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের কাছ থেকে শেষ কবে দেখা গেছে, সেটা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে।
কাতারের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম গোলটির উৎসেও ছিল ফাহিম। তার মাপা কর্নার থেকেই দারুণ হেডে গোল করেছিল দীপক রনি। কিন্তু দ্বিতীয় গোলে ফাহিম যেভাবে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাল, সেটিতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়!
আজ সকালেই দোহা থেকে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দল। চট্টগ্রাম থেকে দল যখন ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে, ঠিক তখনই প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হলো ফাহিমের। দেশকে এমন একটি জয় উপহার দিয়ে উচ্ছ্বসিত সে। তবে তার কণ্ঠে ছিল সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়, ‘কাতারের বিপক্ষে জিতেছি। কতটা খুশি, সেটা বুঝতেই পারছেন। তবে আমি এখানেই থেমে যেতে চাই না। একজন বড় ফুটবলার হতে চাই।’
কাতারের বিপক্ষে জয়সূচক গোল পেলেও ফাহিমের অতৃপ্তিটা ঠিক যাচ্ছে না। তার আক্ষেপটা মূলত ইয়েমেনের বিপক্ষে সেই গোলটি না হওয়াতেই, ‘আমি ইয়েমেনের পোস্টের দিকে যখন ছুটে যাচ্ছি, গোল করবই—মনে মনে এমন পণই ছিল। সে জন্য গতিটা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। গোলটা তো প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, গোলরক্ষক শুয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিল। আসলে এ জায়গায় মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশলটা শিখতে হবে। মাথা ঠান্ডা না রাখতে পারলে বড় স্ট্রাইকার হওয়া যাবে না।’
ফাহিমের সঙ্গে কথা বলার সময়ই হঠাৎ মনে পড়ল ২০১৫ সালের কথা। সিলেটে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে সেবার দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশের সারোয়ার জামান নিপু। কিন্তু দুই বছরের মাথায় এসে সে বিস্মৃতির তালিকায়। ঢাকার একটি ক্লাবে কোনোমতে নিজের খেলা টেনে নিচ্ছে সে। যে প্রতিভার ঝলক নিপু দেখিয়েছিল, সেটি বিচারে নিলে তার প্রাপ্য ছিল বাফুফের বিশেষ যত্ন। কিন্তু সেটি হয়নি। ফাহিমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেই ভয়টিই পেয়ে বসল। এমন প্রতিভাকে আমরা হারিয়ে ফেলব না তো!