চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো-ফার্নান্দেস
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো-ফার্নান্দেস

কৌশলের কাটাছেঁড়া

ছন্নছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল ‘সমস্যা’ রোনালদো?

ম্যাচ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সরব উপস্থিতি। আজীবনই নেতৃত্বগুণের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন, এ ম্যাচের পরেও ব্যতিক্রম হলো না। দল নিজেদের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে পাঁচ গোল খেয়ে বিধ্বস্ত, রোনালদো চুপ থাকেনই-বা কী করে?


রোনালদোর কণ্ঠে তাই শোনা গেছে নতুন আশাবাদ, সম্ভাবনাময় সাফল্যমণ্ডিত আগামী দিনের প্রত্যাশা। আদর্শ নেতা হিসেবে রোনালদোর এই পদক্ষেপ যথেষ্টই প্রশংসার দাবি রাখে, বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যদি বলা হয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই দুর্দশার পেছনে রোনালদোর ‘অবদান’-ই সবচেয়ে বেশি? বিস্মিত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কথাটায় ভুল নেই। কীভাবে? দেখা যাক।

হতাশ হয়েই মাঠ ছেড়েছেন রোনালদো

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে দলে যাবেন, সে দলই শক্তিশালী হবে। রোনালদো দলে ঢোকা মানে প্রতিটি ম্যাচে অন্তত একটা গোলের নিশ্চয়তা। ৩৬ বছর বয়সী রোনালদো সে নিশ্চয়তা দিচ্ছেনও কমবেশি প্রতিটি ম্যাচে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে প্রতি ১২৮ মিনিটে একটা করে গোল করছেন। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে স্বদেশি ব্রুনো ফার্নান্দেসের জায়গায় রোনালদো যদি পেনাল্টি নিতেন, গোল পেতেন—১২৮ থেকে যে গড়টা নেমে আসত ১০৯-এ। ৩৬ বছর বয়সে যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ খেলোয়াড় বুটজোড়া তুলে বিভিন্ন চ্যানেলে ‘পণ্ডিত’ বনে যান, সেখানে রোনালদো বিশ্বের আর দশটা ক্ষুরধার গোলশিকারির মতো গোল করে যাচ্ছেন।


তবে আধুনিক ফুটবলে গোল করাই মুখ্য নয়। দলের আক্রমণ ও রক্ষণে, প্রেস (প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা), বল পায়ে থাকার সময় কিংবা না থাকার সময়ে একাদশের আকার ঠিকঠাক থাকছে কি না, এ রকম ছোট ছোট অনেক বিষয়ের ওপরেই ম্যাচের ফলাফল নির্ভর করে থাকে। সেসব দিকে রোনালদোর কাছ থেকে ইউনাইটেড তেমন কোনো উপযোগিতা পাচ্ছে কি?

বেনজেমা আগে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করতেন রোনালদোকে

উত্তর হবে—না। রোনালদো কখনোই গোল করা ছাড়া এসব বিষয়ে তেমন বেশি মনোযোগ দেননি। সত্যি কথা বলতে কি, দিতে হয়ওনি তাঁকে। যে খেলোয়াড় বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলদাতা, তাঁর কাছ থেকে সব সময় যেকোনো দল শুধু গোলই চেয়েছে। সেটা পর্তুগাল হোক, হোক রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা জুভেন্টাস। রোনালদো যেন গোল করাতেই মনোযোগ দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করেছেন দলের বাকি সতীর্থরা। রোনালদোর আপাত এই ‘দুর্বলতা’ বাকিরা মিলে বাড়তি মিটিয়ে দিয়েছেন। আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যখন খেলতেন, রোনালদোর প্রেস না করার অভাবটা পুষিয়ে দিতেন রুনি-তেভেজ কিংবা পার্ক জি সুংরা।


রিয়ালে রোনালদোকে খাঁটি গোলশিকারি বানানোর জন্য সে ত্যাগ স্বীকার করেছেন করিম বেনজেমা। জুভেন্টাসে রোনালদোর কাছ থেকে গোল পাওয়ার জন্য একই কারণে দিবালা কিংবা কিয়েসাকে নিতে হয়েছে পার্শ্বনায়কের ভূমিকা। রোনালদো ক্লাব ছাড়ার পর রুনি, বেনজেমা, দিবালার প্রত্যেকে স্বতন্ত্র খেলোয়াড় হিসেবে আরও উন্নত হয়েছেন, গোল করেছেন ও করাচ্ছেন বেশি।

রোনালদো যা একটু প্রেস করতেন, ৩৬ বছর বয়সে এখন বলতে গেলে একেবারেই করেন না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রতি নব্বই মিনিটে সফল প্রেস করা ফরোয়ার্ডের তালিকায় রোনালদোর নামটা তাই সবার নিচেই থাকে। এমনকি এই তালিকার পরে যিনি আছেন, নিউক্যাসলের ফরাসি ফরোয়ার্ড অ্যালাঁ-সাঁ ম্যাক্সমাঁও রোনালদোর প্রায় দ্বিগুণ প্রেস করেন। ভাবা যায়!

সবচেয়ে কম প্রেস করা ফরোয়ার্ডদের তালিকায় রোনালদো সবার ওপরে

এটাও সমস্যা হতো না, যদি ইউনাইটেডের বর্তমান দলে রোনালদোর সতীর্থরা রোনালদোর সেই ঘাটতি পোষাতে পারতেন অথবা ইউনাইটেডের কোচ উলে গুনার সুলশার এমন কোনো একটা পদ্ধতি বের করতে পারতেন, যাতে রোনালদোর প্রেসে সাহায্য না করা ইউনাইটেডের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুলশারের পরিকল্পনায় এমন কোনো কিছুর ছাপ দেখা যায়নি। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো গত রাতেই দেখল বিশ্ব, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের কাছে ৫-০ গোলে নাকাল হলেন রোনালদোরা।

সালাহর তাণ্ডব চুপচাপ দেখেছেন রোনালদো

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন পারছেন না সুলশার? একাদশের দিকে তাকালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। রোনালদো ছাড়াও ইউনাইটেডের আক্রমণভাগ ও মাঝমাঠ ভরে আছে তারকায়। ব্রুনো ফার্নান্দেস থেকে শুরু করে পল পগবা, মেসন গ্রিনউড, মার্কাস রাশফোর্ড, জেডন সানচো—আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেকেই অসাধারণ খেলোয়াড়। কিন্তু দলগতভাবে চিন্তা করলে এদের মধ্যেই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও রসায়নের ঘাটতি আছে। আর এই রসায়নের ঘাটতি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ, কেউই প্রেস করায় আগ্রহী নন। অর্থাৎ রোনালদোর ‘রোগ’টা প্রত্যেকের মধ্যেই কমবেশি আছে।

দল হিসেবেও কার্যকরী উপায়ে প্রেস করতে পারে না ইউনাইটেড

মেসন গ্রিনউডের কথাই ধরুন। গত রাতে ইউনাইটেড ৪-২-৩-১ ছকে নেমেছিল, আক্রমণভাগে রোনালদোর সঙ্গে রাশফোর্ড, ব্রুনো ফার্নান্দেসের সঙ্গে ছিলেন গ্রিনউডও। গ্রিনউডের মধ্যেও বেশি প্রেস করার সে প্রবণতা নেই। আর থাকলেও কখন কাকে প্রেস করতে হবে, মাঠের কোথায় থাকলে প্রতিপক্ষ পাস দিতে পারবে না, এসব বোঝেন না। ফলে চাপ পড়ে যায় ব্রুনো ফার্নান্দেসের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই বল পায়ে দক্ষ এই মিডফিল্ডার ভালো তখনই খেলেন, যখন তাঁকে ঘিরে দলের পরিকল্পনা আবর্তিত হয়, যখন বাড়তি প্রেস করার চিন্তা বাদ দিয়ে তিনি আক্রমণ করতে পারেন।
রোনালদোর যোগ দেওয়ার পর থেকে যেটা হচ্ছে না। যে কারণে গত মৌসুমে ফার্নান্দেস দুর্দান্ত খেললেও এই মৌসুমে আক্ষরিক অর্থেই রোনালদোর কারণে ম্লান দেখাচ্ছে এই পর্তুগিজকে। গ্রিনউড আর রোনালদোর জন্য ব্রুনোকেও বাড়তি প্রেস করতে হচ্ছে, যা তাঁর স্বাভাবিক খেলাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। ওদিকে ইউনাইটেডের যেহেতু প্রেস করার দিক দিয়ে কোনো আদর্শ পরিকল্পনা নেই, ব্রুনো প্রেস করার ক্ষেত্রে সতীর্থদের কাজ থেকে সাহায্যও পাচ্ছেন না।

গত রাতে লিভারপুলের প্রথম গোলের দিকে নজর দেওয়া যাক। রোনালদো আর গ্রিনউডকে একই সঙ্গে দলে রাখা ইউনাইটেড যে আদর্শ উপায়ে প্রেস করার কোনো পদ্ধতি বের করতে পারেনি, এই গোলের মাধ্যমেই বোঝা গেছে সেটা। লিভারপুলের গোলকিপার আলিসন বেকারের পায়ে বল দেখে ব্রুনো গেলেন প্রেস করতে, দেখলেনও না পেছনে তাঁকে সাহায্য করার জন্য কেউ আছেন কি না। ফলে পাশে থাকা ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইককে পাস দিতে কোনো সমস্যাই হলো না আলিসনের।

অ্যালিসনের দিকে ছুটে আসছেন ব্রুনো, কোনো লক্ষ্য ছাড়াই

এখন ফন ডাইকের পায়ে বল দেখে লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনকে মার্ক করা বাদ দিয়ে ফন ডাইকের দিকে ছুটলেন গ্রিনউড, যে কারণে ফাঁকা জায়গা পেয়ে গেলেন রবার্টসন। গ্রিনউডের চেষ্টায় এমন কিছুই হলো না, যাতে ফন ডাইকের পাস দেওয়ার সম্ভাব্য কোনো রাস্তা রুদ্ধ হয়। ফলে রবার্টসনকে অনায়াসে পাস দিলেন ফন ডাইক।

ফন ডাইকের দিকে এগিয়ে আসছেন গ্রিনউড

সেটা দেখে ওদিকে থাকা ইউনাইটেডের রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকা উঠে এলেন। কিন্তু ওই যে, কোনো পরিকল্পনা যেহেতু নেই, বিসাকা সে কাজটাও ঠিকভাবে করতে পারলেন না। রবার্টসন অনায়াসে বল পাঠালেন লেফট উইংয়ে খেলা দিওগো জোতার দিকে।

রবার্টসন টেনে আনছেন ওয়ান বিসাকাকে

লিভারপুলের বাঁ প্রান্তে রবার্টসন আর জোতার ক্রমাগত জায়গা বদল একদম ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে ইউনাইটেডকে। জোতার পায়ে বল দেখে বিসাকার জায়গায় রাইটব্যাক হিসেবে চলে এলেন সেন্টারব্যাক ভিক্টর লিন্ডেলফ। তা–ও কার্যকরী উপায়ে প্রেস না করার কারণে জোতা বল পাঠালেন মাঝে থাকা স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর কাছে।

জোতা সহজেই বল পাঠালেন ফিরমিনোকে

ওদিকে ফিরমিনোর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। স্ট্রাইকার হলেও শুধু ডি-বক্সে বসে না থেকে তিনি মূলত যেকোনো ম্যাচে মিডফিল্ডারের ভূমিকাই পালন করেন। ফিরমিনোর নিচে নেমে যাওয়া দেখে ইউনাইটেডের আরেক সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়ারও চলে এলেন পিছু পিছু।

ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা সালাহর কাছে ফিরমিনো পাঠালেন বল

ম্যাগুয়ারের জায়গা পূরণের জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে চলে এলেন লেফটব্যাক লুক শ। ফলে নিজেদের বাঁ প্রান্ত আর লিভারপুলের ডান প্রান্ত একদম ফাঁকা হয়ে গেল। আর ওই ফাঁকা জায়গাতেই ইউনাইটেডকে চূড়ান্ত শিক্ষা দিল লিভারপুল। লিভারপুলের রাইট উইঙ্গার মোহাম্মদ সালাহ ও মাঝমাঠ থেকে উঠে যাওয়া নাবি কেইতাকে আটকানোর জন্য এক লুক শ ছাড়া কেউই ছিলেন না। হিসাব করে দেখুন, পুরো ধ্বংসযজ্ঞ কিন্তু শুরু হয়েছে রোনালদো আর গ্রিনউডের ঠিকভাবে প্রেস না করার জন্যই!

সালাহ-কেইতা, দুজনকে একা সামলাতে পারেননি লুক শ

প্রেস করার জন্য প্রতি প্রান্তে দুই–তিনজন খেলোয়াড়ের জুটি থাকা অত্যন্ত জরুরি। লিভারপুলের বাঁ প্রান্তে রবার্টসনের সঙ্গে যে জুটি ছিল জোতা আর মিলনারের (পরে কার্টিস জোন্স), আর ডান দিকে যে জুটি ছিল রাইটব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড, মোহাম্মদ সালাহ ও কেইতার। এক প্রান্তের আক্রমণকারী বোঝেন তিনি ভেতরে ঢুকে গেলে পেছনে থাকা সতীর্থের মুভমেন্ট কেমন হবে। যা আদর্শ উপায়ে প্রেস করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। ইউনাইটেডের কোনো প্রান্তেই এমন জুটি দেখা যায়নি। না গ্রিনউডের সঙ্গে বিসাকার (ডান দিকে), না রাশফোর্ডের সঙ্গে লুক শর (বাঁদিকে)।
রোনালদোর প্রেস না করার কারণে তাঁকে সাহায্য করার জন্য প্রায় ওপরে উঠে যাচ্ছিলেন ব্রুনো, ফলে ছকটা অনেকটা ৪-২-৩-১ থেকে ৪-৪-২ হয়ে যাচ্ছিল। আর গ্রিনউড আর রাশফোর্ডও নিচে না নামায় ছকটা ৪-৪-২ থেকে ৪-২-৪ হয়ে যাচ্ছিল। ৪-৪-২ ছকে প্রেস কার্যকরী হতে পারে, যদি মাঝমাঠের চারজন সঠিক পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রেস করতে পারে। গ্রিনউড-রোনালদোর কারণে যেটা হচ্ছিল না। ফলে দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার স্কট ম্যাকটমিনে ও ফ্রেড একদম একা হয়ে যাচ্ছিলেন। দুই সেন্টারব্যাক ফন ডাইক আর ইব্রাহিমা কোনাতেকে সাহায্য করার জন্য প্রায় তৃতীয় সেন্টারব্যাক হয়ে নেমে যাচ্ছিলেন এই ম্যাচে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায় থাকা জর্ডান হেন্ডারসন। ব্রুনো আর রোনালদো এমনিতেই বুঝছিলেন না কাকে কখন প্রেস করবেন, হেন্ডারসনের নেমে যাওয়ার কারণে সে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় ইউনাইটেডের জন্য।

বল দখলে না থাকলে ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের ৪-২-৪ ছক

প্রেসিংয়ের দিক দিয়ে রোনালদো-গ্রিনউডের চেয়ে জোতা আর ফিরমিনো ঢের বেশি কার্যকরী। লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সেটা বুঝেছিলেন, বুঝেছিলেন দেখেই নিজের আক্রমণভাগের চার তারকার মধ্যে সে তিনজনকেই নির্বাচন করেছিলেন, যে তিনজন সবচেয়ে বেশি প্রেস করেন। মূল একাদশে দেখা যায়নি সাদিও মানেকে। ইউনাইটেডের প্রেসিং ব্যর্থতার কারণে ছক ৪-২-৪ যখন হয়ে যাচ্ছিল, ম্যাকটমিনে আর ফ্রেড মাঝমাঠে একা হয়ে যাচ্ছিলেন। এমনিতেই লিভারপুলের মিডফিল্ডে খেলেছেন তিনজন, একজন বেশি তাই মাঝমাঠের দখল তাদেরই ছিল। ওদিকে ফিরমিনোও যেহেতু নেমে যাচ্ছিলেন, সব মিলিয়ে হাপিত্যেশ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে ইউনাইটেডের দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে।

স্কট ম্যাকটমিনে

ওদিকে ম্যাকটমিনে নিজেও যে খুব ভালো রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার নন। নিজের দল যখন আক্রমণ শুরু করে, রক্ষণ থেকে পাস নেওয়ার জন্য সঠিক জায়গায় তাঁকে অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় না। প্রতিপক্ষকে দেখে দেখে রাখতে গিয়ে অনেক সময় পাস নেওয়ার জন্য নিজের নির্ধারিত জায়গায় থাকতে ভুলে যান। এ কারণে ইউনাইটেড রক্ষণ থেকে খেলা গড়ে তুলতে পারে না, গোলকিপার ডেভিড ডে হেয়াকে লম্বা পাস দিয়ে আক্রমণের চিন্তা করতে হয়। আর লম্বা পাসগুলো অনেক সময় কার্যকরী প্রেস করা দল কেড়ে নেয়। যে কারণে গত রাতে লিভারপুল যখন আক্রমণ করছিল, ইউনাইটেডের মাঝমাঠে আদৌ কেউ আছে বলে মনে হচ্ছিল না।


প্রশ্ন উঠতে পারে, গ্রিনউড-ম্যাকটমিনের যদি এত সমস্যা হয়, তাহলে তাঁদের জায়গায় পল পগবা আর জেডন সানচোকে কেন খেলানো হলো না? ওই যে, একই কারণ। গ্রিনউড আর ম্যাকটমিনের দোষেই যে দুষ্ট ওই দুজন!

রোনালদোর মতো পগবাও প্রেস করায় আগ্রহী নন

রোনালদো আসার আগে ইউনাইটেড গোল করতে পারুক বা না পারুক, বল পায়ে আক্রমণ করতে পারুক বা না পারুক, অন্তত বল পায়ে না থাকলে কীভাবে সংঘবদ্ধভাবে প্রেস করতে হয়, সে কৌশলটা শিখেছিল। গ্রিনউড বা এদিনসন কাভানি তখন উইঙ্গার নয়, খেলতেন স্ট্রাইকার হিসেবে, যে জায়গায় এখন রোনালদো খেলেন। আর স্ট্রাইকার হিসেবেই গ্রিনউড বেশি কার্যকরী, উইঙ্গার হিসেবে নন। ব্রুনোকেও প্রেসের বড়তি দায়িত্ব নিতে হতো না, ইউনাইটেডের আক্রমণের পরিকল্পনাও তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হতো। রোনালদো আসার পর থেকে অন্তত দলীয় রসায়ন আর প্রেসিংয়ের দিক দিয়ে আরও বেশি পিছিয়েছে ইউনাইটেড।


সমস্যার সমাধান যত দিন না হবে, এমনভাবেই প্রতিপক্ষের হাতে নাকাল হবেন সুলশার।