পেপ গার্দিওলা কি এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? কাল রাতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য হারের পর ইংলিশ গণমাধ্যমে এমন কথাই ঘুরছে–ফিরছে।
২০১১ সালে বার্সেলোনার হয়ে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন গার্দিওলা। কিন্তু এরপর বায়ার্ন মিউনিখ আর ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে লিগ শিরোপা বিস্তর জিতলেও ইউরোপ–সেরার খেতাবটা অধরাই থেকে গেছে তাঁর। বায়ার্ন আর সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার এমন সব অদ্ভুত ইতিহাস তাঁর ক্যারিয়ারে জমা হয়েছে যে ইংলিশ গণমাধ্যম তো গার্দিওলাকে রীতিমতো ‘কুফা’ হিসেবে বিশ্বাস করা শুরু করেছে। তারা বলছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে গত ১০ বছরে গার্দিওলার দলের বাদ পড়ার ইতিহাসগুলো দেখলে বিশ্বাস জন্মে যায়, ইউরোপ–সেরার এই প্রতিযোগিতায় গার্দিওলা নিজেই বড় অভিশাপ কি না!
রিয়ালের বিপক্ষে কালকের সেমিফাইনালটা নিয়ে আর কীই–বা বলবেন গার্দিওলা। একটা দল ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১–০ গোলে এগিয়ে। প্রতিপক্ষ খুবই বাজে খেলছে। এতটাই বির্বিষ যে খুব আশাবাদীর পক্ষেও মনে বিশ্বাস আনা কঠিন যে ওই বাজে খেলা প্রতিপক্ষই ম্যাচটা জিতবে, তা–ও আবার ৩–১ গোলে! প্রথমে রদ্রিগোর জোড়া গোল (৯০ আর ৯১ মিনিটে) এরপর করিম বেনজেমার পেনাল্টি থেকে গোল। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে চেয়ে চেয়ে কেবল দেখলেনই গার্দিওলা। এমন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটলে তাঁরই–বা কী করার থাকতে পারে!
ম্যাচনচেস্টার সিটির হয়ে গত ছয় বছরে সিটির কোচ হিসেবে ২.৩ বিলিয়ান মার্কিন ডলার খরচ করিয়েছেন। প্রতিটি জায়গায় তিনি খেলোয়াড় নিয়েছেন নিজে পছন্দ করে। ইংলিশ ঘরোয়া ফুটবলে জিতেছেন প্রায় সব শিরোপাই। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ? গত মৌসুমে ফাইনালে উঠেও চেলসির কাছে ১–০ গোলে হার; এবার সেমিফাইনালে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও বিদায় নিতে হলো রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। এসব শোক বুকে নিয়ে বেড়ানোটাও তো কষ্টকর। গার্দিওলাকে তো করতে হবে সেটিই।
দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রধান ক্রীড়া লেখক অলিভার ব্রাউন নিজের কলামে লিখেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের কাছে আত্মসমর্পণের এই রাতটা পেপ গার্দিওলাকে আজীবন তাড়া করে বেড়াবে। রাতটা বারবার ফিরে আসবে তাঁর জীবনে।’
তাঁর কলামে গার্দিওলার প্রতি খোঁচাও আছে, ‘তাঁকে আপনি বছরে ১৯ মিলিয়ন ডলার বেতন দিচ্ছেন। তাঁর দলের প্রতিটি পজিশনেই দুর্দান্ত সব তারকা আছে। কিন্তু আপনি কখনোই তাঁর দুই মিনিটে দুই গোল খেয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার ব্যথাটা কমাতে পারবেন না।’
রিয়ালের কাছ এমন হার দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় গার্দিওলার জন্য মানসিক ভীতিও তৈরি করবে বলে মনে করেন ব্রাউন। তাঁর শঙ্কা, বারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাজেভাবে বিদায়ের পর গার্দিওলাই হয়তো নিজেকে ‘অভিশপ্ত’ ভাবা শুরু করতে পারেন।
বায়ার্নের কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে তিনবার বিদায় নিয়েছিলেন। গত মৌসুমে চেলসির বিপক্ষে ফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন গার্দিওলা হয়তো চ্যাম্পিয়নস লিগ–খরা কাটাতে পারবেন। কিন্তু ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি হেরে গেল ১–০ গোলে। সে ম্যাচে দল নির্বাচনে তাঁর কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। সিটির মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে যতটা কথা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কথা হয়েছে গার্দিওলার দল নির্বাচন নিয়ে। অথচ গত মৌসুমে ১৯ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল।
ডেইলি মেইল লিখছে, গার্দিওলার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়াগুলো কেবল ব্যর্থতা নয়, একের পর এক বড় বিপর্যয়।’
মেইলের লেখায় বলা হয়েছে, ইউরোপের সেরা ক্লাবের সারিতে নিজেদের দেখতে চাওয়া ম্যানচেস্টার সিটির জন্য সবচেয়ে কঠিন সত্যটি হলো, দলটা গার্দিওলার অধীন চ্যাম্পিয়নস লিগে কেবল খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
টকস্পোর্টসের উপস্থাপক চেলসির সাবেক ডিফেন্ডার জেসন কান্ডিও ম্যানচেস্টার সিটির এই অসহায় আত্মসমর্পণে হতবাক, ‘সিটি এটা কী করল! আমি এর আগে কোনো দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ দেখিনি। সিটি–সমর্থকদের জন্য খুব কঠিন একটা ব্যাপার এটি।’