>প্রায়ই ফুটবলের হাঁড়ির গোপন খবর ফাঁস করে দিয়ে আলোচনায় আসে ‘ফুটবল লিকস’। এবার তাদের প্রতিবেদনে ফেঁসেছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডসহ বড় বড় ক্লাব। নিজেদের দেশের লিগ আর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা বাদ দিয়ে ইউরোপের সেরা সেরা ক্লাব ‘উয়েফা সুপার লিগ’ নামের এক প্রতিযোগিতায় খেলার পাঁয়তারা করছে!
ভেবে দেখুন তো, স্প্যানিশ লা লিগায় নেই বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে নাম তুলে নিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি আর্সেনাল। ইতালীয় সিরি ‘আ’তে নেই জুভেন্টাস, এসি মিলান! জার্মান লিগ হচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখকে ছাড়াই!
এমনটা হলে সাধারণ দর্শকের পক্ষে সে লিগে আগ্রহ ধরে রাখা খুব মুশকিল। কিন্তু সত্যি সত্যিই নাকি এমন ঘটতে যাচ্ছে! পুরো ব্যাপার ফাঁস করে দিয়েছে ফুটবল লিকস। ফুটবলের বিভিন্ন গুমর ফাঁস করে দিতে সিদ্ধহস্ত এই ফুটবল লিকস জানিয়েছে, ক্লাবগুলোর কারণেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে চ্যাম্পিয়নস লিগ। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইউরোপের বিখ্যাত সব লিগ।
সেই ২০১৬ থেকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু এত বিস্তারিতভাবে এবারই প্রথম এই ঘটনা ফাঁস হলো। শোনা যাচ্ছে, ঘটনার মূল কুশীলব ইউরোপের সেরা ১১ ক্লাব—স্প্যানিশ লিগের রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি, জার্মান লিগের বায়ার্ন মিউনিখ, ইতালিয়ান লিগের জুভেন্টাস আর এসি মিলান, ফরাসি লিগের প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। প্রস্তাবিত ১৬ দলের ‘উয়েফা সুপার লিগে’র বাকি পাঁচ সদস্য হবে আমন্ত্রিত পাঁচ ক্লাব—জার্মানির বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইতালির ইন্টার মিলান আর এএস রোমা, ফ্রান্সের অলিম্পিক মার্শেই, স্পেনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। আর কোনোভাবে এই লিগ যদি শুরু হয়ে যায়, তাহলে হয়তো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না!
অনুমান করা হচ্ছে, ধনী ও বড় ক্লাবগুলোকে আরও ধনী হতে আর মাঝারি আর ছোট ক্লাবগুলোকে শুষে নিতেই এই পরিকল্পনা করেছে। এই মহাপরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের চার্লি স্টিলিটানোর মাথা থেকে। এই স্টিলিটানোই যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করেন। আর এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে পুরো ব্যাপার বাস্তবায়ন করতে রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। সঙ্গে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের চেয়ারম্যান কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগেসহ ইউরোপীয় ফুটবলের রাঘববোয়ালেরা। যদিও ফুটবল লিকসে ব্যাপারটি উঠে আসায় নিজের ভূমিকা অস্বীকার করেছেন রুমেনিগে। পেরেজের বক্তব্য এখনো জানা যায়নি।
ফুটবল লিকসের প্রতিবেদনে আরও বেরিয়ে এসেছে, এই মূল ১১ ক্লাব একটা কোম্পানি গঠন করে স্প্যানিশ শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছে। বিভিন্ন ভাগে যে কোম্পানির মালিকানা থাকবে ওই ১১ ক্লাবের কাছে। এই কোম্পানির সবচেয়ে বড় শেয়ার থাকবে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে (১৮.৭৭%), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ার থাকবে বার্সেলোনার কাছে (১৭.৬১%), তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ শেয়ারের মালিকানা থাকবে যথাক্রমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১২.৫৮%) ও বায়ার্ন মিউনিখের (৮.২৯%) কাছে।
অনুমান করা হচ্ছে, এই উয়েফা সুপার লিগ ২০২১ সাল থেকেই শুরু হবে। এখন এভাবে গোপন চুক্তিপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়, সেটি দেখতেই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।