ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ হাতে কিংবদন্তি
ম্যারাডোনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ হাতে কিংবদন্তি

উৎপল শুভ্রর লেখা

তিনি ছিলেন তাঁর মতো

এ পৃথিবী ছেড়ে চলে তিনি গেছেন প্রায় চার বছর আগে, ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বরে। বেঁচে থাকলে আজ ডিয়েগো ম্যারাডোনার বয়স হতো ৬৪। এ গ্রহের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে এই লেখাটা পুনঃপ্রকাশ করা হলো।

বলে কিক বা হেড করার সময় কি ব্যথা লাগে?
-না।
কিন্তু ছেলেবেলায় আমি যখন খেলতাম, এত ব্যথা লাগত কেন?
-কারণ তখন অন্য রকম বলে খেলা হতো, অনেক বেশি ভারী।
ও, আমাকে বলো তো, পেনাল্টি সেভ করতে গোলকিপারকে কী করতে হয়?
-তাঁকে অবশ্যই গোলের মাঝখানে স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং অন্য লোকটা কোন দিকে শটটা নেবে, তা অনুমান করার চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু এটা তো কঠিন, কমরেড।
-খুবই কঠিন। এ কারণেই তো আমরা বলি, পেনাল্টি মানেই গোল।
ও, আচ্ছা, তুমি কীভাবে পেনাল্টি নাও?
-আমি দুই মিটার দৌড়ে আসার পর ডান পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁ পায়ে শট নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরই শুধু মুখ তুলে তাকাই, কোন কোনায় মারব, সেটাও তখনই ঠিক করি।
‘কী বলছ এটা? তুমি বলের দিকে না তাকিয়েই শুট করো?
-হ্যাঁ।
কমরেড, মানুষের মনের ক্ষমতার কোনো সীমা–পরিসীমা নেই। আমি সব সময় নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি, এই মন শরীরকেও কত দূর টেনে নিয়ে যেতে পারবে। এটাই তো খেলার বড় চ্যালেঞ্জ। দারুণ ব্যাপার! আচ্ছা, এটা কি সত্যি, তুমি কখনো পেনাল্টি মিস করো না?
-আমি অনেক মিস করেছি।

ফুটবল নিয়ে দুজন মানুষের খুব সাধারণ কথাবার্তা। এটাই আপনার কাছে অসাধারণ হয়ে উঠবে, যখন জানবেন, এখানে প্রশ্নকর্তার নাম ফিদেল কাস্ত্রো আর যিনি উত্তর দিচ্ছেন, তাঁর নাম ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এই কথোপকথন দুজনের প্রথম সাক্ষাতে। ১৯৮৭ সালের ২৮ জুলাই মঙ্গলবার প্রায় মধ্যরাতে, প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোর হাভানা অফিসে।

বেঁচে থাকতে ফিদেল কাস্ত্রো ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন অকৃত্রিম বন্ধু। মৃত্যু বিনিসুতোর মালায় আরও বেশি করে গেঁথে দিয়েছে তাঁদের

কাস্ত্রোর বয়স তখন ম্যারাডোনার দ্বিগুণের বেশি। কাস্ত্রো ৬১, ম্যারাডোনা ২৭। বয়সের এই ব্যবধান খুব তাড়াতাড়িই ঘুচে গিয়ে অচ্ছেদ্য এক বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেলেন দুজন। যে বন্ধন ছিন্ন হয়েছে মৃত্যুর অমোঘ অঙ্গুলিহেলনে। ছিন্ন হয়েছে নাকি সেই মৃত্যুই বিনিসুতোর মালায় আরও বেশি করে গেঁথে দিয়েছে তাঁদের! চার বছর আগে-পরে একই দিনে দুজনের চলে যাওয়া অবশ্যই কাকতালীয়। তবে তিন দশকের বন্ধুত্বের ইতিহাস মনে রাখলে এই কাকতালীয় মিলটাতে একটু কেমন-কেমন লাগেই।

ম্যারাডোনাকে নিয়ে সামান্যতম আগ্রহ আছে, এমন যে কারোরই কাস্ত্রোর প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা জানা। তা কেমন ছিল দুজনের সম্পর্কটা? ‘অসমবয়সী বন্ধুত্ব’ লিখতে গিয়ে মনে হলো, এতে পুরোপুরি বোঝানো যায় না। বন্ধুত্ব তো ছিলই, তবে আত্মজীবনীতে কাস্ত্রোকে নিয়ে ম্যারাডোনা যা বলেছেন, তাতে সম্পর্কটা অনেকটা গুরু-শিষ্যের রূপ নেয়। কাস্ত্রোকে সম্বোধন করে গেছেন ‘এল কমানদানতে’ অর্থাৎ কমান্ডার বলে।

জীবনে যত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সবার ওপরে তো রেখেছেনই, তাঁকে নতুন জীবন দেওয়ার কৃতিত্বও দিয়েছেন কিউবান বিপ্লবীকে। এখানে অবশ্য অংশীদার আছে। ম্যারাডোনা লিখেছেন, ‘আজ যে আমি বেঁচে আছি, সে জন্য আমি শুধু “টু বিয়ার্ডস”কে (দুই দাড়িওয়ালা) ধন্যবাদ দিতে পারি: ঈশ্বর এবং ফিদেল।’

‘এল ডিয়েগো’ নামের আত্মজীবনীতে কাস্ত্রোর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে ওই ফুটবলীয় কথোপকথনের আগে-পরের কিছু কথাবার্তারও বর্ণনা আছে। আছে ম্যারাডোনার অসীম মুগ্ধতার কথা। সব বিষয়ে কাস্ত্রোর পাণ্ডিত্য দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি একটা এনসাইক্লোপিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। কাস্ত্রোকে দেখার অনুভূতি বোঝাতে দিয়েছেন হাত দিয়ে আকাশ ছোঁয়ার উপমা।

ম্যারাডোনার মৃত্যূর পর বুয়েনস এইরেসে তাঁর আত্মজীবনী হাতে এক ভক্ত। আত্মজীবনী পড়লেই তাঁকে চেনার নিশ্চয়তা নেই

২.
আত্মজীবনী পড়লেই মানুষটাকে চেনা যাবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নোবেলজয়ী ত্রিনিদাদিয়ান লেখক ভি এস নাইপল বরং উল্টোটাই বলেছেন, ‘আত্মজীবনী তথ্যের বিকৃতি ঘটাতে পারে, ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে সাজাতে পারে; কল্পকাহিনি বরং কখনো মিথ্যা বলে না, এটা লেখককে পুরোপুরি তুলে ধরে।’

ম্যারাডোনার আত্মজীবনীতে তথ্যের বিকৃতি হয়তো ঘটেছে, হয়তো ঘটেনি। কোনো ঘটনা নতুন করে সাজিয়েও থাকতে পারেন, হয়তো সাজাননি। নিশ্চিত হওয়ার তো কোনো উপায় নেই। এই বইয়েই তো বলেছেন, ‘আমার পুরো জীবনই ক্যামেরার সামনে কেটেছে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এর বাইরেও এমন অনেক কিছু আছে, যা শুধু আমিই জানি।’

সেসব ঘটনাকে যেভাবে বলতে চান, সেভাবেই বলেছেন। যতটুকু বলতে চান, বলেছেন ততটুকুই। তবে আত্মজীবনীর যে ‘দুর্বলতা’র কথা বলেছেন নাইপল, সেটি অন্তত এখানে নেই। লেখকের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজটা তা দারুণভাবে করেছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে বুঝতে তাই তাঁর আত্মজীবনী পড়লেই চলবে। পাতায় পাতায় খুঁজে পাওয়া যাবে নানা রঙের ম্যারাডোনাকে। আবেগপ্রবণ ম্যারাডোনা, খেয়ালি ম্যারাডোনা, ছেলেমানুষ ম্যারাডোনা, ঠোঁটকাটা ম্যারাডোনা, বিদ্রোহী ম্যারাডোনা, অননুমেয় ম্যারাডোনা, আত্মম্ভরী ম্যারাডোনা, বৈপরীত্যে ভরা ম্যারাডোনা।

মনে যা আছে, তা বলে ফেলার অভ্যাস এখানেও সগৌরবে প্রকাশিত। বিখ্যাত মানুষের মধ্যে কে তাঁকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছেন, তা বলতে গিয়ে কাস্ত্রোকে রেখেছেন এক নম্বরে। তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরই জানিয়ে দিচ্ছেন, বিখ্যাত মানুষের মধ্যে কাকে তাঁর একদমই পছন্দ হয়নি, যা জানানো মোটেই জরুরি কিছু ছিল না। এমন ভাষায় তো নয়ই। কিন্তু তিনি ম্যারাডোনা বলেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর চোখে কাস্ত্রোর বিপরীত মেরুতে আছেন মোনাকোর যুবরাজ আলবার্তো। কারণ একবার মন্টে কার্লোতে এই ‘সারমেয় শাবক’-এর আমন্ত্রণে খেতে যাওয়ার পর সেই খাওয়ার বিল তাঁকে দিতে হয়েছে।

১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে বোকা বানিয়ে ম্যারাডোনার সেই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল

‘সান অব দ্য বিচ’-এর সবচেয়ে ভদ্র বঙ্গানুবাদ হিসেবে এই ‘সারমেয় শাবক’-ই পাওয়া গেল। পরদিন সকালে কাজ আছে বলে প্রিন্স আলবার্তো বিল না দিয়ে আগেই চলে যাওয়ায় যে ম্যারাডোনা তাকে এই গালিটা দিয়েছেন, তা তো বুঝতেই পারছেন। অনেক টাকা বিল এসেছে জানিয়ে ম্যারাডোনা এরপর মজা করে বলেছেন, ‘প্রিন্সেস স্টেফানি অথবা ক্যারোলিনের সঙ্গে দেখা করার আশা নিয়ে আমি মোনাকো গিয়েছি আর আমাকে কিনা ওই আলবার্তো ছোঁড়াকে দেখার জন্য গুচ্ছের টাকা খরচ করতে হলো।’

ইংলিশ গোলকিপার পিটার শিলটন সম্পর্কে যা লিখেছেন, সেটিও ক্ল্যাসিক ম্যারাডোনা। বইয়ের শেষে এক শ জন ফুটবলারের একটা তালিকা করেছেন। কারও সম্পর্কে হয়তো এক–দুই লাইন লিখেছেন, কারও সম্পর্কে বড় একটা প্যারাগ্রাফ। পিটার শিলটনকে নিয়ে লেখাটা এর মাঝামাঝি আকৃতির, যার পুরোই শ্লেষে ভরা...‘আমার হাতের গোল নিয়ে ওর অনেক রাগ। এত যে কথা বলো, অন্যটা নিয়ে কী বলবে, শিলটন?

ওটা চোখে দেখো না? ওর টেস্টমোনিয়ালে ও আমাকে আমন্ত্রণ জানায়নি। আহা রে, দুঃখে আমার বুকটা ফেটে গেছে। আচ্ছা, গোলকিপারের টেস্টিমোনিয়ালে যেতে চায়, এমন মানুষ কজন আছে? গোলকিপার, ফু:!’

১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ করেছিলেন ম্যারাডোনা। সেই গোলের মুহূর্তখানেক আগের ছবি

৩.
যা নিয়ে তাঁর নিজের বিব্রত থাকা উচিত ছিল, উল্টো তা নিয়েই সব সময় গর্ব করে গেছেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিখ্যাত ওই ম্যাচ। আলাদা নামে পরিচিতি পেয়ে যাওয়া পুরো বিপরীত দুই গোল। ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র চার মিনিট আগে ‘হ্যান্ড অব গড’। দ্বিতীয়টির স্বীকৃতি এসেছে গণভোটে, প্রথমটির নাম দিয়েছেন ম্যারাডোনা নিজেই। তা না হয় দিলেন, কিন্তু দুটি গোলই তাঁর প্রায় সমান পছন্দের, এই দাবি কীভাবে করেন? প্রথম গোলটা তো ছিল পরিষ্কার প্রতারণা।

এর ব্যাখ্যা পেয়েছিলাম ম্যারাডোনা-সতীর্থ হোর্হে ভালদানোর একটা সাক্ষাৎকারে। ভালদানো খেলা ছাড়ার পর রিয়ালের কোচ হয়েছেন, পরে স্পোর্টিং ডিরেক্টর। টিভিতে বিশেষজ্ঞ ধারাভাষ্য দেন, পত্রপত্রিকায় কলাম লেখেন, যাতে শেক্‌সপিয়ার-বোর্হেস থেকে উদ্ধৃতি থাকে। ফুটবল দার্শনিক তো আর তাঁকে এমনি বলা হয় না। সেই ভালদানো আর্জেন্টিনার সমাজ-দর্শন সম্পর্কে বলেছিলেন, আর্জেন্টিনায় কেউ চাতুরী করে, ঘুরপথে ওপরে উঠলে সৎ পথে ওপরে উঠেছে, এমন কারও চেয়ে তাকে বেশি সম্মানের চোখে দেখা হয়।

ভালদানোর কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ওই ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল যে শুধু ম্যারাডোনার নয়, আর্জেন্টিনিয়ানদেরও খুব প্রিয় হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ম্যাচে গ্যালারিতে ‘লা মানে দে দিওস’ লেখা ব্যানার দেখেও তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই লা মানে দে দিওস মানে স্প্যানিশ ভাষায় ‘হ্যান্ড অব গড’। যে গোল সম্পর্কে ম্যারাডোনা অনেকবারই বলেছেন, এতে তাঁর ইংল্যান্ডের পকেট মারার মতো আনন্দ হয়েছে। এমনও তো মনে হয় বলেছেন, ‘চোরের পকেট মারলে কোনো অন্যায় হয় না।’

ফুটবলের বাইরেও ম্যারাডোনা অনেকের কাছে লড়াইয়ের প্রেরণা। রোমে তাঁর এক দেয়ালচিত্র

এক বছর পর বিবিসির এক সাংবাদিককে যা বলেছিলেন, তা আরও মজার, ‘এটা এক শ ভাগ বৈধ। কারণ রেফারি এটাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। রেফারির সততা নিয়ে সন্দেহ করব, আমি মোটেই এমন মানুষ নই।’

এসব শুনে ইংরেজদের পিত্তি জ্বলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কে জানে, ম্যারাডোনা হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই এ নিয়ে এত সাগ্রহে কথা বলতেন।

বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলার সময়ও হাত দিয়ে এমন গোল করার কথা অকপটে জানিয়ে দিয়েছেন আত্মজীবনীতে। একবার এক রেফারি আর কখনো এমন না করতে সতর্ক করে দেওয়ার পর তাঁকে কী বলেছেন, সেটাও। ‘থ্যাংক ইউ। তবে আমি কথা দিতে পারছি না।’

ঝঞ্ঝার মতো ৬০ বছরের যে জীবনটা কাটিয়ে গেছেন পৃথিবীতে, তা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই দুই গোলের মতোই বৈপরীত্যে ভরা! মাদকাসক্তি, অবাধ যৌনতা, আজ এই বিতর্ক, কাল ওই বিতর্ক! মাঠের বাইরে ম্যারাডোনার বিপর্যস্ত রূপ দেখে ওই ভালদানোই দারুণ একটা কথা বলেছিলেন, ‘বেচারা ডিয়েগো! কত বছর ধরে আমরা ওকে শুধু বলে যাচ্ছি, তুমি ঈশ্বর, তুমি তারকা, তুমিই আমাদের উদ্ধারকর্তা; কিন্তু একটা কথাই বলতে ভুলে গেছি, তুমিও মানুষ!’

সমস্যাটা বোধ হয় ওখানেই হয়েছে। আবার দেখুন, যে ম্যারাডোনাকে নিয়ে এত সব কেচ্ছাকাহিনি, সেই ম্যারাডোনাই ফুটবলারদের অধিকার রক্ষায় সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। ভ্যাটিকানে পোপের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অবলীলায় বলে ফেলছেন, সিলিংয়ে এত সোনা, দরিদ্র শিশুদের জন্য মায়াকান্না না কেঁদে তা বিক্রি করে দিলেই তো হয়। চাইলে এমন উদাহরণ তো আরও কতই দেওয়া যায়।

সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন শুধুই তাঁর মতো। যে আত্মজীবনী নিয়ে এত কথা হলো, তাতে মহা আলোচিত ওই ছবিটার কথাই ধরুন না! বাথটাবে নগ্ন দাঁড়িয়ে। দুই হাতে ঢেকে কোনোমতে লজ্জা নিবারণ করা ম্যারাডোনার মুখে হাসি। নিচে ক্যাপশনের প্রথম লাইনে ঘোষণা: ‘আমার গোপন করার মতো কিছু নেই, কিছুই না।’ ওই ছবি বইয়ে দেওয়ার আগে অন্য কেউ এক শ বার ভাবতেন এবং শেষ পর্যন্ত হয়তো দিতেন না। ম্যারাডোনা হয়তো একবারও ভাবেননি। কারণ তিনি ম্যারাডোনা।

মোহনীয় ভঙ্গিতে ম্যারাডোনা। তাঁর এমন অনেক ছবি অমর হয়ে থাকবে ভক্তদের স্মৃতিতে

৪.
সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে—এ নিয়ে তর্ক আছে, থাকবেও। তবে ‘বিশ্বকাপ খেলেননি’ কথাটা যোগ করে দিলে তখন আর কোনো তর্ক থাকে না।

অবিসংবাদিতভাবে এই স্বীকৃতি জর্জ বেস্টের। কী আশ্চর্য, ফিদেল কাস্ত্রোর মতো বেস্টও তো মিলে যাচ্ছেন ম্যারাডোনার সঙ্গে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তির বর্ণাঢ্য জীবনের সমাপ্তিও যে পনেরো বছর আগের এক ২৫ নভেম্বরেই!

আত্মজীবনীতে ম্যারাডোনা যে এক শ ফুটবলারের কথা লিখেছেন, তাতে অবধারিতভাবেই আছেন জর্জ বেস্ট। তাঁকে নিয়ে লেখাটাই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। মাত্র এক লাইনের। আ গ্রেট প্লেয়ার বাট ক্রেজিয়ার দ্যান মি।

মাঠের বাইরে জর্জ বেস্টও উদ্দাম এক জীবন কাটিয়েছেন, তাই বলে ম্যারাডোনা তাঁকে ‘ক্রেজিয়ার’ বললেই তিনি মানবেন নাকি! কে জানে, অনন্তলোকে এরই মধ্যে এ নিয়ে দুজনের তর্ক বেধে গেছে কি না!