চট্টগ্রামের ফুটবলে অনেক দিন ধরেই চলছে ভাটার টান। কখন কোন খেলা হয়, সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরাও সেভাবে আর খোঁজও রাখেন না। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগ চলছিল কদিন আগেও, কিন্তু এই লিগের খবর জাতীয় দৈনিকে পাতায় আসে না আর আগের মতো।
আঁধার কাটিয়ে আলোয় ফিরতে স্থানীয় সংগঠকেরা নিলেন বড় এক উদ্যোগ। সেটিই পর্দা তোলার অপেক্ষায় এখন। আর কয়েকঘন্টা পরই শুরু হতে যাচ্ছে আট দলের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। যা নিয়ে চট্টগ্রামের সাবেক নামী ফুটবলারদের মনেও কাজ করছে রোমাঞ্চ।
চট্টগ্রামের ফুটবলের কথা বললে যে নামটা সবার আগে মনে পড়ে, আশির দশকের সেই তুখোড় ফুটবলার আশীষ ভদ্র বলছিলেন, ‘আমার তো আসলে তর সইছে না।’ টুর্নামেন্টটা নিয়ে তাঁর আগ্রহের কারণটাও জানালেন, ‘রাতারাতি সব বদলে যাবে না। তবে এটা চট্টগ্রামের ফুটবলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবেই। তরুণটা খেলার প্রতি আকৃষ্ট হবে, মাঠে আসতে উৎসাহ পাবে। চট্টগ্রামের ফুটবলের জন্য এরচেয়ে ভালো উদ্যোগ আর হয় না।’
চট্টগ্রাম শুরু করেছে, আস্তে আস্তে এমন টুর্নামেন্ট হোক অন্য বড় বড় জেলায়ও। অন্য অনেকের মতো আশীষের চাওয়াটাও মিলে যাচ্ছে একই বিন্দুতে, ‘রাজশাহী, খুলনা, সিলেট বা অন্য বড় শহরে যদি এমন টুর্নামেন্ট হয়, আমাদের ফুটবল আবার চাঙা হবেই।’ শুধু তো ফুটবল চাঙা হওয়া নয়, এই টুর্নামেন্ট ঘিরে অনেক মানুষের সম্পৃক্ততা, লিয়াজোঁ হিসেবে এক ঝাঁক নবীনের কাজ করা, এসব দক্ষ ফুটবল-লোকবল গড়ে তোলার পথে সহায়ক বলছেন আশীষ। তবে সব ছাপিয়ে টুর্নামেন্টটির ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তিনি, ‘একবার আয়োজন করে হারিয়ে গেলে কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদে লাভ হবে না।’ আয়োজকেরা অবশ্য এটি উপলব্ধি করেই শেখ কামাল টুর্নামেন্ট প্রতি বছর করার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আরেক সাবেক তারকা ফখরুল ইসলাম কামালের জন্য এটি বড় এক উপহার। অনেক দিন ধরেই কানাডায় প্রবাসী, কয়েক দিন আগে দেশে এসেছেন। এসেই দেখেন তাঁর শহরে ফুটবল নিয়ে সাজ-সাজ রব। তবে কণ্ঠে খানিকটা বিস্ময়ও খেলা করে, ‘এমন একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে, এ তো বিশাল ব্যাপার! তাও আবার একটা ক্লাব আয়োজন করছে। এত বড় বাজেটের টুর্নামেন্ট!’
ধন্যবাদ দিলেন আয়োজকদের, ‘চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তা শামসু ভাই (সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী), চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির ভাইসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই বড় করে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হবে। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁরা।’
মাঠে গিয়ে খেলা দেখার ইচ্ছে আছে এফ আই কামালের। চট্টগ্রামবাসীকেও মাঠে আসার ডাক দিলেন। একই সঙ্গে আয়োজকদের একটা পরামর্শও দিলেন, ‘বিদেশি দল নিয়ে এখন টুর্নামেন্ট হচ্ছে, ভালো কথা। আমি চাইব স্কুল পর্যায়েও যেন এমন আয়োজন হয়। সেটি হবে আগামীর ফুটবলার তৈরিতে অনেক বড় কার্যকর উদ্যোগ।’
চট্টগ্রামের আরেক ফুটবলার সত্যজিৎ দাস রুপুর কণ্ঠেও তৃণমুলে যাওয়ার তাগিদ। তবে ‘নগদ নারায়ণ’ও তো চাই। সেই নগদ প্রাপ্তি ঠিকই দেখতে পাচ্ছেন ঢাকা আবাহনীর ম্যানেজার। সবকিছু কাছ থেকে দেখে রুপুর মনে হচ্ছে, ‘এই আয়োজন সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে। খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা, সবাই চাইবে ভালো পারফর্ম করতে।’
শুধু চট্টগ্রাম নয়, গোটা অঞ্চলেই এর ইতিবাচক প্রভাব দেখছেন স্থানীয় কোচ নজরুল ইসলাম লেদু। চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর হিসেবে যুক্ত আছেন এই টুর্নামেন্টে। তবে শুধু কোচের চোখ দিয়ে নয়, একজন চাটগাঁবাসী হিসেবে নজরুল ইসলাম উৎফুল্ল এই ভেবে, ‘শেখ কামাল টুর্নামেন্টকে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার...গোটা অঞ্চলের ফুটবলেই নবীনদের কাছে নতুন দিনের ডাক বলব। আশা করি, এই অঞ্চলে ফুটবল ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য, দর্শক আবার ফিরবে মাঠে।’