জার্মানির হারের ৫ কারণ

>

দারুণ খেলেই জার্মানিকে হারিয়েছে মেক্সিকো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির এই হার অনেক ফুটবলপ্রেমীর কাছেই অপ্রত্যাশিত। তবে যোগ্যতর দল হিসেবেই জিতেছে মেক্সিকো। জার্মানির ভুলগুলোকে কাজে লাগিয়েই। জার্মানির এই হারের অন্তত পাঁচটি কারণ খুঁজে পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম

নিষ্ক্রিয় মেসুত ওজিল
আর্সেনালের জার্সিতে বরাবরই দুর্দান্ত দেখা যায় মেসুত ওজিলকে। জাতীয় দলের জার্সিতেও বেশ ধারাবাহিক। গত দুটি বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন কোচ জোয়াকিম লোর অন্যতম প্রধান অস্ত্র। কিন্তু গতকাল জার্মানির প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই প্লেমেকার। মানসিকভাবে খুব ভালো না থাকার কারণেই ওজিল ভালো খেলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন কোচ লো।
গত মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত ওজিল এবং ইলকায় গুনদোয়ান। প্রেসিডেন্টকে তাঁরা নিজ নিজ ক্লাবের জার্সিও উপহার দেন। এরপর থেকেই জার্মানিতে বেশ চাপের মুখে আছেন তাঁরা। এমনকি তাঁদের প্রথম একাদশের বাইরে রাখারও গুঞ্জন ওঠে। এমন একটা পরিস্থিতিতে ভালো খেলা সত্যিই কঠিন।

‘আনফিট’ নয়্যার
নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। কিন্তু বিশ্বকাপে আসার আগে বাঁ পায়ের চোটে পড়ে প্রায় নয় মাস মাঠের বাইরে ছিলেন। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি বিশ্বকাপ খেলার মতো ফিট কি না। যদিও কোচ লো তাঁকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রেখেছেন, অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডও তাঁর হাতে। কিন্তু গতকাল মেক্সিকো ম্যাচের পর কথা উঠছে, পুরোপুরি ফিট হয়ে তিনি মাঠে নেমেছিলেন কি না। গোলরক্ষক হলেও কোনো কোনো সময় নয়্যারকে ডি বক্সের মধ্যে দেখা যায় রক্ষণের ভূমিকায়। ফুটবলের ভাষায় যাকে বলে সুইপার ব্যাক। কিন্তু গতকাল পাওয়া যায়নি সেই নয়্যারকে। ম্যাচের একমাত্র গোলটিও খেয়েছেন কাছের পোস্ট দিয়ে। যেকোনো গোলরক্ষকের জন্য কাছের পোস্ট দিয়ে গোল হজম করাটা একটু বিব্রতকরই বটে।

মাঝমাঠে নেতৃত্বের অভাব
গতবারের জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী দলে দুটি বড় নাম ছিল ফিলিপ লাম ও বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার। একজন ছিলেন ফুলব্যাক, অন্যজন মিডফিল্ডার। অভিজ্ঞ এই দুই ফুটবলার পুরো দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পেছন থেকে। কিন্তু এবারের জার্মান দলে সে ধরনের ‘নেতা’ নেই বললেই চলে।
লোয়ের হাতে টনি ক্রুস ও স্যামি খেদিরার মতো মিডফিল্ডার আছেন। কিন্তু গতকাল মেক্সিকোর দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর ফুটবলের সামনে তাঁদের বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিল। অন্য দুই অভিজ্ঞ ফুটবলার মেসুত ওজিল ও টমাস মুলারকেও গতকাল চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি। সে কারণেই জার্মান কোচও কাঠগড়ায় তুলেছেন দলের অভিজ্ঞ ফুটবলারদের। কারণ, তাঁরা অভিজ্ঞ হলেও নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ।

হতাশায় মুখ লুকোচ্ছেন টনি ক্রুজ। ছবিঃ এএফপি

বিশ্বকাপের জন্য তৈরি নন ভেরনার
গত বছরের কনফেডারেশনস কাপে গোল্ডেন বুট জিতে বিশ্ব ফুটবলের নজরে এসেছিলেন ভেরনার। তরুণ হলেও বিশ্বকাপে তাঁর ওপর ভরসা করেছিলেন জার্মান কোচ। কিন্তু প্রথম দিনে প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপ মানেই কিন্তু কঠিন প্রস্তুতি। অন্য রকম আমেজ। প্রত্যাশার চাপ। সেখানে অনেক বাঘা বাঘা ফুটবলারই তাল মেলাতে ব্যর্থ হন। ভেরনার বোধ হয় বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হননি। তাঁর আরও সময়ের প্রয়োজন।

মেসুত ওজিলের এই ছবিটাই তো জার্মানি দলের প্রতীক। ছবিঃ এএফপি


সেন্টারব্যাকের দুর্বলতা
জেরোমে বোয়েটেং ও ম্যাটস হামেলস কাল মোটেও ভালো খেলতে পারেননি। কোচ লোয়ের রক্ষণ-অস্ত্র হলেও গোটা ম্যাচে ভুল করেছেন প্রচুর। এই দুই ফুটবলারের মধ্যে দেখা গেছে বোঝাপড়ার অভাব।
হাভিয়ের হার্নান্দেজ ও হিরভিং লোজানোর দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তাঁরা দুজন। আক্রমণে উঠে হামেলস তো তাঁর জায়গাতে ফিরতেই পারছিলেন না। গোল হজমের সময়ও দেখা গেছে, বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার তাঁর পজিশনে নেই।