চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল। লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতা রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের নিয়ে সিবেলেস চত্বরে উৎসবও করে ফেলেছে। ক্লাবের ডেরা ছেড়ে খেলোয়াড়েরা সবাই নিজ নিজ জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন। যাঁদের জাতীয় দলের দায়িত্ব নেই, তাঁরা ছুটি কাটাচ্ছেন। কিন্তু ফাইনালের স্মৃতি এখনো ভুলতে দিচ্ছে না রিয়াল। বলা ভালো, রিয়ালই ভুলতে পারছে না। ফাইনালের আগে-পরে প্যারিসের পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে হেনস্তা হয়েছিলেন রিয়াল ও লিভারপুলের সমর্থকেরা।
এ ব্যাপারে এত দিন লিভারপুলের পক্ষ থেকে অনেক শোরগোল করা হলেও বিস্ময়করভাবে চুপ ছিল রিয়াল। ঘটনার সপ্তম দিনে এসে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এক বিবৃতিতে বলেছে, রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরাও ফাইনালে ভুক্তভোগী ছিল। এ ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথার্থ ব্যাখ্যা দাবি করেছে রিয়াল।
২৮ মে রাতে বিস্ময়কর কিছুই ঘটেছে। নির্ধারিত সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা শুরু করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, সমর্থকদের ঢুকতে দেরি হচ্ছে বলে খেলা পেছানো হয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছিল, টিকিটবিহীন কিছু লিভারপুল সমর্থক মাঠে ঢোকাতেই এ সমস্যার উৎপত্তি।
কিন্তু সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি সমর্থকদের ভোগার কারণ। টিকিট থাকা সত্ত্বেও ২৭০০ লিভারপুল সমর্থক সেদিন মাঠে ঢুকতে পারেননি। প্যারিসের অনেক স্থানীয় মানুষ অনেক সমর্থকের টিকিট ছিনতাই করেছেন। ঝামেলার একপর্যায়ে নিরীহ সমর্থকদের ওপর পেপার স্প্রে নিক্ষেপ করেছিল প্যারিসের পুলিশ।
এ নিয়ে লিভারপুল প্রথম থেকেই সরব ছিল। সেদিন হেনস্তার শিকার হয়েছেন লিভারপুল শহরের মেয়রও। এ ব্যাপারে রিয়াল মাদ্রিদ কেন চুপ করে আছে, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন এই রাজনীতিবিদ। আজ এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। বিবৃতিতে রিয়াল পয়েন্ট ধরে ধরে কিছু বিষয় তুলে ধরেছে—
‘১. আমরা জানতে চাই ফাইনালের ভেন্যু নির্ধারণের পেছনে কী কী যুক্তি ভূমিকা রেখেছে এবং সেই দিন কী ঘটেছিল, সেটা কোন মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়েছে।
২. অনুরূপভাবে, ভক্তদের অসহায় এবং অরক্ষিত রাখার জন্য কে দায়ী ছিল, সেটার উত্তর এবং ব্যাখ্যাও জানতে চাই আমরা। এদের মধ্যে এমন সমর্থক ছিল, যাদের আচরণ পুরো সময়টাতেই অনুকরণীয় ছিল।’
‘আমাদের মতে, এই ম্যাচটি অংশ নিতে যাওয়া সমর্থকদের ফুটবল উপভোগের দারুণ এক উপলক্ষ, সেটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় রূপ নিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।’
‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে স্পষ্ট দেখা গেছে, অনেক সমর্থককেই সহিংসভাবে লাঞ্ছিত, হয়রানি এবং ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়েছিল। এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যখন তারা শারীরিক নিগ্রহের ভয়ে গাড়ি বা বাসে বসেছিলেন তখন। অনেকেই আহত হয়ে হাসপাতালে রাত কাটিয়েছেন। ফুটবল সব সময় যে মান ও উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে চায়, তার চেয়ে অনেক দূরের চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবার। আমাদের অনুসারী ও সমর্থকদের এ ঘটনার একটি প্রতিক্রিয়া প্রাপ্য এবং প্রাসঙ্গিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সব খোলাসা করে বলা জরুরি, যাতে এমন পরিস্থিতি ফুটবল ও ক্রীড়াজগৎ থেকে চিরতরে দূর হয়।’
এ ব্যাপারে উয়েফা প্রাথমিকভাবে সমর্থকদের দায়ী করেছিল। তাদের দাবি অনেকটা ফ্রেঞ্চ কর্তৃপক্ষের মতোই শোনাচ্ছিল। কিন্তু সমর্থক ও সাংবাদিকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে উয়েফা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ‘ফাইনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দায়িত্ব ও আচরণ নিখুঁতভাবে পরখ করে দেখা হবে।’