স্টিভেন জেরার্ডের জন্য গতকালের রাতটা ছিল আবেগঘন। লিভারপুলের ঘরের ছেলে কালই প্রথম তাঁর সাবেক দলের মুখোমুখি হলেন, তাও আবার কোচ হিসেবে। অ্যাস্টন ভিলার কোচ হিসেবে কাল চিরচেনা অ্যানফিল্ডে পা রেখেছিলেন লিভারপুলের হয়ে ১৭ মৌসুম কাটানো জেরার্ড।
লিভারপুলেই জেরার্ডের জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। লিভারপুলের একাডেমি থেকে উঠে এসে মূল দলে খেলা। সেখান থেকে অধিনায়ক, ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তি হিসেবে নাম লেখানো। অনেকেই তো তাঁকে লিভারপুলে খেলে যাওয়া সর্বকালের সেরা ফুটবলারই বলেন। লিভারপুলকে নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলা জেরার্ডের অ্যানফিল্ডে প্রত্যাবর্তনটা অবশ্য সুখের হয়নি। মোহাম্মদ সালাহর একমাত্র গোলে জেরার্ডের অ্যাস্টন ভিলাকে হারিয়েছে লিভারপুল।
অ্যানফিল্ডের দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনি, দাঁড়ানো অভিবাদন জেরার্ডকে নিশ্চিত করেই ছুঁয়ে গেছে। তবে সাবেক লিভারপুল তারকা এটিকে খুব একটা প্রশ্রয় দেওয়ার কারণ দেখেন না। পেশাদারি ফুটবলে এ মুহূর্তে তাঁর অগ্রাধিকার অ্যাস্টন ভিলা। তাই ১৭ বছরের বন্ধন, লিভারপুলের প্রতি আবেগ, সমর্থকদের ভালোবাসা—সবকিছুকেই একপাশে ঠেলে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। ম্যাচের আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি যে আমি মাঠে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই অ্যানফিল্ডের দর্শকেরা জোরে আওয়াজ করে উঠবে। লিভারপুলের সমর্থকদের সঙ্গে আমার যে বন্ধন, সেটি সবাই জানে। এটা খুবই স্বাভাবিক কারণ লিভারপুলে আমি অনেক বছর কাটিয়েছি।’
তবে জেরার্ডের যে লিভারপুল সমর্থকদের সেই সংবর্ধনায় আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন, সেটি জানিয়েছেন ম্যাচের পর, ‘আমার অগ্রাধিকার অ্যাস্টন ভিলা। আমার অ্যাস্টন ভিলা সমর্থকদেরই বেশি দরকার।’
লিভারপুলের হয়ে ৫০৪ ম্যাচ খেলা জেরার্ড ২০০৫ সালে এসি মিলানের বিপক্ষে লিভারপুলের সেই ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে দলকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। তবে তাঁর অপ্রাপ্তিও আছে অনেক। এই ক্লাবে এতগুলো বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও তিনি লিভারপুলের হয়ে যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। লিগের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি লিভারপুল–সমর্থকদের কাছে ট্র্যাজিক হিরো হয়েই আছেন।
২০১৫ সালে জেরার্ডের লিভারপুলকে বিদায় জানান। কী অদ্ভুত! এর পর থেকেই ক্লাবের জয়যাত্রা যেন নতুন করে শুরু হয়। স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সের যুব দলকে কোচিং করিয়ে পরে তিনি মূল দলের কোচ হন। রেঞ্জার্সকে স্কটিশ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানোর পর এখন অ্যাস্টন ভিলাতে থিতু তিনি। ভিলার কোচ হিসেবে কাজ করার মধ্যেই অনেক লিভারপুল–সমর্থক তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। যে ক্লাবে তিনি ১৭ বছর কাটিয়েছেন, সে ক্লাবেরই ডাগআউটে একদিন তিনি ফিরবেন—এ স্বপ্ন অন্তত কোনো লিভারপুল সমর্থক যদি জেরার্ডকে নিয়ে দেখেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কাল তো লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সোজাসাপটাই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে জেরার্ড যদি লিভারপুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি দারুণ খুশি হবেন, ‘আমি খুবই খুশি হব যদি জেরার্ড দায়িত্ব নেয়। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, ভবিষ্যতে হয়তো এমন দিন আসবে। কিছুদিন আগে চেলসির কিংবদন্তি ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড কোচের দায়িত্ব পালন করেছে। জেরার্ডও তেমনভাবেই আসবে। তবে লিভারপুলের মতো দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে জেরার্ডের বয়স এখনো অনেক কম। বিশ্বমানের খেলোয়াড় হলেই যে বিশ্বমানের কোচ হওয়া যাবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে আমি জেরার্ডের মধ্যে দক্ষতা দেখি।’
তবে ক্লপ জেরার্ডের অ্যানফিল্ডে ফেরা নিয়ে যতটা না উচ্ছ্বসিত ছিলেন, জেরার্ড নিজে অবশ্য ছিলেন ক্লপের বিপরীত অবস্থানেই, ‘আপনাদের বুঝতে হবে, প্রিমিয়ার লিগে খেললে এমন কিছু দিন আপনার জীবনে আসতেই পারে। কিন্তু এত কিছুর পরও আমি অ্যাস্টন ভিলার দিকেই মনোযোগ আবদ্ধ করে রেখেছিলাম। এটা নিশ্চিত যে সেটিই আমার অগ্রাধিকার ছিল।’
ভিলার কোচ হিসেবেও এখন পর্যন্ত মোটামুটি সফল জেরার্ড। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে অ্যাস্টন ভিলা। ব্যাপারটি ক্লাবকে যেমন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে, ঠিক তেমনি পয়েন্ট তালিকাতেও তাদের অবস্থানে উন্নতি ঘটিয়েছে।
কাল লিভারপুলকেও সহজে জিততে দেননি জেরার্ডের শিষ্যরা। শেষ পর্যন্ত সালাহর জয়সূচক গোলটি এসেছে পেনাল্টি থেকেই। ব্যাপারটি নিয়ে বলেছেন জেরার্ড, ‘লিভারপুল অ্যাস্টন ভিলার চেয়ে অনেক ভালো দল। গোটা ম্যাচে তাদেরই প্রাধান্য ছিল। কিন্তু অ্যাস্টন ভিলার খেলোয়াড়েরা নিজেদের কাজটা ভালোই করেছেন। লিভারপুলকে অনেকক্ষণ আটকে রেখে। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি গোলেই লিভারপুলকে জিততে হয়েছে।’
পেনাল্টিটি নিয়েও জেরার্ডের মনে প্রশ্ন আছে। সাবেক লিভারপুল তারকা মনে করেন, সালাহ নিজেই ফাউল করেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছে পেনাল্টি গোলে। এ ম্যাচে দুটি পেনাল্টি হওয়ার কথা। কিন্তু একটি পেনাল্টি পেয়েছে লিভারপুল। আপনি যদি একটু খেয়াল করে দেখেন, তাহলে উল্টো সালাহই ফাউল করেছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত গেছে লিভারপুলের দিকেই।’