ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাঁদের কর্মযজ্ঞ। সবাই যখন ঘুমে বুঁদ, তখন পত্রিকার হকাররা ছুটে চলেন খবরের কাগজের বান্ডিল হাতে। যান্ত্রিক এ শহরে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে তাঁদের খেলাধুলার সুযোগ একদম নেই বললেই চলে। আজ শনিবার সকালটা তাই হকারদের জন্য একটু অন্য রকম।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের মাঠে আজ চলছে হকার প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৯। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চারটি মাঠে চলছে টান টান উত্তেজনার একেকটি ফুটবল ম্যাচ। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্কুলটির মাঠ-১–এ প্রিয়াঙ্গন (কল্যাণ) ও মিরপুর-১ হকার্স—এই দুই দলের খেলা দিয়ে শুরু হয়েছে প্রীতি টুর্নামেন্ট। রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দিতেই শুরু হয় দর্শক-সমর্থকদের উল্লাসধ্বনি। পাশাপাশি আরও তিনটি মাঠে খেলা চলছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চারজন রেফারি খেলা পরিচালনা করছেন।
দিনব্যাপী টুর্নামেন্টটি ঘিরে রেসিডেন্সিয়াল কলেজ সেজেছে উৎসবের রঙে। প্রতিপক্ষ দলের জালে বল ঢোকাতে পারলেই উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ফেটে পড়ছেন হকার-দর্শক-সমর্থকেরা, ‘গোওওওওল।’ জার্সি পরা খেলোয়াড়দের আনাগোনা, সাজসজ্জা, রঙিন পতাকা ও দর্শক-সমর্থকদের উৎসাহে মাঠজুড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ফুটবল প্রতিযোগিতা।
হকারদের বিনোদনের কথা ভেবে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের আয়োজক প্রথম আলো। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবার ৩২টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। প্রতিটি দলে ১৫ জন খেলোয়াড় আছেন। আজ সকালে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা বিকেল পর্যন্ত চলবে।
পত্রিকার হকারেরা বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে তাঁরা পত্রিকা বিলি শুরু করেন। তাঁদের কাজ শেষ হতে বেলা গড়ায়। এরপর কেউ ঘুমিয়ে নেন, অনেকে একটু বিশ্রাম নিয়ে পথে-ঘাটে-ফুটপাতে পত্রিকা ফেরি করেন। যানজটে ঠাসা এই নগরীতে তাঁদের খেলাধুলার সময় ও সুযোগ কোনোটিই মেলে না। আজকের আয়োজন তাঁদের জন্য ব্যাপক বিনোদনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এ রকম আয়োজন তাঁরা ভবিষ্যতে আরও দেখতে চান।
বনানী হকার্স দলে খেলছেন ২৪ বছর বয়সী মো. আবেদ হোসেন। ১০ বছর ধরে তিনি পত্রিকা বিলির সঙ্গে যুক্ত। আজ সকালেও পত্রিকা বিলি করেছেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর তাঁর আর পড়াশোনা করা হয়নি। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে দেড় ঘণ্টায় তিনি বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় প্রায় ১৫০ বাসায় পত্রিকা দিয়েছেন। অনুভূতি জানতে চাইলে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলি। হকারদের নিয়ে এমন উদ্যোগ খুবই ভালো। বছরের একটা দিন আমরা আনন্দ করতে পারি। এর ভালো বলার ভাষা জানা নেই। ভালোই লাগছে। সব হকার ভাই একত্র হয়েছি।’
প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে মগবাজার হকার্স। দলটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ১৮ বছর বয়সী মো. মিকাইল। তাঁর বাসা মগবাজারের বাটার গলিতে। তিন বছর ধরে পেপার বিলি করা মিকাইল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালেও ৩০০ বাসায় পেপার দিছি। খেলাধুলা করা অতটা হয় না। তয় শুক্রবারের দিন কাজ কম থাকে। তহন খেলি এলাকার ছোট মাঠে বা গলিতে।’
বাকি দলগুলোর মধ্যে পর্যায়ক্রমে ফুটবল নিয়ে এই উন্মাদনা দিনভর চলবে। বিকেল ফাইনাল খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রতিযোগিতা। শেষে থাকছে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।