প্রেমের শহর বলে বিখ্যাত প্যারিস। আর ফেব্রুয়ারি মাসের প্যারিস সত্যিকার অর্থেই বিশেষ কিছু। ভালোবাসা দিবস ও প্রেমের শহর মিলে একাকার অবস্থা। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকটায় ফ্রান্সের রাজধানীতে সম্ভবত কিছু একটা হয়। কোনো অজানা অদৃশ্য শক্তি এসে হামলে পড়ে এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিটির ওপর। অন্তত গত তিন বছরে এমন কিছুই দেখা যাচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকেই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দলবদল করে ২০১৭ এর আগস্টে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার। তাঁকে ঘিরে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার আশা দেখা পিএসজি প্রথম ধাক্কা খেল ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। চোট পেয়ে কিছুদিনের জন্য মাঠ ছেড়েছিলেন নেইমার। ২০১৯ সালে তো ফেব্রুয়ারির পাওয়া চোট নেইমারকে বাকি সময়ের জন্য ছিটকেই দিল। ২০২০-এ এসেও কোনো কিছু বদলাল না। আবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরোনোর আগেই চোটে পড়েছেন নেইমার। ভাবা যায়!
প্যারিসের আলো বাতাসের দোষই হবে। না হলে আগের দুবারে পায়ে চোট পাওয়া নেইমার এবার কিনা পাঁজরে ব্যথা পেয়েছেন। সে ব্যথা এমনই ব্যথা যে আজ নঁতের বিপক্ষে মাঠে নামা হচ্ছে না তাঁর। নেইমারের ফেব্রুয়ারির চোটটা কীভাবে না কীভাবে যেন তাঁর জন্মদিনের আশপাশের সময়েই হয়, ফলে জন্মদিনের আগে পরে কোনো ম্যাচে পিএসজির জার্সিতে তাঁকে দেখা যায় না। এটা নিশ্চয়ই কাকতাল।
৫ ফেব্রুয়ারি নেইমারের জন্মদিন। পিএসজির জার্সিতে প্রতি মৌসুমেই এ দিনটাই নেইমারকে পাওয়া যায় না চোটের কারণে। মার্চে তাঁর বোনের জন্মদিনের আগে-পরে ঠিক এমনভাবেই চোটাক্রান্ত হন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এবার কিন্তু নেইমার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর জন্মদিনের আগে আজ রাতের ম্যাচটি খেলার। এ কারণেই ৫ তারিখে জন্মদিন হলেও ৪ তারিখে খেলার আগেই জন্মদিনের উৎসব করেছেন জাঁকজমকভাবে। প্রতি জন্মদিনে কোনো না কোনো থিম ভেবে রাখেন নেইমার। ২০১৮তে ছিল কালো টাই থিম, গত বছর সেটা ছিল ‘নুইট রুজ’ বা লাল থিম। এবার ছিল ধবধবে সাদা। এডিনসন কাভানি, আনহেল ডি মারিয়া, মার্কো ভেরাত্তি সবাই আপাদমস্তক সাদা হয়ে ‘ইয়োইয়ো’ নাইট ক্লাবে এসে জন্মদিন পালন করে গেছেন। আর জন্মদিন শেষ হতে না হতেই চোট পেয়েছেন নেইমার। নঁতের জন্য যে স্কোয়াড দিয়েছেন কোচ টমাস টুখেল, সেখানেই তাই অনুপস্থিত ব্রাজিলের এই তারকা।
জন্মদিনের পার্টির আগেই টমাস টুখেল বলেছিলেন এ পার্টি খেলোয়াড়দের মনোযোগ ম্যাচ থেকে সরিয়ে নিতে পারে। ম্যাচের আগে এমন কিছু আদর্শ নয় সেটাও বলেছেন, ‘আমিই কোচ। সবাইকে অনুশীলনে সময়মতো থাকতে হবে। সবাইকে মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করতে হবে। ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির এটাই (জন্মদিন পালন) কি সেরা উপায়? না, অবশ্যই না। আবার এটাই সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি? তাও না। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে আমরা মানুষকে আমাদের নিয়ে বাজে কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছি।’
টুখেল অবশ্য তখনো জানতেন না, ফেব্রুয়ারির রহস্যময় বাতাস নেইমারকে আবারও নতুন চোটে ফেলে দেবে। তবে আশার কথা, এবার নেইমারের চোট সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী নয়। আগামী সপ্তাহে লিঁওর বিপক্ষেই মাঠে নামার সম্ভাবনা আছে।