জীবনের গল্পটা এবার আলাদা

আবাহনীর জার্সিতে উজ্জ্বল জীবন। সংগৃহীত ছবি
আবাহনীর জার্সিতে উজ্জ্বল জীবন। সংগৃহীত ছবি
>

এবারের লিগে ১৫ গোল করতে চেয়েছিলেন আবাহনী লিমিটেডের স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন। ২৮ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকার করেছেন ১৭ গোল

‘লিগে ১৫টা গোল করতে চাই।’

লিগ শুরুর আগে কথাটি বলেছিলেন আবাহনী লিমিটেডের স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন। লিগ শেষে (আবাহনীর খেলা শেষ) তাঁর নামের পাশে গোল সংখ্যা ১৭টি। অর্থাৎ লক্ষ্যের চেয়ে বেশি গোল করেছেন দুইটি। স্থানীয় ফুটবলাররা সাধারণত লক্ষ্যমাত্রাতেই পৌঁছাতে পারেন না, জীবন সেখানে লক্ষ্য ছাড়িয়ে গিয়েছেন।

এবার লিগের শুরু থেকেই গোল পাচ্ছেন জীবন। সর্বোচ্চ গোলদাতা সতীর্থ সানডে চিজোবার চেয়ে গোল তিনটি কম হলেও দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে জীবনই সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাঁর কাছে অবশ্য বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে লক্ষ্যপূরণ করতে পারার আনন্দ, ‘আমি অনেক খুশি। আমার ফুটবল জীবনে এটি সেরা অর্জন।’ আগের মৌসুমগুলোতে গোল করবেন কী, নিয়মিত খেলতেও পারেননি বলে তাঁর মনে আক্ষেপের স্তূপ জমে ছিল। সেই আক্ষেপ মুছে এখন জীবনের মুখে স্বস্তির হাসি। এবার লিগে আবাহনীর ২৪ ম্যাচের ২২টিতেই মাঠে নেমেছেন, ২১ ম্যাচে প্রথম একাদশের হয়ে, বাকি এক ম্যাচে বদলি।

নিয়মিত খেলেছেন বলেই জীবনের গল্পটা এবার আলাদা। সবচেয়ে বেশি গোলে সহায়তাও (৭ টি) তাঁর। হ্যাটট্রিক করেছেন রহমতগঞ্জের বিপক্ষে। জীবন কৃতিত্ব দেন আবাহনীর কোচ মারিও লেমোসকে। আবাহনী আগে খেলত ৪-৩-৩ ছকে। লেমোস খেলালেন ৪-২-৩-১ ছকে। আর এই ফরমেশনে ১০ নম্বর রোলে খেলেই জীবন সফল। দলের মূল স্ট্রাইকার সানডে, যিনি সর্বোচ্চ ১৯ গোল করে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

সাফল্যের রহস্য কী? জীবন হেসে বলেন, ‘নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল পারব। শুধু চাইছিলাম খেলার সুযোগ।’ মারিও লেমোস জীবনকে সেই সুযোগ দেন। আর লিগ শুরুর আগে বলেন, ‘তুমি ১৪টি গোল করবে।’ কোচ তখনো জানতেন না জীবনের লক্ষ্য ১৫ গোল। ঠিক ১৫ গোলের পর কোচকে জীবন বলেন, ‘কোচ, আমার ১৫ গোল হয়ে গেছে।’ কোচ বলেন, ‘বাকি ২টি ম্যাচেও তুমি গোল পাবে।’ সেটি পেয়েছেনও জীবন।

এখনই আগামী মৌসুমের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছেন তিনি, ‘আগামী লিগে ২০ গোল করতে চাই।’ তাঁর আত্মবিশ্বাসই নতুন ভরসা দিচ্ছে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডেকে। জাতীয় দলে নিজের প্রধান স্ট্রাইকারকে নিয়ে খুশি জেমি, ‘এটা খুবই আনন্দের খবর আমার জন্য। জীবন লিগে ১৭ গোল করেছে। ওর ওপর আমি নির্ভর করি।’ লাল-সবুজ জার্সিতে সামনে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবেন জেমি ডে ও গোটা বাংলাদেশ।

কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুললেই জীবনকে আর চেনা যায় না। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় জীবনের। এখন পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে গোল মাত্র ১টি। ২০১৬ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে করেছিলেন গোলটি। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৬-১ গোলে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি গোল আছে জীবনের। তবে সেটি ফিফার দ্বিতীয় পর্যায়ের স্বীকৃত ম্যাচ ছিল।