>সুইডেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব সেভ করে ম্যাচ-সেরা। অনেকের চোখে জর্ডান পিকফোর্ড এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়
ফুটবলের মঞ্চে তাঁর অবিশ্বাস্য উত্থান! এক বছর আগেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেনা মুখ ছিলেন না। হুট করে খেলতে এলেন এভারটনে। আর আগে ধারে ধারে এ-ক্লাব ও-ক্লাব করে বেরিয়েছেন। কোথাও থিতু হতে পারছিলেন না। ধারে খেলতে খেলতেই যে অলক্ষ্যে ধার বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন! এভারটনে ভালো করেই জায়গা পেলেন ইংল্যান্ড দলে। বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মোটে ৩টি ম্যাচ! সেই জর্ডান পিকফোর্ড এখন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আলোচিত তারকা। তাঁর হাত বারবার বাঁচিয়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ডকে। ইংলিশ পত্রিকাগুলো শিরোনাম করছে: হ্যান্ড অব জর্ড! এমন আলোচনাও হচ্ছে, বিশ্বকাপের পরে তাহলে জর্ডান পিকফোর্ডের নামের আগে ‘স্যার’ যোগ হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ খেলা সাবেক ডিফেন্ডার জিমি কনার্ড মনে করেন, হওয়া উচিত। পরশু বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ম্যাচটা শেষে তিনি টুইট করেছেন, ‘এই বিশ্বকাপ শেষে পিকফোর্ড যদি নাইটহুড না পায়, আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলব।’
কথাটা হয়তো মজা করেই বলা। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, ২৪ বছর বয়সী ইংলিশ গোলরক্ষককে নিয়ে এ দাবিটা কিন্তু টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু কনার্ড নয়, এটা এখন আরও অনেক ইংল্যান্ড সমর্থকের দাবি। এই বিশ্বকাপে সবাইকে এতটাই মুগ্ধ করেছেন পিকফোর্ড। এই সূত্রেই ভেসে আসছে পিকফোর্ডের পুরোনো কিছু টুইট। গত বিশ্বকাপের উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন পিকফোর্ড টুইট করেছিলেন, ‘আচ্ছা, ইন্টারনেটে কোথায় গেম অব থ্রোনস (টিভি সিরিজ) দেখতে পাব, বলতে পারেন?’
পানামা আর তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গ্রুপের ম্যাচ দুটিতে খারাপ খেলেননি। কিন্তু তখন আলোটা হ্যারি কেইনের ওপর এত বেশি ছিল যে পিকফোর্ডকে নিয়ে মাতামাতির সময় ছিল না। উল্টো বেলজিয়ামের বিপক্ষে একটা গোল খেয়ে সমালোচিতও হলেন। আদনান ইয়ানুজাইয়ের নিরীহ একটা শট ঠেকাতে পারেননি পিকফোর্ড। যেটা দেখে বেলজিয়ামের ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া খোঁচাও মেরেছিলেন পিকফোর্ডকে, ‘আমি হলে ওই শট ধরে ফেলতাম। ও তো লাফিয়েও কিছু করতে পারবে না।’
৬ ফুট ১ ইঞ্চির পিকফোর্ড জবাবটা দিলেন পরের ম্যাচেই। শেষ ষোলোতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে কার্লোস বাক্কার শেষ শটটি দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে আটকে দেওয়ার পর। ম্যাচ শেষে কোর্তোয়াকে পাল্টা তিরও ছোড়েন, ‘আমি দেখতে বড়সড় গোলরক্ষক কিনা, ওতে কিছু যায় আসে না। আমার শক্তি আছে, গতিও। গোলরক্ষকদের কাজ সেভ করা, আমি সেটা করতে পারলেই খুশি।’ কোর্তোয়া অবশ্য পরে সন্ধি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বলেছেন, তিনি পিকফোর্ডকে আঘাত দিয়ে কিছু বলতে চাননি। উচ্চতা বেশি থাকলে যে সুবিধা হয়, শুধু সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন।
পিকফোর্ডের তাতে মন গলেছে কি না, বোঝা যায়নি। তবে নিজেকে প্রমাণ করার জেদটা বোধ হয় কমেনি। সুইডেনের বিপক্ষে শেষ আটে তাই আগের ম্যাচের পারফরম্যান্সকেও ছাড়িয়ে গেলেন ইংলিশ গোলরক্ষক। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের জালে অসাধারণ তিনটি শট নিয়েছে সুইডেন। তিনবারই ব্যর্থ হতে হয়েছে পিকফোর্ডকে হারাতে না পেরে। গোলদাতা ডেলে আলি বা হ্যারি ম্যাগুয়ার নয়, ম্যাচ-সেরাও তাই পিকফোর্ড।
অনেকের চোখে এভারটনের এই গোলরক্ষক রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়ও! ২৮ বছর আগে ইংল্যান্ড সর্বশেষ সেমিফাইনালে যিনি গোলপোস্টের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই পিটার শিলটন তো মুগ্ধ উত্তরসূরির পারফরম্যান্সে। সেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে টুইটে, ‘অসাধারণ তিনটি সেভ করে পিকফোর্ডই আমাদের সেমিফাইনালে নিয়ে গেল।’
পিকফোর্ড অবশ্য এখনই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন না। তাঁর নিরাবেগ প্রতিক্রিয়া, ‘আমার কাজই সেভ করা আর দলকে জিততে সাহায্য করা। আমি ওই চেষ্টা করে যাব।’ তাঁর কাজটা যে এখনো শেষ হয়নি, সেটাও ভালোই মনে রাখছেন, ‘সর্বশেষ ইংল্যান্ড যখন সেমিফাইনাল খেলেছিল, আমার জন্মই হয়নি। কিন্তু এবার আমরা অনেক দূর যেতে চাই এবং নতুন ইতিহাস লিখতে চাই।’
‘ইতিহাস লেখা’ মানে যে ৫২ বছর পর বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরের ফেরা, সেটা তো আগেই বলেছেন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। সে জন্য পিকফোর্ড আর মাত্র দুটি ম্যাচে এই ফর্মটা ধরে রাখতে পারলেই তো হয়!