>১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শূন্যস্থান পূরণের জন্য হাজির হয় এই দলবদল মৌসুম। এ দলবদলে কোন দলের কী সমস্যা, কোন দলের বিভাগে দরকার নতুন মুখ—এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করা হবে প্রথম আলোতে। আজ পঞ্চম পর্বের দল হিসেবে থাকছে বার্সেলোনা।
লা লিগায় শীর্ষে, চ্যাম্পিয়নস লিগেও গ্রুপে সেরা হয়ে শেষ ষোলোতে। আপাতদৃষ্টিতে এ মৌসুমে বার্সেলোনায় কোনো সমস্যা নেই বলেই মনে হচ্ছে। বরং বলা যায় বার্সেলোনা দল ভাসছে সাফল্যে। অথচ এই সাফল্যের গল্প থেকে লিওনেল মেসির অংশ বাদ দিয়ে দিলেই বেরিয়ে আসবে বার্সেলোনার আসল রূপটা। আরনেস্তো ভালভার্দে সাফল্য আনছেন ঠিকই, কিন্তু তা পুরোপুরি মেসির ওপর ভর করে। এতটা মেসি নির্ভরতা গত এক যুগে কখনোই দেখায়নি বার্সেলোনা।
মৌসুমের শুরুতে ইনিয়েস্তা চলে যাওয়ার পর বার্সেলোনার জন্য নতুন করে শুরু করা যতটা কঠিন মনে হয়েছিল, ততটা কঠিন হয়নি। দলকে নতুন করে সাজাতে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে আর্তুরো ভিদাল আর গ্রেমিও থেকে আর্তুরো মেলোকে দলে আনা হয়েছে। রোমার কাছ থেকে ছিনতাই করা হয়েছে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার ম্যালকমকে। এর সঙ্গে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলবদল ছিল ক্লেমেন্ত লেংলেটেরটা। সেভিয়া থেকে আসা এই সেন্টারব্যাক বেঞ্চ গরম করবেন বলেই ভাবা হয়েছিল। গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে মোট ১২৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে বার্সেলোনা। অথচ এত এত খেলোয়াড়ের মাঝে আর্তুরো ছাড়া শুধু লেংলেটেই আস্থা পেয়েছেন ভালভার্দে। সেটাও বাধ্য হয়ে, গত মৌসুমে বার্সেলোনার অন্যতম সেরা খেলোয়াড় স্যামুয়েল উমতিতি চোটের কাছে হার মেনে অনেক দিন ধরেই মাঠের বাইরে থাকায় লেংলেটের সুযোগ মিলেছে।
এতে বার্সার খুব বেশি সমস্যা হয়নি। রক্ষণ কিংবা মাঝমাঠের যে কোনো সমস্যা ঢেকে দিতে মেসি-সুয়ারেজের আক্রমণভাগই যথেষ্ট। দিন শেষে জয়ই মুখ্য। তাই দুই বন্ধু কিংবা ‘প্রবলেম চাইল্ড’ ডেমবেলের গোলে পাওয়া জয় আড়ালে ফেলে দিচ্ছে অনেক কিছু। মৌসুমে এ পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা। এর মধ্যে মাত্র ৮ ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছে বার্সেলোনা। গত মৌসুমে অবিশ্বাস্য খেলা টার স্টেগেনের ‘অতিমানব’ হতে না পারা বার্সা রক্ষণের কঙ্কাল বের করে দিচ্ছে।
বার্সেলোনার মূল সমস্যা চোট। কার্লোস পুয়েলের বিদায়ের পর থেকেই রক্ষণের নেতৃত্বে জেরার্ড পিকে। এ মৌসুমে সেই পিকেই কোনো চোট পাননি, এ ছাড়া প্রায় সবাই সময় কাটিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। দলের একমাত্র ‘স্বীকৃত’ রাইটব্যাক নেলসন সেমেদো প্রায়ই থাকেন চোটের খপ্পরে। ফিরলেও তাঁকে নামানোর সাহস পাচ্ছেন না ভালভার্দে। মূলত মিডফিল্ডার হিসেবে বেড়ে ওঠা সার্জি রবার্তোকেই সে কাজ করতে হচ্ছে। উমতিতি খেলেছেন হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ। তাঁর চোটে দায়িত্ব পেয়েছেন লেংলেট। আর্সেনাল থেকে চার বছর এসে বার্সেলোনার মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গেই বেশি বন্ধুত্ব পাতাচ্ছেন থমাস ভারমিউলেন। লেফট ব্যাক হিসেবে জর্ডি আলবা আগের মতোই দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। কিন্তু স্কোয়াডে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। আর চুক্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে অসন্তুষ্টির কথা কদিন পর পরই জানাচ্ছেন আলবা।
বার্সেলোনার নজর তাই দলবদলের বাজারে। এর মাঝেই লেফট ব্যাক পজিশনে ইগনাসি ভিলারাসাকে ফিরিয়ে এনেছে তাঁরা। তবে মূল দলে কতটা সুযোগ পাবেন ভিলারাসা, এতে সন্দেহ আছে। সেন্টার ব্যাক পজিশনে ঘাটতি পূরণে এরই মাঝে ধারে আনা হয়েছে জেইসন মুরিলোকে। তবে তাঁকে দলে টানার আগে সাও পাওলোর রদ্রিগো কাইওকে আনার কথা ভেবেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু চোট শঙ্কা কাইওর ইউরোপের স্বপ্ন আটকে দিয়েছে আপাতত। বার্সেলোনার মূল লক্ষ্য আয়াক্সের ম্যাথিও ডি লিট। এখনো বিশের কোটায় থাকা এই প্রতিভাকে শীতকালীন দলবদলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে চিন্তা তাই গ্রীষ্মের জন্য রেখে দিতে হচ্ছে বার্সেলোনাকে। এরই মাঝে তাঁর ক্লাব সতীর্থ নেদারল্যান্ডসের আরেক প্রতিভা মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে নাকি চুক্তি করে ফেলেছে বার্সেলোনা। এখন শুধু দলবদলের অঙ্কটা ঠিক হওয়া বাকি। তবে সেটাও আগামী গ্রীষ্মে। এ দলবদলের ফলে বার্সেলোনার নিজস্ব মিডফিল্ডারের দলবদলও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে।
জানুয়ারির জন্য চেলসির ডিফেন্ডার আন্দ্রেস ক্রিস্টিনসেনকেও নাকি নজরে রাখছে বার্সেলোনা। তাঁর আরেক ক্লাব সতীর্থ মোরাতার ব্যাপারেও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সুয়ারেজের ব্যাক আপ হিসেবে ফর্ম হারিয়ে ফেলা মোরাতাকে বার্সেলোনা কেন নিতে চাইবে, সেটা বোধগম্য নয়।
বরাবরই মাঝমাঠ বার্সেলোনার মূল অস্ত্র। সেখানে অস্ত্রের অভাব নেই । সার্জিও বুসকেটস, রাকিতিচ, আর্তুরো, দানি সুয়ারেজ, রাফিনহা, ভিদাল, সার্জি সাম্পার, এলেনা। এরপরও ইয়ংকে পেতে চাইছে তারা। আর পিএসজির আরেক ‘প্রবলেম চাইল্ড’ তো পারলে আজই চলে আসেন বার্সেলোনায়। গ্রীষ্মে এমনিতেই চলে আসার কথা ছিল তাঁর। তবে বাজারে জোড় গুঞ্জন, দলে ঝামেলা কমাতে এই শীতেই তাঁকে মাত্র ৫ মিলিয়ন ইউরোতে ছেড়ে দিতে রাজি পিএসজি!
কিন্তু আক্রমণভাগে খুব করে প্রয়োজন লুইস সুয়ারেজের বিকল্প। মুনির এল হাদ্দাদিকে ফিরিয়ে এনেও লাভ হয়নি। উল্টো এ মৌসুমে ধারে পাঠানো পাকো আলকাসের ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটাচ্ছেন ডর্টমুন্ডে। এতটাই দুর্দান্ত খেলছিলেন যে ধারের চুক্তিকে পাকাপাকি করে নিয়েছে জার্মান ক্লাব। ওউসমানে ডেমবেলে আপাতত গুরুত্বপূর্ণ সব গোল এনে দিচ্ছেন। আর অনেক নাটক করে দলে টানা ম্যালকম এখনো বার্সেলোনা কোচের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। তাঁকে কেনার জন্য ৬৫ মিলিয়ন ইউরো অফার করেছে চীনের এক ক্লাব।
এই দলবদলের মৌসুমে বার্সেলোনার একটু হলেও বুদ্ধি ঘাটাতে হবে। গত কয়েক মৌসুমেই শুরুটা দুর্দান্ত করেছে বার্সেলোনা। কিন্তু মৌসুমের শেষ ভাগে এসে তারা চ্যাম্পিয়নস লিগে গুবলেট পাকিয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ওদিকে বাজে শুরু পরও টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ মৌসুমের শুরুতেই তাই চ্যাম্পিয়নস লিগের আলাদা করে বলেছে বার্সেলোনা। কিন্তু এ দলবদল ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে এবারও কিন্তু ইউরোপ খালি হাতে ফেরাবে তাদের!
আরও পড়ুন:
এবার কার ওপর নজর পড়েছে গার্দিওলার?
নেইমার-এমবাপ্পের নতুন বন্ধু হচ্ছেন কে?
শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পেতে কী দরকার বায়ার্নের?
কীভাবে রোনালদো-জিদানের শূন্যস্থান পূরণ করবে রিয়াল?