২০০৬ সালে ইতালিয়ান লিগ কেঁপে ওঠে ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে। ‘ক্যালসিওপোলি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সে কেলেঙ্কারির কারণে জুভেন্টাসের দুটি লিগ শিরোপা বাতিল হওয়ার পাশাপাশি দেল পিয়েরো-বুফনদের দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হয়। আজীবন নিষিদ্ধ করা হয় জুভেন্টাসের তৎকালীন পরিচালক লুসিয়ানো মগিকে।
সম্প্রতি সেই ‘ক্যালসিওপোলি’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তি জানিয়েছেন, ‘ক্যালসিওপোলি’ হয়ে বরং ইতালিয়ান ফুটবলের জন্য ভালোই হয়েছে। তাঁর মতে, ওই ঘটনা ধরা না পড়লে ইতালির ফুটবল আজকের অবস্থানে আসতে পারত না। সে ঘটনার পর ইতালির ফুটবল আরও পরিশুদ্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন এসি মিলান, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ ও পিএসজির সাবেক এই কোচ।
ইতালিয়ান ফুটবলের ‘শুদ্ধতা’ নিয়ে আনচেলত্তির মুখে এমন কথা শুনে খেপে গিয়েছেন সেই লুসিয়ানো মগি। জানিয়েছেন, এখন ‘ক্যালসিওপোলি’ নিয়ে আনচেলত্তি বড় বড় কথা বললেও তখন আনচেলত্তি নিজেও এই পাপের অংশ ছিলেন!
মজার ব্যাপার, আনচেলত্তি এককালে জুভেন্টাসের কোচ ছিলেন। মার্সেলো লিপ্পি চলে যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে আনচেলত্তির হাতে দেওয়া হয় জুভেন্টাসের দায়িত্ব। ২০০১ পর্যন্ত জুভেন্টাস কোচের দায়িত্ব পালন করলেও তখন ‘তুরিনের বুড়ি’দের লিগ জেতাতে পারেননি। অন্য সব জায়গায় সফলতার স্বাদ পাওয়া আনচেলত্তি জুভেন্টাস-অধ্যায় বড়ই ম্লান। শুধু একটা ইন্টারটোটো কাপ জিতেছেন। প্রথমবার লাৎসিও, পরেরবার রোমার কাছে লিগ হারিয়েছেন।
সেই আনচেলত্তিই যখন জুভেন্টাসের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্লাবের দিকে আঙুল তোলেন, মগির সহ্য হয়নি। আনচেলত্তিকে সরাসরি বিশ্বাসঘাতক বলেছেন তিনি।
ইতালিয়ান পত্রিকা ইল লিবেরোতে নিজের কলামে আনচেলত্তিকে ধুয়ে দিয়েছেন ‘ক্যালসিওপোলি’র কারণে ফুটবল থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া এই পরিচালক, ‘প্রিয় কার্লো, তোমার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে তুমি নিজেও জুভেন্টাসে থাকার সময়টা ভুলে গিয়েছ। তুমি বুঝতেও পারছ না তুমি নিজের দিকেও আঙুল তুলছ। যেটাকে তুমি নোংরা ফুটবল বলেছ, তুমি নিজেও ওই নোংরা ফুটবলের অংশ ছিলে। ওই পাপের অংশ ছিলে। পরে ওই পাপই তোমাকে কোচ হিসেবে পরিপক্ব করেছে।’
মগি শুধু এটুকুতেই থামেননি, ‘তুমি তখন সেই নোংরা ফুটবলের অংশ ছিলে যখন বৃষ্টির মধ্যে জুভেন্টাস পেরুজিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ হেরে লিগ শিরোপা বিসর্জন দেয়। তুমি সেই নোংরা ফুটবলের অংশ ছিলে যখন জুভেন্টাস-রোমা ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে ইতালিয়ান ফেডারেশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত খেলোয়াড় নিয়ে নিয়মটা বদলে দেয়। যে কারণে রোমা হিদেতোশি নাকাতার মতো বাড়তি একজন খেলোয়াড় খেলায়, সে ইউরোপীয় ইউনিয়নর্ভুক্ত দেশের খেলোয়াড় নয়। স্বাভাবিক নিয়মে সে ওই ম্যাচ খেলতে পারত না। নাকাতাই পরে গোল করে ম্যাচ ড্র করে, যে কারণে রোমা লিগ জেতে আর তুমি (আনচেলত্তি) জুভেন্টাসের হয়ে রানারআপ হও।’
আনচেলত্তি নিজে এখন ভালো সাজছেন বলে দাবি করেছেন মগি, ‘সে সময়ে তুমি নিজে আমার অফিসে এসে অভিযোগ করতে। দাবি করতে, জুভেন্টাস অবিচারের শিকার হয়েছে। আমি বুঝলাম না এখন তুমি সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছ কেন? ঠিক সেই বিশ্বাসঘাতকের মতো, যে প্রথমে নোংরা খেলার অংশ হয়ে নিজের সুবিধা করে নেয়, পরে সুযোগমতো নিজেরাই শুদ্ধাচারের শিক্ষা দেয়।’
জুভেন্টাসের হয়ে ব্যর্থ আনচেলত্তি পরে এসি মিলানের হয়ে দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন।