টাকা পেতে বাফুফেকে শর্ত

শর্ত পূরণ করে টাকা পেতে হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে। ফাইল ছবি
শর্ত পূরণ করে টাকা পেতে হবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে। ফাইল ছবি
>গত বছর বাজেটে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। এবার দেয়নি। এমনকি গতবারের অর্ধেক টাকাই এখনো পায়নি বাফুফে।

গত বছর জাতীয় বাজেটে ফুটবলকে আলাদা করে ২০ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার। তখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) বলেছিল, সরকার ফুটবল উন্নয়নে প্রতিবছরই বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখবে। কিন্তু এবারের বাজেটে ফুটবলের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।

করোনার প্রভাবই এর অন্যতম কারণ। তবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেট এবার ২২ কোটি টাকা বেড়েছে। তাহলে ফুটবলের অনুদান বাদ পড়ল কেন? এটা বড় প্রশ্ন। বাফুফে এবার ৪০ কোটি টাকা চায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু টাকা কেন পাওয়া যায়নি গত পরশু এক ভিডিও বার্তায় বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সেই ব্যাখ্যা দেন, 'কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার আমরা সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা করিনি। পরিস্থিতি ভালো হলে হয়তো এ নিয়ে কাজ করব।'


সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফুটবল ফেডারেশন আগের ১০ কোটি টাকা সঠিকভাবে বা শর্ত মেনে খরচ করেনি। ফুটবল ফেডারেশন অবশ্য বলছে, সরকারকে জানিয়েই ওই টাকা খরচ করা হয়। খরচের হিসাবও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে জমা দেয় বাফুফে। যদিও সেই খরচের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ঘাটতি থাকায় এনএসসি আবার সেগুলো চায়। বাফুফে পরে এর ব্যাখ্যা দেয়।


বাকি ১০ কোটি পেতে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দিতে হবে বাফুফেকে। 'টাকা দিলাম আর ১০ দিনের মধ্যে সব শেষ' ব্যাপারটা এমন যাতে না হয়। এ ব্যাপারে গত ১০ জুন বাফুফেকে দেওয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এই বছরে কোনো সুনির্দিষ্ট কার্য পরিচালনার জন্য নয়। বরং এই তহবিল অথবা তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা দীর্ঘ মেয়াদে ফুটবলে নানাবিধ উন্নয়নের ব্যয় করার লক্ষ্যে এককালীন এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ এক পত্রে জানিয়েছে।'


জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফুটবলকে প্রথম কিস্তির ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল মূলত সেটা কোথাও রেখে প্রাপ্ত আয় খরচ করতে। সেটা কীভাবে কী হয়েছে মন্ত্রণালয় দেখছে। এখন বাকি ১০ কোটি টাকা টুর্নামেন্ট আয়োজন বা এ–জাতীয় খাতে খরচ করা চলবে না। ফুটবল ফেডারেশনকে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।' প্রশ্ন আসে এবার তো বরাদ্দ পায়নি ফুটবল? সচিব বলেন, 'পায়নি বলে পাবে না এমন নয়। সরকার বিভিন্ন খাতে সারা বছরই টাকা দেয়।


বাফুফে জানিয়েছে, আগের ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৬৪টি জেলা ও ৮টি বিভাগকে ৬ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের ৪৭টি ক্লাবে দেওয়া হয় দেড় কোটি টাকার মতো। জাতীয় দল ২ কোটি ৭৫ লাখ, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৬৬ লাখ আয় করে ৫০-৫৫ লাখ খরচ। এ ছাড়া প্রিমিয়ার, বিসিএল এবং নারী ফুটবলেও টাকা খরচ করা হয়েছে।


কিন্তু ফলপ্রসূ কোনো কাজে না লাগিয়ে জাতীয় দল, প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, মেয়েদের ফুটবল বা এ–জাতীয় নিয়মিত খাতে সরকারি বিশেষ বরাদ্দ খরচ কেন? এটা বড় প্রশ্ন। নারী ফুটবলে ইউনিসেফ ও ঢাকা ব্যাংক বছরে ৪ কোটি টাকার মতো দেয় বাফুফেকে। এরপরও নারী ফুটবলে সরকারি বিশেষ বরাদ্দ থেকে হাত দেওয়ার কারণ কী? এসব প্রশ্নে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, 'আগের ১০ কোটি টাকা আমরা সরকারকে জানিয়েই খরচ করেছি। বাকি টাকা পেতে সরকার বলছে, টাকাটা দুই-তিন বছরব্যাপী খরচ বা আমানত রেখে লভ্যাংশ খরচ করতে। সরকারের চাহিদামতো একটা সঠিক পরিকল্পনা সাত দিনের মধ্যে সেটা জমা দেব। আশা করছি ৩০ জুনের মধ্যেই বাকি ১০ কোটি টাকা পেয়ে যাব।'


টাকা যদি পায় বাফুফে, সরকারি অর্থ দেশের ফুটবল উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদে কাজে না লাগালে সবই যাবে বৃথা।