রবসনকে ঘিরে বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের গোল উদ্‌যাপন
রবসনকে ঘিরে বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের গোল উদ্‌যাপন

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়াদের ম্যাচে কিংসেরই জয়

অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বসুন্ধরা কিংস। আজ সাইফ স্পোর্টিংকে ৪–৩ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগে তুলে নিয়েছে টানা অষ্টম জয়। নিজেদের মাঠ বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় পেয়েছে টানা ষষ্ঠ জয়।

তবে আজই ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়েছে কিংসকে। দুবার ম্যাচে ফিরে আসে সাইফ। একপর্যায়ে অতিথি দল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩–১ থেকে স্কোরলাইন করে ৩–৩। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি সাইফ। ৭৭ মিনিটে রবসনের কর্নার থেকে ইরানি ডিফেন্ডার খালিদ শাফির হেডে কিংস পেয়ে গেছে জয়সূচক গোল।

সমতায় ফেরার পর সাইফের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিততে পারেনি তারা

এই ম্যাচটা নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয়ে ছিল কিংস। তবে দিন শেষে হাসি যথারীতি অস্কার ব্রুজোনের দলেরই। দুই দলের রক্ষণই ভুল করে গোল খেয়েছে। তবে সাইফের রক্ষণে ভুল বেশি চোখে লেগেছে। যে কারণে সম্ভাবনা জাগালেও ড্র করতে পারেনি তারা।

দারুণ জমে ওঠা ম্যাচটাকে অনায়াসে বলা যেতে পারে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়াদের ম্যাচ। ৭ গোলের ৪টিই বাদ পড়াদের। কিংসের জার্সিতে আজই প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে স্ট্রাইকার মতিন মিয়া করেছেন জোড়া গোল। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া আরেক খেলোয়াড় সাইফের স্টপার রিয়াদুল হাসান করেছেন একটি গোল। তাঁর গোলেই ৩–৩ হয়েছিল স্কোরলাইন। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া আরেক খেলোয়াড় সাইফের ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ (ফাহিম) করেছেন এক গোল।

সাইফকে হতাশায় ডুবিয়ে ম্যাচ জিতেছে কিংস

সব মিলিয়ে আজ কিংস অ্যারেনার ভিআইপি বক্সে খেলা দেখতে বসা জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সামনে নিজেদের মেলে ধরলেন মতিন, রিয়াদুল, ফয়সালরা। বিশেষ করে মতিন দেখালেন এখনো অন্য অনেকের চেয়ে তাঁর ওপর বেশি ভরসা করা যায়।

আজ শুরুতেই গোল পেয়ে গেছে কিংস। ৩ মিনিটে পরিকল্পিত আক্রমণে সোহেল রানা বাঁ দিকে বল দেন রবসনকে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড একটু ভেতরে ঢুকে কোনাকুনি প্লেসিং করেন। সাইফের গোলকিপার শান্ত কুমার বলের নাগাল পাননি। চলতি লিগে এটি রবসনের নবম গোল।

১৯ মিনিটে ২-০। সাইফের গফুরভের থ্রু ধরে তরুণ ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ঢুকে পড়েন কিংসে বক্সে। তাঁকে ফেলে দেন কিংসের আগুয়ান গোলকিপার আনিসুর। পরিষ্কার পেনাল্টি। তবে গোলের সুযোগ থাকায় রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি। সাইফের নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে বল জালে ঠেলে সমতা আনেন ম্যাচে।

২৬ নিজেদের ভুলে দ্বিতীয় গোল খেয়েছে সাইফ। ইব্রাহিমের ক্রসে সাইফে রাইটব্যাক ও ৬ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা নাসিরুল হেড করেন। সেই বল সাইফের মেরাজ পেছনে ঠেলেন। কিন্তু নাসিরুল বল পায়ে জমালেও ক্লিয়ার করতে পারেননি। তাঁর ভুলে বল পেয়ে যান মতিন মিয়া। তাঁর দারুণ শটে ২–১। চলতি প্রিমিয়ার লিগে এটি মতিনের প্রথম গোল।

৫৫ মিনিটে তৃতীয় গোলটাও সাইফ খেয়েছে নিজেদের ভুলে। গোলকিপার শান্ত সামনে বল দেন জামাল ভূঁইয়াকে। জামাল আবার পেছনে ঠেলেন রুয়ান্ডার ডিফেন্ডার এমেরিকে। কিন্তু এমেরি বল পাননি, পেয়ে গেছেন মতিন। তারপর মতিনের প্লেসিংয়ে ৩–১।

বসুন্ধরা কিংসের জয়সূচক গোলটি করে খালিদ শাফির উদ্‌যাপন

কিন্তু নাটকের তখনো বাকি। সানডে থেকে ফয়সাল আহমেদের প্লেসিংয়ে ৩–২ করেছে সাইফ। ৬৭ মিনিটে মতিন মিয়াকে তুলে বসনিয়ার স্ত্রানিয়েসকে নামান কোচ। ঠিক তখনই কর্নার থেকে ডিফেন্ডার রিয়াদুলে প্লেসিংয়ে ৩–৩। ৩–১ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ভোজবাজির মতো ম্যাচের রং পাল্টে ৩–৩। কিন্তু খালিদ শাফির গোল সব আনন্দ ভেস্তে দিয়েছে সাইফের।

ম্যাচ শেষে হতাশ সাইফের কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি নিজেদেরই দুষলেন এই হারের জন্য। বললেন, ‘এভাবে নিজেরা গোল উপহার দিলে জেতা যায় না। বাজে সব গোল খেয়েছি।’ বলতে বলতে তাঁর মুখে রসিকতাও শোনা গেল, ‘আমার তো মনে হচ্ছে, নিজের মাথায় নিজেই গুলি করি। অন্তত একটি পয়েন্ট তো পাওয়া উচিত ছিল।’ ৯ ম্যাচে সাইফের পয়েন্ট মাত্র ১১। শীর্ষ থাকা কিংসের ২৪।