বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন জয়া।
সুযোগটা যে এভাবে পেয়ে যাবেন, ভাবেননি জয়া চাকমা। ২০১০ সাল থেকে ফুটবল মাঠে বাঁশি বাজাচ্ছেন। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ম্যাচ পরিচালনা করছেন ২০১৩ থেকে। নারী রেফারি হিসেবে বাংলাদেশের অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে জয়ার নাম। এবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করা বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হিসেবেও নাম তুলেছেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার জয়া।
জয়ার মতো বাংলাদেশের আরেক নারী রেফারি সালমা আক্তারও ২০১৯ সালে ফিফা রেফারি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তবে সালমা এখন পর্যন্ত শুধু বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাঁশি বাজিয়েছেন। জাতীয় দলের কোনো ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা শুধু রাঙামাটির জয়ারই। ২৩ জুন মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচে প্রধান রেফারির দায়িত্বে ছিলেন জয়া। ২৬ জুন শেষ ম্যাচে ছিলেন চতুর্থ রেফারি।
কমলাপুরের টার্ফে ২৬ জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের মেয়েরা যখন ট্রফি নিয়ে উল্লাস করছিলেন, রোমাঞ্চিত দেখাচ্ছিল পুরস্কার মঞ্চের পাশে দাঁড়ানো জয়াকেও। সেটা শুধু বাংলাদেশের মেয়েদের অর্জনের জন্য না, নিজের জন্যও।
বিকেএসপির ফুটবল কোচ জয়া শারীরিক শিক্ষার ওপর স্নাতকোত্তর করছেন ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেয়েদের ম্যাচ পরিচালনার প্রস্তাবটা জয়া পান সেখানে থাকা অবস্থাতেই, ‘আমি তখন বেনারসে ছিলাম। বাফুফে থেকে জানানো হলো ফিফা প্রীতি ম্যাচে আমাকে রেফারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওরা জানতে চেয়েছিল, আমি আসতে পারব কি না। তখন বেনারসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ ছিল। কিন্তু সিনিয়র ফুটবলে প্রথম ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ, তাই না করতে পারিনি। আমি এই ম্যাচটার অপেক্ষায়ই ছিলাম।’
এর আগে বয়সভিত্তিক দলের ৩৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাঁশি বাজানো জয়ার কাছে এই ম্যাচটা অন্য রকম, ‘ফিফা আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা এটাই প্রথম। স্বাগতিক দলের একজন হিসেবে আলাদা একটা চাপ থাকে। প্রতিপক্ষ যেন মনে না করে, সে বাংলাদেশের রেফারি, পক্ষ নিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে। আমিও সেটাই দেখিয়েছি।’
সাধারণত ফিফা প্রীতি ম্যাচে স্বাগতিক দেশের কোনো রেফারি থাকার নিয়ম নেই। তবে এবার ফিফার কাছে বাফুফে স্থানীয় রেফারিদের নামের তালিকা পাঠানোর পর সম্মতি মেলে। প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়াও আপত্তি করেনি। সব মিলিয়ে জয়ার ভাগ্যটাও ভালো ছিল বলা যায়।
আগামী আগস্টে নেপালে হবে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। জয়ার আশা সেখানেও বাঁশি বাজানোর, ‘ফিফা ব্যাজ পেলেও করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খুব বেশি পাইনি। সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে এত দিন ম্যাচ চালিয়েছি। এখন সাফে ম্যাচ পরিচালনা করতে পারলে একটা লক্ষ্য পূরণ হবে।’
ঘরোয়া ফুটবলে ছেলেদের ম্যাচেও বাঁশি বাজাতে চান জয়া, ‘যদি সুযোগ হয় প্রিমিয়ার লিগেও ম্যাচ পরিচালনা করতে চাই। একবার অন্তত আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ পরিচালনা করতে পারলে খুশি হতাম।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা জয়ার আরও একটা স্বপ্ন আছে, ‘একবার জার্মানিতে ফুটবল ফেস্টিভ্যালে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ম্যাচ পরিচালনা করেছিলাম। ওটা ছিল একাডেমির বয়সভিত্তিক দলের প্রীতি ম্যাচ। তবে সত্যি একদিন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ চালানোর স্বপ্ন দেখি।’