জুয়ায় অংশ নেওয়া ও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ৪৩ জনের ওপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন চায়নিজ ফুটবল অ্যাসোসিয়শন (সিএফএ)।
নিষিদ্ধদের তালিকায় চীন জাতীয় দলের সাবেক ৩ ফুটবলার ও দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সন জুন-হোও আছেন। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আজ এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অধীন বেইজিং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রীড়াঙ্গন, বিশেষ করে ফুটবলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং দুর্নীতির দায়ে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
সি চিন পিং নিজেও ফুটবলের অনেক বড় ভক্ত। চীন একদিন বিশ্বকাপ আয়োজন করবে এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে—এ স্বপ্নের কথাও তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা বারবার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় এবং বছরের পর বছর ধরে মাঠের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হওয়ায় তাঁর সেই স্বপ্ন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।
চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশীয় খেলায় অবৈধ জুয়া ও ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে দুই বছর তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তের পর ১২৮ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়া বেশির ভাগ ব্যক্তিই পেশাদার খেলোয়াড় ছিলেন।
বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যা ছয়টায় নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে চীন। এমন দিনেই এল চীনের ফুটবলের অন্যতম কলঙ্কিত খবর। গত সপ্তাহে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচেই জাপানের কাছে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে চীন।
দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার সন জুন-হো ২০২১ থেকে ২০২৩ মৌসুম পর্যন্ত চায়নিজ সুপার লিগের ক্লাব শানডং তাইশানের হয়ে খেলেছেন। সে সময় তিনি ম্যাচ ফিক্সিং করেছিলেন এবং ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগে এনেছিল সিএফএ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে মাঠে নেমেছিলেন সন। বিশ্বকাপ শেষে চীনে ফেরার পর ২০২৩ সালের মে মাসে এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে আটক করা হয়। ১০ মাস জেল খাটার পর এ বছরের মার্চে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
৩২ বছর বয়সী সনের এক প্রতিনিধি দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপকে জানিয়েছেন, সনের নিষেধাজ্ঞার খবর শোনার পর তাঁরা হতভম্ব হয়ে পড়েছেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য সন শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেবেন। নিষিদ্ধদের তালিকায় থাকা ফুটবলারদের মধ্যে আরও আছেন শানডং তাইশানেরই আরেক মিডফিল্ডার চিং চিংডাও, জাতীয় দলের সাবেক গোলকিপার গু চাও এবং ফরোয়ার্ড গুয়ো তিয়ানয়ু।
শুধু চীনের ফুটবলাররাই নন, সিএফএর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও কড়া নজরদারিতে আছেন। তদন্তে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় এ পর্যন্ত সিএফএর প্রায় ১০ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘বিপুল পরিমাণ ঘুষ’ নেওয়ার দায়ে গত মার্চে সিএফএর সাবেক চেয়ারম্যান চেন সুইউয়ানকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে চীনা সরকার। সে সময় সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সুইউয়ান যেসব কুকর্ম করেছেন, সেগুলো ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সংবাদপত্র পিপলস ডেইলি জানিয়েছিল, ‘চায়নিজ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধানের দায়িত্বে থাকাকালে চেন সুইউয়ান ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে তিনি অবৈধভাবে ৮ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা) নিয়েছেন। তাঁর এ ধরনের কর্মকাণ্ড জাতীয় ফুটবলশিল্পের মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনে।’
চীন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ ও ইংলিশ ক্লাব এভারটনের সাবেক মিডফিল্ডার লি তিয়েও গত মার্চে তাঁর সব দোষ স্বীকার করেছেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সহায়তা করতে তিনি ১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২৮ কোটি টাকা) ঘুষ নিয়েছিলেন।
গত মে মাসে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীনের ক্রীড়া প্রশাসনের সাবেক মহাপরিচালক গু জংওয়েনের করা দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ঘুষ নেওয়ার অপরাধে দেশটির একটি আদালত সিএএফএর সহ–সভাপতি লি ইউয়িকে গত আগস্টে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।