‘আরামবাগে একজন উসাইন বোল্ট ফুটবল খেলেন। আসুন, সবাই মিলে তাঁর গতি দেখে নিই।’
এ ক্যাপশনটিই দেওয়া হয়েছিল ভিডিওটির সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বাধীনতা কাপে সাইফ স্পোর্টিং ও আরামবাগের মধ্যকার ম্যাচের একটি ভিডিও শেয়ার করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন এক ফুটবলপ্রেমী। মাঝমাঠ থেকে দ্রুতগতিতে উঠে থ্রু বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বক্সে ঢুকে সতীর্থকে দিয়ে গোল করালেন আরিফুর রহমান।
এমন মুভে গোল করানো দেখা যায় অহরহ। কিন্তু আরামবাগের তরুণের গতিতে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি কেউ। এমনি এমনি তো আর বিশ্বের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টের সঙ্গে তুলনা করা হয়নি। সেই আরিফ এবার প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলে।
বোল্টের সঙ্গে আরিফের তুলনাটা বাড়াবাড়ি। গতিতে বিশ্বের দ্রুততম মানবের আশপাশেও নেই আরামবাগের এই উইঙ্গার। কিন্তু আরিফ বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের সঙ্গে গতিতে তাল মিলিয়ে দৌড়ানোর ক্ষমতা রাখেন। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস প্রযুক্তির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০ বছর বয়সী এই তরুণ ঘণ্টায় ৩৫.৮৫৬ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে ৯.৯৬ মিটার গতিতে দৌড়ানোর সামর্থ্য রাখেন। সে অনুয়ায়ী ২০ বছর বয়সী এই তরুণই বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম ফুটবলার।
গত ৯ মার্চ কম্বোডিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচেই খেলতে পারতেন আরিফ। কোচ জেমি ডের পছন্দের তালিকাতেও ছিলেন আরিফুর রহমান। কিন্তু সেবার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল চোট। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট মাস দেড়েক ভুগিয়েছে আরিফুরকে। আরামবাগের ফরোয়ার্ড এখন পুরোপুরি ফিট। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন পূরণের হাতছানি আরিফুরের সামনে। বাংলাদেশ আগামী ৬ ও ১১ জুন বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ খেলবে লাওসের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের পরিকল্পনায় জায়গা করে নিয়েছেন আরিফুর।
৬ জুন লাওসের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার আগে বাংলাদেশ ১০ দিনের অনুশীলন করবে থাইল্যান্ডে। অনুশীলনে কোচের মন জয় করতে পারলে স্বপ্নের জার্সিটা হয়তো পরে ফেলতে পারেন। কাল দুপুরে ঢাকা ছাড়ার আগে আরিফুরের কণ্ঠে ছিল চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি, ‘আমি ইনজুরিতে থাকার সময়ই কোচ বলেছিলেন, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। তোমাকে জাতীয় দলে প্রয়োজন। তখনই ভেবেছিলাম যেভাবেই হোক কোচের নজরে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি পেরেছি। এখন একাদশে ঢুকতে চাই।’
আরামবাগের হয়ে এই মৌসুমে তিন গোল করেছেন আরিফুর। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে প্রায়ই প্রতিপক্ষকে আতঙ্কে রাখেন। খুব কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে আরিফুরকে দেখছেন আরামবাগ কোচ মারুফুল হক। জাতীয় দলের জার্সিতে যদিও তাঁকে আরেকটু সময় দিতে চান মারুফুল, ‘ওর সবচেয়ে বড় গুণ মাঠে প্রচণ্ড গতিময় খেলোয়াড়। ওর মধ্যে গোল করার তাড়না রয়েছে সব সময়। প্রতিভাবান ফুটবলার। কিন্তু এখনো সে পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি। ওকে আরেকটু সময় দিলে ভালো হবে।’
ফরোয়ার্ড লাইনে রয়েছেন নাবিব নেওয়াজ জীবন, মতিন মিয়া, বিপুল আহমেদ। এঁদের বদলে একাদশে জায়গা করে নেওয়াটা যে কঠিন হবে, সেটা মানছেন আরিফুর, ‘আমার জায়গায় একাধিক ভালো মানের খেলোয়াড় রয়েছে। ওদের সঙ্গে লড়াই করে দলে জায়গা করে নেওয়াটা সহজ হবে না। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, কোচের মন জয় করে লাওসের বিপক্ষে খেলতে পারব।’ আরিফের বয়স এখন ২০। আশা করাই যায় ভবিষ্যতে আরও জোরে দৌড়ানোর ক্ষমতা রাখবেন এই তরুণ। আর গতির সঙ্গে টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি উন্নতি হলেই বাংলাদেশ পেতে পারে পরিপূর্ণ এক ফুটবলার।
দেখতে পারেন আরিফের (১১ নম্বর জার্সি) ঝড়ের গতির একটি নমুনা। এখানে ৪৭ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছেন ৪.৯১ সেকেন্ড সময়ে...